আলহামদু লিল্লাহ।.
আলেমগণ সকলে এই মর্মে একমত যে, যদি কফ ও শ্লেষ্মা রোযাদারের পেটের ভেতরে চলে যায়, রোযাদার এটাকে ফেলে দিতে না পারে এক্ষেত্রে তার রোযা নষ্ট হবে না। কারণ এটি রোযাদারের অনিচ্ছা সত্ত্বেও ভেতরে ঢুকে গেছে।
শাইখ যাকারিয়া আল-আনসারী আল-শাফেয়ি (রহঃ) বলেন:
“যদি শ্লেষ্মা মুখ থেকে কিংবা নাক থেকে নিজেই রোযাদারের পেটে চলে যায়, রোযাদার সেটা ফেলে দিতে না পারে সেক্ষেত্রে ওজরের কারণে সে ব্যক্তির রোযা ভাঙ্গবে না।”[‘আসনাল মাতালিব’ (১/৪১৫) থেকে সমাপ্ত]
আর যদি রোযাদার ফেলে দিতে সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও গিলে ফেলে তবে কিছু কিছু আলেমের মতে, যেমন ইমাম শাফেয়ির মতে রোযা ভেঙ্গে যাবে। আর ইমাম আবু হানিফা, মালেক ও (এক বর্ণনা অনুযায়ী) ইমাম আহমাদ এর মতানুযায়ী রোযা ভাঙ্গবে না। শাইখ উছাইমীন (রহঃ) এ অভিমতকে প্রাধান্য দিয়েছেন।[দেখুন: ‘আল-মাওসুআ আল-ফিকহিয়্যা’ (৩৬/২৫৯-২৬১)]
ইবনে নুজাইম আল-হানাফি (রহঃ) বলেন:
“যদি শ্লেষ্মা রোযাদারের মাথা থেকে নাকে প্রবেশ করে, এরপর রোযাদার ইচ্ছাকৃতভাবে সেটাকে নাক দিয়ে টেনে নেয় এবং সেটা গলার ভেতরে চলে যায় সেক্ষেত্রে তার উপর কোন কিছু বর্তাবে না। কেননা শ্লেষ্মা থুথুর পর্যায়ভুক্ত...”[‘আল-বাহরুর রায়েক শারহু কানযিদ দাক্বায়িক’ (২/২৯৪) থেকে সমাপ্ত]
মালেকী মাযহাবের আলেম নাফরায়ি (রহঃ) বলেন:
“কফ বুক থেকে জিহ্বার মাথায় বের হয়ে আসে এবং গিলে ফেলে এতে তার উপর কাযা অপরিহার্য হবে না; এমনকি সে যদি এটা ফেলে দিতে সক্ষম হয় তবুও। একই ধরণের বিধান শ্লেষ্মার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। শ্লেষ্মা যদি জিহ্বায় চলে আসে এবং সেটাকে গিলে ফেলে এতে করে কাযা পালন করা অপরিহার্য হবে না।”[‘আল-ফাওয়াকিহ আদ-দাওয়ানি’ (১/৩০৯) থেকে সমাপ্ত]
শাইখ উছাইমীন (রহঃ) বলেন:
“যদি শ্লেষ্মা মুখে না আসে অর্থাৎ অনুভব করে যে, সেটা মস্তিষ্ক থেকে নির্গত হয়ে পেটে চলে গিয়েছে সেক্ষেত্রে এটি রোযা ভঙ্গ করবে না। কেননা এটি দেহের বর্হি অংশে পৌঁছে নাই্। মানুষের মুখ শরীরের বর্হি অংশের পর্যায়ভুক্ত। যদি মুখে পৌঁছার পর গিলে ফেলে সেক্ষেত্রে রোযা ভেঙ্গে যাবে। আর যদি মুখে না পৌঁছে তাহলে সেটা দেহের অভ্যন্তরে থাকার পর্যায়ভুক্ত। তাই রোযা ভঙ্গ করবে না।
এ মাসয়ালায় অপর একটি মত রয়েছে। সেটি হচ্ছে, যদি শ্লেষ্মা মুখে পৌঁছে এবং সেটাকে গিলে ফেলে তবুও এটা রোযা ভঙ্গ করবে না। এটাই অগ্রগণ্য অভিমত। কেননা, এটি মুখ থেকে বের হয়নি। এটাকে গিলে ফেলা পানাহার হিসেবে গণ্য হবে না।”[‘আল-শারহুল মুমতি’ (৬/৪২৪)]
সারকথা: সাইনোসাইটিসের কারণে শ্লেষ্মা, রক্ত বা এ জাতীয় যেসব প্রতিক্রিয়া ঘটে সেসবের কারণে আপনার রোযা নষ্ট হবে না। কিন্তু, আপনি যদি এগুলো বের করে ফেলে দিতে পারেন রোযা পালনের সতর্কতাস্বরূপ সেটা করা ভাল।
আমরা আল্লাহ্র কাছে দোয়া করছি তিনি যেন আপনাকে সুস্থ করে দেন ও রোগ মুক্ত করেন।
আল্লাহ্ই ভাল জানেন।