আলহামদু লিল্লাহ।.
সকল নেক আমল সেটা নিরেট আল্লাহ্র ইবাদত শ্রেণীয় হোক; যেমন- নামায, রোযা ইত্যাদি কিংবা মাখলুকের প্রতি অনুগ্রহ শ্রেণীয় হোক— সব সময় সেগুলো পালন করা কাম্য।
তবে মর্যাদাপূর্ণ সময়গুলোতে সেগুলোর প্রতি উৎসাহিত করা আরো বেশি তাগিদপূর্ণ হয়। এ সময়গুলোকে এ কারণেই মর্যাদা দেয়া হয়েছে যাতে করে সকল নেক ও ভাল আমল পালনে প্রতিযোগিতা করা হয়।
যে সকল নেক আমলের প্রতি উৎসাহিত করা ও যে গুলোর ব্যাপারে উপদেশ দেওয়া শরিয়ত অনুমোদিত সেগুলোর মধ্যে রয়েছে— মাফ চাওয়া এবং পারস্পারিক শত্রুতা মিটিয়ে ফেলা।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সাব্যস্ত হয়েছে যে, তিনি বলেন: "যদি তোমাদের কেউ রোযা রেখে ভোরে উপনীত হয় তাহলে সে যেন অশ্লীল কথা না বলে, মূর্খের আচরণ না করে। যদি কোন লোক গায়ে পড়ে তাকে গালি দেয় কিংবা ঝগড়া করে তবে সে যেন বলে দেয়: নিশ্চয় আমি রোযাদার, নিশ্চয় আমি রোযাদার।"[সহিহ বুখারী (১৮৯৪) ও সহিহ মুসলিম (১১৫১)]
এ হাদিসে অন্তরগুলোকে আহ্বান করা হচ্ছে— বিবাদে জিদ না করার প্রতি, প্রতিপক্ষ থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ না করার প্রতি, আত্মপক্ষ সমর্থন না করার প্রতি এবং খারাপ আচরণের বদলে খারাপ আচরণ না করার প্রতি।
মুসলিম ব্যক্তি যখন ঐ মৌসুমগুলোতে অনেক বেশি নেক আমল করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকে এবং আশংকা করে যে, আল্লাহ্র কাছে তার আমলগুলো উত্তোলনের ক্ষেত্রে হিংসা-বিদ্বেষ প্রতিবন্ধক হতে পারে তখন সে মানুষের কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নেয়।
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: "মানুষের আমল প্রতি সপ্তাহে দুইবার সোমবারে ও বৃহস্পতিবারে উত্থাপন করা হয়। তখন প্রত্যেক মুমিন বান্দাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়; শুধু এমন বান্দা ছাড়া যার মাঝে ও তার ভাইয়ের মাঝে বিবাদ রয়েছে। বলা হয়: এ দুইজনকে বাদ দাও; যতক্ষণ না তারা মিটমাট করে নেয়।"[সহিহ মুসলিম (২৫৬৫)]
শাইখ বিন উছাইমীন (রহঃ) বলেন:
"কোন সন্দেহ নেই মানুষের মাঝে বিবাদ ও ঝগড়া কল্যাণকে বাধাগ্রস্ত করার কারণ। এর দলিল হল: এক রাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সাহাবীদেরকে লাইলাতুল ক্বদর সম্পর্কে খবর দেওয়ার জন্য বের হয়েছেন। তখন সাহাবীদের মধ্যে দুইজন ঝগড়া করছিলেন। তাই লাইলাতুল ক্বদরকে তুলে নেয়া হয়। অর্থাৎ ঐ বছরের লাইলাতুল ক্বদরকে চেনার জ্ঞান তুলে নেওয়া হয়। এ কারণে মানুষের চেষ্টা করা উচিত যাতে করে নিজের অন্তরে কোন মুসলমানের প্রতি বিদ্বেষ না থাকে।"['আল-লিকাউস শাহরি' /৩৬]
তাই যে ব্যক্তি পারস্পারিক ক্ষমা চাওয়ার সংস্কৃতি প্রচার করে, নিজে ক্ষমা চায়, অন্যায়ভাবে কিছু গ্রহণ করে থাকলে সেটা ফিরিয়ে দেয়, মানুষের অধিকার থেকে দায়মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করে এবং রমযানে কিংবা অন্য মাসে এসব আমলের প্রতি মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে: কোন সন্দেহ নাই যে সে ব্যক্তি কল্যাণের কাজে ও ভাল কাজে আছে।
সারকথা:
এ মর্যাদাপূর্ণ মৌসুমে একে অপর থেকে ক্ষমা চাওয়া এবং জুলুম থেকে মুক্ত হওয়া একটি দৃশ্যমান প্রবণতা। ইনশাআল্লাহ্, এ মৌসুমগুলোতে ক্ষমা করার প্রতি তাগিদ দেয়া, স্মরণ করিয়ে দেওয়া এবং উদ্বুদ্ধ করাতে আমাদের কাছে কোন আপত্তির দিক ফুটে উঠছে না।
আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।