আলহামদু লিল্লাহ।.
এক:
সচ্চরিত্র কিয়ামতের দিন আমলের পাল্লায় সবচেয়ে ভারী হবে। কিয়ামতের দিন সচ্চরিত্রবান ব্যক্তির আসন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সবচেয়ে বেশি নিকটে হবে।
ইমাম তিরমিযি (২০১৮) ‘হাসান’ সনদে জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “তোমাদের মধ্যে আমার সবচেয়ে প্রিয় ও কিয়ামাতের দিন আমার সবচেয়ে কাছে আসন হবে তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সবচেয়ে উত্তম চরিত্রের অধিকারী”[আলবানী সহিহুত তিরমিযি গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]
ইমাম বুখারী (৬০৩৫) ও ইমাম মুসলিম (২৩২১) আব্দুল্লাহ্ বিন আমর (রাঃ) থেকে তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি্ ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: “তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি সর্বোত্তম যার চরিত্র সর্বোত্তম”।
ইমাম নববী (রহঃ) বলেন:
এ হাদিসে সচ্চরিত্রের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে, সচ্চরিত্রবান লোকের মর্যাদা বর্ণনা করা হয়েছে। সচ্চরিত্র আল্লাহ্র নবী ও আল্লাহ্র ওলিদের বৈশিষ্ট্য।
হাসান বসরি (রহঃ) বলেন: সচ্চরিত্রের স্বরূপ হচ্ছে– “কল্যাণ করায় এগিয়ে আসা, অনিষ্ট করা থেকে বেঁচে থাকা এবং চেহারা প্রসন্ন রাখা।”
কাযী ইয়ায বলেন: “সেটা হচ্ছে– মানুষের সাথে ভাল ব্যবহার দিয়ে মেশা, তাদের প্রতি মমতা ও দয়া অনুভব করা, তাদেরকে সহ্য করা, ক্ষমা করে দেয়া, তাদের থেকে কষ্ট পেলে সবর করা, অহমিকা ও বড়ত্ব পরিত্যাগ করা, রুক্ষ, ক্রোধপূর্ণ ও প্রতিশোধের আচরণ বর্জন করা।[সমাপ্ত]
দুই:
পিতামাতার অবাধ্য হওয়া কবিরা গুনাহ। পিতামাতার অবাধ্য সন্তান দুনিয়া ও আখেরাতে সফলকাম হয় না। মুসলিম নর-নারীর কর্তব্য হচ্ছে– পিতামাতার প্রতি পরিপূর্ণ সদাচরণ করা। সাধ্যে যা কিছু আছে তা দিয়ে তাদের সাথে ভাল ব্যবহার করার চেষ্টা করা। তাদেরকে ক্ষেপিয়ে তোলা, তাদের বিরুদ্ধাচারণ করা ও তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করা থেকে বেঁচে থাকা।
আরও দেখুন: 35533 নং প্রশ্নোত্তর।
তিন:
আখলাককে সুন্দর ও পরিশীলিত করা সম্ভব। নিম্নবর্ণিত মাধ্যমগুলো অবলম্বন করে সেটা করা যেতে পারে:
সচ্চরিত্রের মর্যাদা জানা এবং দুনিয়া ও আখেরাতে এর উত্তম প্রতিদান সম্পর্কে অবহিত হওয়া।
অসদাচরণের মন্দ দিকগুলো জানা এবং এর শাস্তি ও কুফল সম্পর্কে অবহিত হওয়া।
সলফে সালেহীন ও নেককারদের জীবনী ও ঘটনা পড়া।
রাগ থেকে দূরে থাকা, ধৈর্য অর্জন করা, তাড়াহুড়ার বদলে নিজেকে ধীরস্থিরতায় অভ্যস্ত করে তোলা।
সচ্চরিত্রবান লোকদের সাথে উঠাবসা করা এবং কু-চরিত্রের অধিকারী লোকদেরকে এড়িয়ে চলা।
সচ্চরিত্র অর্জনে আত্ম-অনুশীলন করা, এটাকে অভ্যাসে পরিণত করা, সচ্চরিত্রের ভান করা ও এক্ষেত্রে ধৈর্য ধারণ করা। কবি বলেন: “তুমি বদান্য হতে চেষ্টা কর; যাতে করে সুন্দরকে অভ্যাসে নিয়ে আসতে পার। তুমি এমন কোন বদান্য ব্যক্তি পাবে না যে নিজেকে বদান্যতায় অভ্যস্ত করেনি।
