বৃহস্পতিবার 16 শাওয়াল 1445 - 25 এপ্রিল 2024
বাংলা

মুদ্রার দাম কমে গেলে মোহরানার বাকী রাখা অর্থ পরিশোধ করার পদ্ধতি কি হবে?

প্রশ্ন

যে নারীর স্বামী মারা গেছেন তার মোহরানার বাকী অর্থ হিসাব করার পদ্ধতি দয়া করে অবহিত করবেন। ১৯৫০ সালে মোহরানার ৬০০ ইরাকী দিনার বাকী রাখা হয়েছিল। আপনাদের জানা রয়েছে যে, ইরাকী মুদ্রার মূল্যে পরিবর্তন এসেছে এবং বর্তমানে মূল্য একেবারে পড়ে গেছে। তাই স্ত্রী তার মোহরানা স্বর্ণের দরে হিসাব করার জন্য পীড়াপীড়ি করছেন। উল্লেখ্য, সে সময় এক মিছকাল স্বর্ণের দাম ছিল ২ দিনার। এক মিছকালে ৫ গ্রাম। অর্থাৎ তিনি বর্তমান দরে দেড় কিলোগ্রাম স্বর্ণ দাবী করছেন। যা দিতে গেলে মৃতব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে তার পাঁচ সন্তান বঞ্চিত হয়। আশা করি আমাদেরকে জানাবেন যে, এটি কি শরিয়ত অনুযায়ী জায়েয? বাকী থাকা মোহরানার অর্থ হিসাব করার পদ্ধতি কি?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

মোহরানার বকেয়া অন্য সব ঋণের মত। মূল বিধান হলো যেই মুদ্রাতে পরিশোধ করার চুক্তি হয়েছে সেই মুদ্রাতে পরিশোধ করা হবে; এক্ষেত্রে মুদ্রার দর বৃদ্ধি বা কমতির দিকে ভ্রুক্ষেপ করা হবে না। যেহেতু বর্তমানে মুদ্রাটি সচল আছে; অচল নয়।

এটি জমহুর আলেমদের অভিমত।

আর কিছু আলেমের মতে যদি মুদ্রার দাম এত বেশি কমে যায় যে, এক তৃতীয়াংশে পৌঁছে যায় সেক্ষেত্রে ঋণের দায় অর্পিত হওয়ার সময় যে মূল্য ছিল সেটা দিয়ে ঋণ পরিশোধ করতে হবে। এখানে সে সময়টি হচ্ছে বিয়ের আকদের সময়।

আর কিছু কিছু আলেম এক্ষেত্রে সমঝোতা করা ওয়াজিব মর্মে মত প্রকাশ করেছেন।

ইতিপূর্বে 220839 নং প্রশ্নোত্তরে প্রত্যেক অভিমত দলিলসহ পর্যালোচনা করা হয়েছে এবং আমরা উল্লেখ করেছি যে, এ অভিমতগুলোর মধ্যে সর্বাধিক অগ্রগণ্য মত হচ্ছে যদি মুদ্রার দাম এক তৃতীয়াংশের পর্যায়ে পরিবর্তিত হয় তাহলে মুদ্রার মূল্য পরিশোধ করা কিংবা উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতা করা ওয়াজিব।

‘জেদ্দাস্থ ইসলামী ফিকাহ একাডেমী’ কর্তৃক বাহরাইনের ফয়সাল ইসলামী ব্যাংকের সহযোগিতায় ‘মুদ্রাস্ফীতি সংক্রান্ত ইস্যুগুলো গবেষণা করার জন্য অনুষ্ঠিত ‘ফিকহী ইকোনমিক সিম্পোজিয়াম’ এর উপদেশাবলীর মধ্যে এসেছে:

“যদি লেনদেনের চুক্তি করার সময় মুদ্রাস্ফীতি ঘটার সম্ভাবনা না থাকে; কিন্তু মুদ্রাস্ফীতি ঘটে যায়; সেক্ষেত্রে পরিশোধকালে হয়তো মুদ্রাস্ফীতির ব্যবধান অনেক বেশি হবে কিংবা সামান্য হবে। মুদ্রাস্ফীতি বিলম্বিত ঋণের এক তৃতীয়াংশে পৌঁছে গেলে সেটাই বেশি মূদ্রাস্ফীতি:

১। যদি মুদ্রাস্ফীতি সামান্য হয় তাহলে সেটা বিলম্বিত ঋণে পরিবর্তন আনার জন্য কোন নিয়ামক হিসেবে বিবেচিত হবে না। কেননা ঋণ পরিশোধের মূল বিধান হচ্ছে সম ধরণের জিনিসের মাধ্যমে ঋণ পরিশোধ করা। শরয়ি আইনে এ রকম সামান্য অজ্ঞতা, সামান্য ধোকা ও সামান্য ঠকার বিষয় ক্ষমার্হ।

২। যদি মুদ্রাস্ফীতি বেশি হয় সেক্ষেত্রে বিলম্বে পরিশোধযোগ্য ঋণ বাহ্যতঃ সম ধরণের জিনিসের মাধ্যমে পরিশোধ করলে ঋণদাতা বড় ধরণের ক্ষতিগ্রস্ত হয়; যা দূর করা আবশ্যকীয় এই কায়েদার ভিত্তিতে: “ক্ষতি দূর করতে হবে”।

এর প্রতিকার হচ্ছে সমঝোতার শরণাপন্ন হওয়া। মুদ্রাস্ফীতির মাধ্যমে উদ্ভূত ব্যবধানকে উভয় পক্ষের মাঝে একটা আনুপাতিক হারে ভাগ করে নেয়া যে অনুপাতে উভয় পক্ষ সম্মত হবে।”[ইসলামী ফিকাহ একাডেমীর ম্যাগাজিন (১২/৪/২৮৬) থেকে সমাপ্ত]

উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে: আামাদের অভিমত হচ্ছে স্ত্রী ও তার সন্তানদের মধ্যে একটা সমঝোতা হতে পারে যাতে করে দুই পক্ষ মুদ্রার দাম কমে যাওয়ার পার্থক্যটা সন্তুষ্টির ভিত্তিতে ভাগাভাগি করে নিতে পারেন।

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব