আলহামদু লিল্লাহ।.
যে মুমিন নিজের মুক্তির ব্যাপারে সচেতন সে নিজেকে যা কিছু ধ্বংসাত্মক সে সব থেকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করে এবং নিজের সাথে কোমল হয়। নিজের সাথে কোমল হওয়ার মধ্যে রয়েছে আখিরাতের শাস্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আল্লাহ্র দিকে নিজের পথচলাকে পর্যবেক্ষণে রাখা। যা কিছু পালন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে তা পালন করার ও যা কিছু থেকে নিষেধ করা হয়ে তা থেকে বেঁচে থাকার জন্য আল্লাহ্র সন্তুষ্টি হাছিলের লক্ষ্যে নিরলস চেষ্টা করা। তাই ব্যক্তি সকল পাপ থেকে তাওবা করার মাধ্যমে এ পথ চলা শুরু করবে। নিজেকে নেক আমলে অগ্রবর্তী হওয়া ও ঈমানের উচ্চ স্তরগুলো উন্নীত হওয়ার প্রতি উৎসাহিত করবে। এক্ষেত্রে সহায়ক উপায়-উপকরণগুলো গ্রহণ করবে; যেমন- নেক আমলের সওয়াব সম্পর্কে জানা, গুনাহর কুফল ও কারণগুলো অবহিত হওয়া, দুর্বল মনোবল ও হীনমন্য লোকদের থেকে দূরে থাকা। নেক আমলে যারা প্ররিশ্রমী তাদের ঘটনাগুলো শুনা। এরপরও যদি অন্তর নেক আমল করা থেকে দুর্বল হয় কিংবা গুনাহ প্রকাশ পায়, গুনাহর প্রতি ঝুঁকে পড়ে; তখন শাস্তি আরোপের বিষয়টি আসবে।
শাস্তি দেয়ার বিষয়টি আসবে সত্য জানার পর এর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার পর। শাস্তি দিয়ে শুরু করবে না। যেহেতু জানার আগে শাস্তি দেয়া ঠিক না এবং যাতে করে বাহানা কর্তন করার ক্ষেত্রে এটি অধিক কার্যকর হয়।
বিশেষতঃ এ বিষয়ে সতর্ক থাকুন- আল্লাহ্র আপনাকে মুবারকময় করুন- যে, শাস্তিদান সত্তাগতভাবে উদ্দিষ্ট নয়। বরং এটি আত্মগঠন ও আত্মশুদ্ধির একটি মাধ্যমমাত্র। এটি রোগীর জন্য থেরাপির মত; যা প্রয়োজনমাফিক দেয়া হয়। তাই নিজেকে কষ্ট দেয়া, সাধ্যের বাইরে কষ্টারোপ করা কিংবা আগুনে পুড়ে শরীরকে কষ্ট দেয়া, কিংবা রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা কিংবা এ জাতীয় অন্য কোন শাস্তি প্রশংসিত নয়। শাস্তি অতিরিক্ত কষ্টকর হবে না। বরং তা হবে কোন নেক আমল আরোপ করার মাধ্যমে কিংবা কাঙ্ক্ষিত কোন কিছু থেকে নিজেকে বঞ্ছিত করার মাধ্যমে। আপনি নিজেই যেহেতু নিজের চিকিৎসক; সুতরাং আপনিই সম্যক অবগত যে, কোন জিনিস আপনাকে অবসন্নতা ও অবাধ্যতা ত্যাগ করতে সাহায্য করবে; যাতে আপনি সেটা ত্যাগ করতে পারেন।
আল-মাকদিসি (রহঃ) বলেন:
“জেনে রাখুন, কোন মুমিন যদি নিজের আত্মপর্যালোচনা করে পায় যে, তার কসুর রয়েছে কিংবা সে কিছু কিছু গুনাহর কাজ করে তাহলে তার জন্য সমীচীন নয় যে, নিজেকে এ অবস্থায় ছেড়ে দেয়া। যদি ছেড়ে দেয় তাহলে গুনাহতে লিপ্ত হওয়া তার জন্য সহজ হয়ে যাবে এবং সেটা ত্যাগ করা তার জন্য কঠিন হয়ে যাবে। বরং তার উচিত নিজের উপর বৈধ শাস্তি আরোপ করা; যেমনিভাবে সে নিজের পরিবার ও সন্তানকে শাস্তি দিয়ে থাকে। যেমনটি উমর (রাঃ) সম্পর্কে বর্ণিত আছে একবার তিনি তার এক বাগানে গিয়েছিলেন। ফিরে এসে দেখলেন মানুষ আসরের নামায পড়ে ফেলেছে। তখন তিনি বললেন: আমি আমার বাগানে গিয়েছিলাম। এসে দেখলাম মানুষ নামায পড়ে ফেলেছে। আমার বাগানটি মিসকীনদের জন্য সদকা।
বর্ণিত আছে যে, তামীম আদ্-দারী (রাঃ) একরাতে তাহাজ্জুদের জন্য না উঠে ফজর পর্যন্ত ঘুমিয়ে ছিলেন। ঐ রাতের ঘুমের শাস্তিস্বরূপ তিনি এক বছর না ঘুমিয়ে তাহাজ্জুদের নামায আদায় করেছেন।
হাস্সান বিন সিনান একবার এক রুমের পাশ দিয়ে অতিক্রম করার সময় জিজ্ঞেস করলেন এ রুমটি কবে তৈরী করা হয়েছে? এরপর নিজের আত্মসমালোচনা করে বললেন: তুমি এমন বিষয়ে জিজ্ঞেস করছ যা তোমার প্রয়োজন নেই। আমি তোমাকে এক বছর রোযা রাখার শাস্তি দিব। এরপর তিনি এক বছর রোযা রাখলেন।
পক্ষান্তরে, যে শাস্তিগুলোতে শারীরিক ক্ষতি রয়েছে কিংবা কোন নিষিদ্ধ কর্মে লিপ্ত হওয়া রয়েছে: সেগুলো জায়েয নয়। যেমন বর্ণিত আছে যে, এক লোক এক নারীর দিকে তাকিয়েছিল। পরে সে তার চোখ তুলে ফেলেছে। অপর এক লোক হাত দিয়ে কোন গুনাহ করেছিল পরবর্তীতে তার সে হাত আগুনে পুড়িয়ে আতুর হয়ে গিয়েছিল। এ ধরণের শাস্তিদান জায়েয নেই। কারণ কোন মানুষের পক্ষে নিজের ব্যাপারে এমন কিছু করার অধিকার নেই।[মুখতাসার মিনহাজিল কাসিদীন’ থেকে কিছুটা পরিমার্জিনসহ সংকলিত]
আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।