আলহামদু লিল্লাহ।.
এক:
রোযাদারের জন্য স্ত্রীকে চুমু দেওয়ার হুকুম
হ্যাঁ, রোযাদারের জন্য রমযান মাসে দিনের বেলা স্ত্রীকে চুমু দেওয়া বৈধ। দুজনে একে অপরকে উপভোগ করতে পারবে যদি বিষয়টা সহবাস বা বীর্যপাতে রূপ না নেয়।
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোযা অবস্থায় চুমু দিতেন এবং গায়ের সাথে গা লাগাতেন। কিন্তু তিনি তাঁর যৌন চাহিদা নিয়ন্ত্রণে তোমাদের চেয়ে বেশি সক্ষম ছিলেন।” [বুখারী (১৯২৭), মুসলিম (১১০৬)]
নববী বলেন: “এখানে গা লাগানো বলতে উদ্দেশ্য হাত দিয়ে ছোঁয়া। শব্দটা এসেছে চামড়ার সাথে চামড়ার স্পর্শকরণ থেকে।”[সমাপ্ত]
“কিন্তু তিনি তার যৌন চাহিদা নিয়ন্ত্রণে তোমাদের চেয়ে বেশি সক্ষম ছিলেন” এই কথা দ্বারা উদ্দেশ্য হল তিনি নিজেকে এবং নিজ যৌন চাহিদা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারতেন। তিনি উপভোগ করতেন; কিন্তু সেটা সহবাস বা বীর্যপাতের পর্যায়ে পৌঁছত না।
কিন্তু ... যদি কোন পুরুষ আশঙ্কা করে যে রোযাদার অবস্থায় স্ত্রীকে চুমু দিলে বা উপভোগ করলে বিষয়টা সহবাস বা বীর্যপাত পর্যন্ত গড়াতে পারে তাহলে এমন উপভোগ থেকে তার বিরত থাকা বাঞ্চনীয়; যেন তার রোযা নষ্ট না হয়।
শাইখ ইবনে উছাইমীন রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “রোযাদারের চুম্বন দুই ভাগে বিভক্ত: বৈধ চুম্বন ও হারাম চুম্বন। হারাম চুম্বন হল এমন চুম্বন যেটার কারণে রোযা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা মুক্ত নয়।
আর বৈধ চুম্বন দুই ধরনের:
প্রথম ধরন: এমন চুম্বন যা তার যৌন আকাঙ্ক্ষাকে মোটেই জাগিয়ে তুলবে না।
দ্বিতীয় ধরন: এমন চুম্বন যা তার যৌন আকাঙ্ক্ষাকে জাগিয়ে তুললেও রোযা নষ্ট হবে না সে বিষয়ে ব্যক্তি নিরাপদ থাকে।
চুম্বন ছাড়া কামোদ্দীপক যে বিষয়গুলো করা হয়, যেমন: আলিঙ্গন বা অন্যান্য, সেগুলোর হুকুম চুম্বনের মতই। এগুলোর মাঝে কোনো পার্থক্য নেই।”[আশ-শারহুল মুমতি‘ (৬/৪২৯)]
শাইখ আব্দুল আযীয ইবনে বায রাহিমাহুল্লাহকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: “পুরুষ যদি রমযান মাসে দিনের বেলা স্ত্রীকে চুম্বন করে বা তাকে আদর-সোহাগ করে, তাহলে কি তার রোযা নষ্ট হবে; নাকি হবে না?”
তিনি উত্তর দেন: “একজন পুরুষের জন্য রোযা অবস্থায় স্ত্রীকে চুম্বন করা, আদর-সোহাগ করা, সহবাস ছাড়া স্পর্শ করা— এ সব কিছুই বৈধ। এগুলোতে কোনো সমস্যা নেই। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোযা অবস্থায় চুম্বন করতেন, রোযা অবস্থায় স্পর্শ করতেন। কিন্তু কেউ যদি হারামে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করে, যেহেতু সে দ্রুত উত্তেজনাশীল তাহলে তার জন্য চুম্বন করা মাকরুহ। আর যদি সে বীর্যপাত করে ফেলে তাহলে তার জন্য আবশ্যক হল (রোযা ভঙ্গকারী সবকিছু থেকে) বিরত থাকা অব্যাহত রাখা এবং ঐ দিনের রোযাটি পরে কাযা করা। তবে এর জন্য তাকে কাফ্ফারা দিতে হবে না। এটা অধিকাংশ আলেমের মত।”[ফাতাওয়াশ শাইখ ইবনে বায: (১৫/৩১৫) থেকে সমাপ্ত]
দুই:
রোযাদার স্ত্রীকে চুম্বন করার ফলে যদি বীর্যপাত হয়
রোযা অবস্থায় ব্যক্তি যদি তার স্ত্রীকে চুমু দেয় এবং বীর্যপাত হয় তাহলে তার রোযা নষ্ট হয়ে যাবে। এর বদলে রমযানের পরে তাকে একদিন কাযা রোযা রাখতে হবে। ইবনে কুদামা রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “রোযাদার যদি চুম্বন করে বীর্যপাত ঘটায় তাহলে তার রোযা ভেঙে যাবে। এতে কোনো মতভেদ আমাদের জানা নেই।”[আল-মুগনী (৪/৩৬১)]
তবে তার উপর কোনো কাফ্ফারা আবশ্যক হবে না। কারণ কেবল সহবাসের মাধ্যমে রোযা নষ্ট করলেই শুধু কাফ্ফারা আবশ্যক হয়। দেখুন: (49750)-নং ফতোয়া।
আল্লাহই সর্বজ্ঞ।