বৃহস্পতিবার 13 জুমাদাল আউওয়াল 1446 - 14 নভেম্বর 2024
বাংলা

সুনির্দিষ্ট নফল রোজার নিয়ত রাত থেকে করা শর্ত

প্রশ্ন

সুনির্দিষ্ট নফল রোজার নিয়ত কখন থেকে শুরু করতে হবে? সাধারণ নফল রোজা নয়।

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

সাধারণ নফল রোজার নিয়ত রাত থেকে করা শর্ত নয়; বরং দিনের যে কোন সময়ে কেউ যদি নিয়ত করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজা পূর্ণ করে সেটা জায়েয হবে। তবে শর্ত হচ্ছে ফজর শুরু হওয়ার পর থেকে রোজা ভঙ্গকারী কোন কিছুতে লিপ্ত না হওয়া।

আর সুনির্দিষ্ট নফল রোজার নিয়ত রাত থেকে (ফজরের পূর্ব) করা শর্ত।

শাইখ উছাইমীনকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল:

শাওয়াল মাসের ছয় রোজা ও আরাফার দিনের রোজার হুকুম কি ফরজ রোজার মত অর্থাৎ এ রোজাগুলোর জন্য কি রাত থেকে নিয়ত করা শর্ত? নাকি এ রোজাগুলোর হুকুম নফল রোজার হুকুমের মত যে কোন লোকের জন্য দিনের মধ্যভাগ থেকেও রোজার নিয়ত করা জায়েয? যে ব্যক্তি দিনের মধ্যভাগ থেকে রোজা রাখার নিয়ত করেছে সে কি ঐ ব্যক্তির সমপরিমাণ সওয়াব পাবে যে ব্যক্তি সেহেরী খেয়ে দিনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রোজা পালন করেছে।

উত্তরে তিনি বলেন:

হ্যাঁ; নফল রোজার ক্ষেত্রে দিনের বেলায় নিয়ত করলেও জায়েয হবে। এ ক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে- নিয়ত করার আগে রোজা ভঙ্গকারী কোন কিছুতে লিপ্ত হতে পারবে না। যেমন- কোন লোক যদি ফজরের পর খাওয়াদাওয়া করে ফেলে এরপর দিনের বেলায় রোজা রাখার নিয়ত করে তাকে আমরা বলব: আপনার রোজা শুদ্ধ নয়। কারণ তিনি আহার করেছেন। তবে তিনি যদি ফজর থেকে না খেয়ে থাকেন এবং অন্য কোন রোজা ভঙ্গকারী বিষয়ে লিপ্ত না হন এরপর দিনের বেলায় রোজা রাখার নিয়ত করেন এবং সে রোজাটি নফল রোজা হয় তাহলে আমরা বলব: এটি জায়েয। কারণ এ ধরণের রোজার অনুমোদন হাদিসে এসেছে। তবে তিনি যখন থেকে নিয়ত করেছেন তখন থেকে সওয়াব পাবেন। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “আমল নিয়ত অনুযায়ী হয়ে থাকে”। সুতরাং নিয়তের আগে যে আমল এর সওয়াব লেখা হবে না। আর নিয়তের পরের আমলের সওয়াব লেখা হবে।

সওয়াবের প্রতিশ্রুতি যদি গোটা একদিন রোজা রাখার উপর দেয়া হয়ে থাকে তাহলে এ ব্যক্তি গোটা একদিন রোজা রাখেনি; বরং দিনের কিছু অংশ রোজা রেখেছে। এর ভিত্তিতে বলা যায়: কেউ যদি ফজরের পর থেকে কোন কিছু না খায় এবং দিনের মধ্যভাগে এসে রোজা রাখার নিয়ত করে এবং সে দিনটি যদি শাওয়ালের ছয় রোজার কোন একটি দিন হয় এরপর সে ব্যক্তি আরও পাঁচদিন রোজা রাখে এতে করে সে সাড়ে পাঁচদিন রোজা রাখল। যদি সে ব্যক্তি দিনের এক চতুর্থাংশ অতিবাহিত হওয়ার পর রোজা রাখে তাহলে সে পৌনে ছয়দিন রোজা রাখল। কারণ আমলের হিসাব হবে নিয়ত অনুযায়ী। হাদিসে এসেছে- “যে ব্যক্তি রমজান মাস রোজা রাখল এরপর শাওয়াল মাসের আরও ছয়দিন রোজা রাখল...”।

অতএব আমরা এ ভাইকে বলব যে, আপনি ছয়দিন রোজা রাখার সওয়াব পাবেন না। কারণ আপনি তো পরিপূর্ণ ছয়দিন রোজা রাখেননি। একই রকম কথা বলা হবে: আরাফার দিনের রোজার ব্যাপারে। পক্ষান্তরে রোজাটি যদি সাধারণ নফল রোজা হয় তাহলে রোজাটি শুদ্ধ হবে এবং নিয়ত করার সময় থেকে রোজাদার ব্যক্তি সওয়াব পাবেন।[লিকাউল বাব আল-মাফতুহ (২১/৫৫) থেকে সমাপ্ত]

অনুরূপভাবে যদি বিশেষ কোনদিন রোজা রাখার ভিত্তিতে সওয়াব দেওয়ার বর্ণনা আসে যেমন- সোমবার ও বৃহষ্পতিবারের রোজা, চন্দ্রমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোজা, প্রতিমাসে তিনদিন রোজা রাখা। এখন কেউ যদি দিনের মাঝখান থেকে রোজা রাখার নিয়ত করে তাহলে সে ব্যক্তি গোটা দিনের রোজা রাখার সওয়াব পাবে না।

উদাহরণত: কেউ সোমবারে রোজা রাখল, নিয়ত করল দিনের মাঝখান থেকে। সে ব্যক্তি ঐ ব্যক্তির সমপরিমাণ সওয়াব পাবে না যে ব্যক্তি সোমবারের শুরু থেকে রোজা রেখেছে। কারণ সে ব্যক্তি গোটা সোমবার রোজা রেখেছেন এ কথা তো বলা চলে না।

অনুরূপভাবে কেউ যদি বে-রোজদার হিসেবে ভোর করে এরপর তাকে বলা হয় যে, আজ তো মাসের ১৩ তারিখ; এ কথা শুনে সে ব্যক্তি বলে তাহলে আমি রোজা রাখলাম; সে ব্যক্তি পূর্ণিমার দিনগুলোতে রোজা রাখার সওয়াব পাবে না। কারণ সে তো গোটা দিন রোজা রাখেনি।[আল-শারহুল মুমতি (৬/৩৬০) থেকে সমাপ্ত]

আরও জানতে 21819 নং প্রশ্নোত্তর দেখুন।

আল্লাহই ভাল জানেন।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব