রবিবার 21 জুমাদাল ছানী 1446 - 22 ডিসেম্বর 2024
বাংলা

নামাযে কিবলা থেকে দৃষ্টি ফেরানোর প্রকারসমূহ

প্রশ্ন

আমি জানতে চাই— নামাযে কিবলা থেকে দৃষ্টি ফেরানো কি বিদাত; নাকি এটা নামাযকে বাতিল করে দেয়।

আলহামদু লিল্লাহ।.

নামাযে কিবলা থেকে মুখ ফেরানো কয়েক প্রকার:

১- বুক দিয়ে ফিরে তাকানো। তথা মুসল্লী তার বুককে কিবলার দিকে ফিরিয়ে ফেলা। এভাবে ফিরলে নামায বাতিল হয়ে যাবে। কারণ কিবলামুখী থাকা নামায বিশুদ্ধ হওয়ার অন্যতম একটি শর্ত।

আরো জানতে দেখুন (65853 ) নং প্রশ্নের উত্তর।

২- মাথা বা চোখ দিয়ে ফিরে তাকানো; তবে শরীরকে কিবলামুখী রেখে। এভাবে তাকানো মাকরূহ। তবে যদি কোনো মুসলিম প্রয়োজনে এমনটা করে, তাহলে বৈধ। প্রয়োজন ছাড়া করলে নামাযের নেকী কমে যাবে। তবে নামায সঠিক হবে; বাতিল হয়ে যাবে না।

আল-মাউসুয়াতুল ফিকহিয়্যা (২৭/১০৯)-তে এসেছে: “নামাযে ভিন্ন দিকে তাকানো মাকরূহ হওয়ার ব্যাপারে ফকীহদের মাঝে কোনো মতভেদ নেই। কারণ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন: আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নামাযে ভিন্ন দিকে তাকানোর ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন: “এটা এক ধরনের ছিনতাই, যার মাধ্যমে শয়তান বান্দার নামায থেকে অংশ বিশেষ ছিনিয়ে নেয়।”[বুখারী (৭৫১)] অপছন্দনীয় তথা মাকরূহ হওয়ার বিষয়টি প্রয়োজন কিংবা ওজর না থাকার সাথে সম্পৃক্ত। কিন্তু যদি প্রয়োজন থাকে; যেমন: নিজের জীবন বা সম্পদের ব্যাপারে শঙ্কিত থাকলে মাকরূহ হবে না।”[সমাপ্ত]

‘ফাতাওয়াল-লাজনা আদ-দাইমাহ’ (৭/২৭)-তে এসেছে: “নামাযে এদিক-ওদিক তাকানো মাকরূহ। এটি নামাযের নেকী কমিয়ে দেয়। তবে কেউ যদি নামাযে এদিক-সেদিক তাকায় তাহলে তার জন্য নামায পুনরায় পড়া আবশ্যক নয়। কারণ অন্যান্য হাদীসে প্রমাণিত হয়েছে যে প্রয়োজন পড়লে এদিক-ওদিক দৃষ্টিপাত করা বৈধ। সুতরাং জানা গেল যে এতে করে নামায বাতিল হবে না।”[সমাপ্ত]

অনেক হাদীসে প্রয়োজন থাকলে নামাযে এদিক-ওদিক তাকানোর বৈধতার কথা বলা হয়েছে। তন্মধ্যে একটা হল মুসলিমে বর্ণিত (৪৩১) হাদীস, জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস্থ হওয়ার পর আমরা তার পেছনে নামায পড়লাম। তিনি তখন বসে নামায পড়ছিলেন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু লোকদেরকে তার তাকবীর জোরে শুনিয়ে দিচ্ছিলেন। তিনি আমাদের দিকে তাকিয়ে আমাদেরকে দাঁড়ানো অবস্থায় দেখতে পেলেন। তখন তিনি আমাদেরকে ইশারা করলে আমরা বসে গেলাম। আমরাও তার সাথে বসে নামায পড়লাম।”

আবু দাউদ (৯১৬) বর্ণনা করেন, সাহল ইবনুল হানযালিয়্যা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: “একবার ফজরের নামাযের ইকামত দেওয়া হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায পড়া শুরু করলেন। নামাযরত অবস্থায় তিনি গিরিপথের দিকে তাকিয়ে ছিলেন।” আবু দাউদ বলেন: “তিনি গিরিপথ পাহারা দেওয়ার জন্য রাতে এক অশ্বারোহীকে সেখানে পাঠিয়েছিলেন।” [শাইখ আলবানী হাদীসটিকে ‘সহীহ আবু দাউদ’ বইয়ে সহীহ বলেছেন]

শাইখ ইবনে বায রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “ওয়াসওয়াসার কারণে বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় লাভের জন্য নামাযে কোনো দিকে ফিরে তাকাতে সমস্যা নেই। বরং খুব প্রয়োজন হলে শুধু মাথা দিয়ে ফিরে তাকানো মুস্তাহাব।”[সমাপ্ত][মাজমু ফাতাওয়া ইবনে বায (১১/১৩০)]

৩- তৃতীয় আরেক প্রকার তাকানো আছে; সেটা হল নামাযে অন্তর দিয়ে কোন কিছু চিন্তা করায় ব্যস্ত হয়ে পড়া; নামাযে মনোযোগ না দেওয়া।

শাইখ ইবনে উছাইমীন রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “জেনে রাখুন, ফিরে তাকানো দুই ধরনের:

১- ইন্দ্রিয়গত দৃষ্টি ফিরানো। এটা হলো মাথা ফিরানো।

২- অন্তর্দৃষ্টি ফিরানো। এটা হল মনের ভেতর আসা নানান ভাবনা ও সংশয়ে ডুবে যাওয়া। এটা থেকে কেউ বাঁচতে পারে না। এর নিরাময় কী যে কঠিন! খুব কম মানুষই এর থেকে নিরাপদ! এটা নামাযের সওয়াব হ্রাস করে। হায়! এটা যদি আংশিক হত! কিন্তু এটা নামাযের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চলতে থাকে। এটাকে এক ধরনের ছিনতাই বলা সাজে। শয়তান বান্দার নামাযের কিছু ছিনতাই করে নিয়ে যায়।”[সমাপ্ত][আশ-শারহুল মুমতি (৩/৭০)]

আল্লাহ সর্বজ্ঞ।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব