শনিবার 18 শাওয়াল 1445 - 27 এপ্রিল 2024
বাংলা

পড়ালেখার জন্য প্রদত্ত কর্জের হুকুম

প্রশ্ন

আমি একজন মুসলিম ছাত্র। নরওয়েতে বসবাস করি। সেখানে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে পড়ালেখার জন্য বিনা সুদে একটা কর্জ দেয়। এই কর্জ ছাত্রদেরকে প্রদান করা হয়। ছাত্ররা অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে এই কর্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বৃত্তি বা ভাতাতে পরিণত হয়। আর যদি তারা উত্তীর্ণ না হয়, তাহলে বার্ষিক পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত এটা সুদ-বিহীন কর্জ হিসেবে থাকে। যদি ছাত্র পড়ালেখা ছেড়ে দেয় অথবা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে ফেলে অথবা কর্জটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাতায় রূপ না নেয় তাহলে সেটা ঋণ হিসেবে থেকে যায়। এই তিন অবস্থায় কর্জ পরিশোধের সময় এর সাথে সুদ দিতে হয়। আমার প্রশ্ন হল: আমার জন্য এই কর্জ থেকে উপকৃত হওয়া কি জায়েয হবে? এটা কি হালাল? আমি এ বছর পড়ালেখা শেষ করব। আল্লাহর অনুগ্রহে আমি কোনো বছরে অনুত্তীর্ণ হইনি। ভবিষ্যতেও ইনশা আল্লাহ সেটা হবে না। তাই আমি যদি এই কর্জ নিই সেটা ইনশা আল্লাহ বৃত্তিতে পরিণত হবে। আর যদি কোনো পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হই অথবা পড়ালেখা ছেড়ে দিই তদুপরি আমার হাতে তৎক্ষণাৎ এই কর্জ পরিশোধ করার মত সম্পদ আছে। আমার এই কর্জের দরকার নেই। কিন্তু যেহেতু পরীক্ষার পর এটা বৃত্তিতে রূপ নিবে তাই আমি এটা নিতে চাইছি। এ ব্যাপারে শরয়ী বিধান কী?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

পড়ালেখার জন্য প্রদত্ত কর্জের তিন অবস্থার যে কোনো একটি অবস্থা প্রযোজ্য হবে:

প্রথম অবস্থা: কর্জটা সুদভিত্তিক নয়। অর্থাৎ ছাত্র যা নিয়েছে সেটাই ফিরিয়ে দিবে; কোনো অতিরিক্ত পরিমাণ ছাড়া। এই অবস্থায় কর্জ নেওয়া জায়েয। এতে কোনো সমস্যা নেই।

দ্বিতীয় অবস্থা: কর্জটা সুদভিত্তিক। অর্থাৎ ছাত্রকে কর্জ পরিশোধ করতে হলে অতিরিক্ত কিছুসহ করতে হবে। এমতাবস্থায় ঐ ঋণ নেওয়া জায়েয নেই; কারণ সেটা সুদ।

তৃতীয় অবস্থা: কর্জটা মৌলিকভাবে সুদ না। কিন্তু কর্জের কিছু চিত্রে সুদের শর্ত বিদ্যমান। যেমন: ছাত্রকে বলা হল এই কর্জ যেমন নিয়েছ তেমনই ফেরত দিতে হবে। অথবা কর্জটা তোমার জন্য বৃত্তি হয়ে যাবে যদি তুমি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হও। কিন্তু যদি পড়ালেখা ছেড়ে দাও অথবা অনুত্তীর্ণ হও অথবা নির্ধারিত সময়ে পরিশোধ করতে দেরী করো তাহলে অতিরিক্ত অংশসহ কর্জ পরিশোধ করতে হবে। এই অবস্থায়ও কর্জ গ্রহণ করা জায়েয হবে না। এমনকি যদি কর্জগ্রহীতা উত্তীর্ণ হওয়ার ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাসী থাকে কিংবা সুদ প্রদান থেকে নিরাপদ থাকে। কারণ এই চুক্তিতে সুদী শর্তের স্বীকারোক্তি রয়েছে। এর সাথে বাস্তবে এমনটি ঘটার সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে যদি এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয় যে সে উত্তীর্ণ না হলো কিংবা পড়ালেখা শেষ করতে না পারল।

সুতরাং আপনার জন্য এই কর্জ নেওয়া জায়েয নেই। কারণ এতে সুদের শর্ত আছে। আর আপনি উল্লেখ করেছেন যে উক্ত কর্জের প্রতি আপনি মুখাপেক্ষী নন। এমন অবস্থায় কর্জ না নেওয়া আপনার জন্য আবশ্যক হবে।

আল্লাহই সর্বজ্ঞ।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব