রবিবার 23 জুমাদাল আউওয়াল 1446 - 24 নভেম্বর 2024
বাংলা

ছোট বায়েন তালাক্ব ও বড় বায়েন তালাক্বের মধ্যে পার্থক্য এবং রেজয়ী তালাকপ্রাপ্তা নারী ইদ্দত পালনকালীন সময়ে ঘর থেকে বের হওয়ার বিধান

প্রশ্ন

ছোট বায়েন তালাকপ্রাপ্তা নারী ইদ্দত পালনকালীন সময়ে তার পরিবারের বাসার বাইরে রাত্রি যাপন করা জায়েয আছে কি; যদি তার চাকুরীর কারণে তাকে একই দেশের অন্য বিভাগে কোন একটি সেমিনারে হাযির হতে হয়? এ জন্য নয় যে, সে বাসার বাইরে থাকতে চাচ্ছে?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

এক:

যদি স্বামী তার স্ত্রীকে তিন তালাক্ব দেয় তাহলে সেটাকে বলা হয় বড় বায়েন তালাক্ব। এই প্রকারের তালাক্বের পরে অন্য কোন স্বামীর সাথে বিয়ে হওয়া ছাড়া এই স্ত্রী এই স্বামীর জন্য হালাল নয়। পক্ষান্তরে, যদি তাকে প্রথম তালাক্ব দিয়ে কিংবা দ্বিতীয় তালাক্ব দিয়ে ফেলে রাখে; এক পর্যায়ে তার ইদ্দতকাল শেষ হয়ে যায় কিন্তু তাকে ফিরিয়ে না আনে তাহলে সেটাকে বলা হয় ছোট বায়েন তালাক্ব।

এর মত হলো: যদি কোন নারীকে অর্থের বিনিময়ে তালাক্ব দেয় (খুলা তালাক্ব) সেক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকভাবে এই স্ত্রী তার থেকে বায়েন তথা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে; এমনকি যদি ইদ্দতকাল শেষ না হয় তবুও।

শাইখ উছাইমীন (রহঃ) আল-শারহুল মুমতি’ গ্রন্থে (১২/৪৬৮) বলেন:

“বাইনুনা (بينونة) হচ্ছে: বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া। তালাক্বে বায়েন দুই প্রকার: বড় বায়েন তালাক্ব; সেটা হচ্ছে তিন তালাক্ব। ছোট বায়েন তালাক্ব; সেটা হচ্ছে অর্থের বিনিময়ে তালাক্ব।

যদি কোন লোক তার স্ত্রীকে পূর্বে দুইবার তালাক্ব দিয়ে থাকে এরপর তৃতীয়বার তালাক্ব দেয় আমরা বলব: এটা হচ্ছে বড় বায়েন তালাক্ব। অর্থাৎ এই স্ত্রী এই স্বামীর জন্য অন্য কোন স্বামীর পর ছাড়া হালাল হবে না।

আর যদি কোন বিনিময় নিয়ে স্ত্রীকে তালাক্ব দেয় তাহলে সেটা হল ছোট বায়েন তালাক্ব। তাহলে বায়েন মানে কী? অর্থাৎ স্বামীর জন্য স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেয়া হালাল নয়; এমনকি সে ফিরিয়ে নিতে চাইলেও....।

তিনি আল-শারহুল মুমতি গ্রন্থে (১২/১৩০) আরও বলেন:

“বায়েন তালাক্বপ্রাপ্তা নারী হচ্ছেন যে নারী অর্থের বিনিময়ে তার স্বামীর সাথে খুলা করেছেন। এটাকে ছোট বায়েন তালাক্ব বলা হয় যেহেতু স্বামীর জন্য খুলাকারী স্ত্রীকে ইদ্দত পালনকালীন সময়ে কিংবা ইদ্দত শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও বিয়ে করা জায়েয। পক্ষান্তরে, বড় বায়েন তালাক্ব হল: যা তিন তালাক্বের মাধ্যমে সংঘটিত হয়। এই আলোচনার ভিত্তিতে ইদ্দত পালনকারী নারী তিন প্রকার:

১। রেজয়ী তালাক্বপ্রাপ্তা নারী। অর্থাৎ এমন ইদ্দত পালনকারী নারী যাকে স্বামী নতুন কোন বিয়ের আকদ করা ছাড়া ফিরিয়ে নিতে পারে।

২। ছোট বায়েন তালাক্বপ্রাপ্তা নারী। অর্থাৎ এমন নারী যাকে বিয়ের আকদের মাধ্যমে স্বামী বিয়ে করতে পারে; ফিরিয়ে নেয়া নয়। অর্থাৎ স্বামী ফিরিয়ে নেয়ার অধিকার রাখে না। তবে আকদের মাধ্যমে বিয়ে করার অধিকার রাখে। সুতরাং প্রত্যেক এমন নারী যিনি নতুন বিয়ের আকদ ছাড়া স্বামীর জন্য হালাল নয় এমন নারী হচ্ছেন বায়েন তালাক্বপ্রাপ্তা নারী।