সর্বশেষ আল্লাহ্ তাআলার কাছে সচ্চরিত্র চেয়ে ও সাহায্য চেয়ে দোয়া করার মাধ্যম গ্রহণ করা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি দোয়া ছিল: “হে আল্লাহ্ আপনি আমার অবয়বকে সুন্দর করেছেন; সুতরাং আমার চরিত্রকেও সুন্দর করুন।”[মুসনাদে আহমাদ (২৪৩৯২), মুসনাদের মুহাক্কিকগণ হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন। আলবানীও ‘সহিহুল জামে’ গ্রন্থে (১৩০৭) হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন।
যদি কোন বিশেষ প্রেক্ষাপটে কোন মুসলিম দুর্ব্যবহার করে ফেলে তৎক্ষণাৎ সে এর জন্য দুঃখ প্রকাশ করে, যা নষ্ট করেছে সেটা সংশোধন করে নেয় এবং নিজের চরিত্রকে সুন্দর রাখার দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করে। কোন মুসলিম যখন তার চরিত্রকে সুন্দর করে সেটা আল্লাহ্র আদেশ পালন, তাঁর সন্তুষ্টি এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণের উদ্দেশ্যেই সুন্দর করে। এক্ষেত্রে অন্য সকল ইবাদতের যে অবস্থা এটারও সে অবস্থা। সুতরাং সে ব্যক্তি মানুষের প্রশংসা পাওয়ার জন্য তার চরিত্রকে সুন্দর করবে না। করলে তো সেটা সচ্চরিত্রের সওয়াবটাকে নষ্ট করে দিবে এবং সে ব্যক্তি লৌকিকতার শাস্তির উপযুক্ত হবে।
অন্য সকল ইবাদত পালনকালে একজন মুসলিম যেভাবে আল্লাহ্র জন্য একনিষ্ঠ থাকার চেষ্টা করে ঠিক সচ্চরিত্র রক্ষা করার ক্ষেত্রেও তিনি সে চেষ্টা করবেন। সর্বদা তার নজরে রাখবেন আল্লাহ্র নির্দেশ, হিসাব-নিকাশ, জান্নাত-জাহান্নাম এবং এটাও রাখবেন যে, মানুষ তার কোন উপকার কিংবা ক্ষতি করার সামর্থ্য রাখে না। আখেরাতকে স্মরণে রাখা একজন মুসলিমের আল্লাহ্র প্রতি একনিষ্ঠ হওয়ার সবচেয়ে বড় মাধ্যম।
চার:
পিতামাতার প্রতি সদাচারী হতে সহায়ক বিষয়গুলো হচ্ছে:
পিতামাতার অধিকার ও তাদের মর্যাদা সম্পর্কে অবহিত হওয়া এবং তারা কিভাবে সন্তানদের জন্য স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন নিশ্চিত করতে গিয়ে সকল প্রকার কষ্ট-ক্লেশ সহ্য করে গেছেন সেটা অবগত হওয়া।
পিতামাতার প্রতি সদ্ব্যবহারে উদ্বুদ্ধকারী শরয়ি দলিলগুলো জানা, আবার পিতামাতার অবাধ্য হওয়া থেকে ভীতি প্রদর্শনকারী শরয়ি দলিলগুলোও জানা। এবং দুনিয়া ও আখেরাতে এ সদ্ব্যবহারের পুরস্কার সম্পর্কে অবহিত হওয়া।
পিতামাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করা নিজের সন্তানদের থেকে সদ্ব্যবহার পাওয়ার অন্যতম মাধ্যম। আর পিতামাতার প্রতি দুর্ব্যবহার করা নিজের সন্তানদের থেকে দুর্ব্যবহার পাওয়ার অন্যতম কারণ।
সলফে সালেহীনদের জীবনী অধ্যয়ন করা এবং তারা কিভাবে তাদের পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার করতেন তা অবহিত হওয়া।
যেসব বই-পুস্তকে পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করা ও দুর্ব্যবহার করা সম্পর্কে আলোচনা রয়েছে সেগুলো অধ্যয়ন করা। অনুরূপভাবে এ বিষয়ক ইসলামী আলোচনাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনা।
উপহার দেয়া, সুন্দর কথা বলা, হাসি খুশি চেহারা, অধিক দোয়া করা, সুন্দর প্রশংসা করা ইত্যাদি সদ্বব্যবহার অর্জনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে উত্তম সহায়ক।
আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।