৩। বড় বায়েন তালাক্বপ্রাপ্তা নারী। অর্থাৎ এমন নারী যে নারীকে তার স্বামী তিন তালাক্বের সর্বশেষ তালাক্বটি দিয়েছে। এই নারী সুবিদিত শর্তসাপেক্ষে অন্য স্বামীর ঘর করা ছাড়া তার স্বামীর জন্য হালাল হবে না।”[সমাপ্ত]

দুই:

কোন নারী তালাক্বে রেজয়ীর ইদ্দত পালন শেষ করে ফেললে তখন এই নারীর উপর তালাক্ব প্রয়োগকারী স্বামীর আর কোন কর্তৃত্ব থাকে না। তখন এই নারী তার ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে পারেন এবং যেখানে ইচ্ছা সেখানে রাত্রি যাপন করতে পারেন।

আর যদি ইদ্দত পালনকালীন অবস্থায় থাকেন সেক্ষেত্রেও রেজয়ী তালাক্বের ইদ্দত পালনকারী নারীর জন্য ঘর থেকে বের হওয়া জায়েয আছে। সদ্য বিধবা নারীর মত বের হওয়া নিষিদ্ধ নয়। কিন্তু স্বামীর অনুমতি না নিয়ে বাসা থেকে বের হবে না। কেননা সে এখনও স্বামীর যিম্মাতে রয়েছে। সাধারণ স্ত্রীগণের জন্য ভরণপোষণ, বাসস্থান, রাত্রিযাপন ইত্যাদি যে অধিকারগুলো সাব্যস্ত তার জন্যেও এই অধিকারগুলো সাব্যস্ত এবং সাধারণ স্ত্রীগণের উপর যে দায়িত্বগুলো রয়েছে তার উপরও সে দায়িত্বগুলো রয়েছে।

আব্দুল্লাহ্‌ ইবনে উমর (রাঃ) এভাবেই ফতোয়া দিতেন যে: “যদি কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে এক তালাক্ব বা দুই তালাক্ব দেয় তাহলে সেই নারী স্বামীর অনুমতি ছাড়া ঘর থেকে বের হবে না।”[মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা (৪/১৪২)]

শাইখ উছাইমীন (রহঃ) বলেন:

“অগ্রগণ্য অভিমত হল: রেজয়ী তালাক্বপ্রাপ্তা স্ত্রীর হুকুম তালাক্ব দেয়া হয়নি এমন স্ত্রীর হুকুমের মত। সে তার প্রতিবেশীর বাসায়, আত্মীয়ের বাসায় যেতে পারবে কিংবা ওয়াজ বা অন্য কিছু শুনার জন্য মসজিদে যেতে পারবে। এমন নারীর বিধান সদ্য বিধবা নারীর মত নয়।

পক্ষান্তরে, আল্লাহ্‌ তাআলার বাণী: তাদেরকে তাদের ঘর থেকে বের করে দিবে না এবং তারা নিজেরাও যেন বের হয়ে না যায়।[সূরা আত্‌-তালাক্ব, ৬৫: ১] এখানে বের করে দেয়া দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে আলাদা করে দেয়া। অর্থাৎ ঘর ছেড়ে আলাদা ঘরে গিয়ে থাকবে না...”।[ফাতাওয়া নুরুন আলাদ দারব থেকে সমাপ্ত]

তিন:

একই দেশের অন্য কোন বিভাগে অনুষ্ঠিত সেমিনারে উপস্থিত হওয়া: এর দ্বারা যদি উদ্দেশ্য হয় যে, নারীর অবস্থানস্থল থেকে অন্যত্র সফর করা তাহলে কোন মাহরামের সঙ্গিত্ব ছাড়া সেটি নারীর জন্য বৈধ নয়।

সহিহ বুখারী (৩০০৬) ও সহিহ মুসলিমে (১৩৪১) ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: অবশ্যই অবশ্যই কোন পুরুষ কোন নারীর সাথে নিভৃতে একত্রিত হবে না। অবশ্যই অবশ্যই কোন নারী মাহরাম ছাড়া সফর করবে না। তখন এক লোক দাঁড়িয়ে বলল: ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! আমি অমুক অমুক জিহাদের অভিযানে নাম লিখিয়েছি, কিন্তু আমার স্ত্রী হজ্জ করার উদ্দেশ্যে বেরিয়েছে। তখন তিনি বললেন: তুমি তোমার স্ত্রীর সাথে হজ্জ কর

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব