সোমবার 22 শাওয়াল 1446 - 21 এপ্রিল 2025
বাংলা

টি-শার্ট ডিজাইন করা এবং Amazon এর মাধ্যমে সেগুলো বিক্রি করার হুকুম

প্রশ্ন

MERCH BY AMZON সেবা ব্যবহার করে আমাজন ওয়েবসাইট থেকে লাভ করার ব্যাপারে আমার একটি প্রশ্ন আছে। আমি এ সেবার জন্য বিনা মূল্যে রেজিস্ট্রেশন করেছি। তারা আমার কাছে ব্যক্তিগত তথ্য ও ব্যাংক একাউন্ট চেয়েছে। একাউন্টটি ইউরোপের একটি অনলাইন ব্যাংকের। এর থেকে লাভ করার উপায় হলো আমি তাদেরকে একটি চিত্র বা ছবির ডিজাইন পাঠাই অথবা শুধু লেখার ডিজাইন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটি ইংরেজিতে হয়ে থাকে। এই ডিজাইন টি-শার্টে বসানো হয়। শার্টগুলোর হাতা ছোট। এরপর আমি এ শার্টের জন্য সুলভ রঙগুলো নির্ধারণ করি, শার্টের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিই এবং বিক্রয় মূল্য নির্ধারণ করি। আমি আগে থেকেই জানি যে, বিক্রি করে আমার কেমন লাভ হবে। যেমন: বিক্রয় মূল্য যদি হয় ১৯ ডলার, আমার লাভ ৫ ডলার। আর খরচ বহন করার জন্য ১৪ ডলার নিবে ওয়েবসাইট। টি-শার্ট কার কাছে বিক্রি হবে সেটি আমি নির্ধারণ করে দিব, সেটা কি পুরুষদের কাছে, নাকি নারীদের কাছে, নাকি যুবকদের কাছে, নাকি সবাই নিতে পারবে। তারপর ওয়েবসাইট ঐ টি-শার্টের যে বিবরণগুলো আমি উল্লেখ করেছি সেগুলোসহ টি-শার্টের কিছু ছবি ওয়েবসাইটে প্রদর্শন করবে, যাতে করে ওয়েবসাইট ব্রাউজকারীরা দেখতে পায়। কারো কাছে যদি আমার টি-শার্ট ভালো লাগে, তাহলে ওয়েবসাইটকে এর মূল্য পরিশোধ করবে। তারপর ওয়েবসাই্ট এই টি-শার্টে আমার ডিজাইন প্রিন্ট করে দিবে। ওয়েবসাইট কর্তৃপক্ষ এটি প্রস্তুত করবে, গুদামজাত করবে এবং ক্রেতার কাছে পার্সেল করবে। ক্রেতার পছন্দ না হলে ফেরত দেওয়ার অধিকারও তারা নিশ্চিত করে। এভাবে বর্তমান মাসের লাভ আগামী মাসে আমার ব্যাংক একাউন্টে তারা পাঠিয়ে দিবে। আমার প্রশ্ন হলো: এই ওয়েবসাইট থেকে উক্ত পদ্ধতিতে লাভ করতে কি কোনো সমস্যা আছে? কোনো মহিলা বা যুবতী যদি এই টি-শার্ট কিনে, যার হাতা ছোট, আর আমি না জেনে থাকি যে সে এটি ঘরের বাইরে পরবে, নাটি ঘরের ভেতরে? এক্ষেত্রেও কি কোন গুনাহ হবে?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

টি-শার্টে যা অঙ্কন করা বা লেখা হয়, সেটির ডিজাইন করে দিতে আপনার কোনো গুনাহ নেই। এই শর্তে যে, যদি টি-শার্ট বিক্রি হয় তাহলে আপনি এর মূল্যের একটি অংশ নিবেন। আর যদি বিক্রি না হয় তাহলে আপনার জন্য কিছু থাকবে না। এটি অংশীদারিত্ব হিসেবে। আপনি ডিজাইনের মাধ্যমে অংশীদার হবেন। আর আমাজন টি-শার্ট এবং সেটির বাজারজাতকরণের মাধ্যমে অংশীদার হবে। এক্ষেত্রে শর্ত হলো আপনার অংশ হবে মূল্যের নির্দিষ্ট হার; নির্ধারিত অংক নয়।

ইবনে কুদামা রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “কোনো অংশীদারের জন্য অতিরিক্ত দিরহাম নির্ধারণ করা জায়েয নেই। অর্থাৎ যখন কোনো অংশীদারের অংশ হিসেবে নির্দিষ্ট পরিমাণ দিরহাম নির্ধারণ করা হবে কিংবা তার অংশের সাথে কিছু দিরহাম জুড়ে দেওয়া হবে যেমন: সে নিজের জন্য একটি অংশ ও সাথে আরও দশ দিরহাম শর্ত করে; তাহলে অংশীদারিত্ব বাতিল হয়ে যাবে।

ইবনুল মুনযির বলেন: আমরা যতজন আলেমের কাছ থেকে ইলম সংরক্ষণ করেছি তারা সকলে ইজমা করেছেন যে, অংশীদারী (মুদারাবায় তথা একজনের শ্রম ও অন্যজনের অর্থ) ব্যবসায় একজন অথবা উভয়জন যদি নিজের জন্য নির্দিষ্ট দিরহাম শর্ত করে তাহলে এ চুক্তি বাতিল।”[আল-মুগনী (৫/২৮) থেকে সমাপ্ত]

যদি টি-শার্টের নির্ধারিত মূল্য ২০ হয়, আর আপনি নিজের জন্য ৫ শর্ত করেন, তাহলে এতে সমস্যা নেই। বরং সেটি উল্লিখিত হারের মতোই।

বরং নিষিদ্ধ হলো: অংশীদারদের কোনো একজন নিজের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ দিরহাম শর্ত করা, অথচ পণ্যটি কী পরিমাণ মূল্যে বিক্রি করা হবে তা জানা যায় না কিংবা প্রকৃতপক্ষে ঐ পণ্য নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি করা হয় না।

আর যদি চুক্তিটি এমন হয় আপনি ডিজাইন করে দেয়ার জন্য বিনিময় গ্রহণ করবেন; টি-শার্ট বিক্রি হোক কিংবা না হোক; তাহলে এটি ডিজাইন বিক্রি। আমাজনের কাছে বিক্রি করার সময় ডিজাইনের মূল্য জানা থাকতে হবে। এরপরে কী ঘটল তার সাথে আপনার কোনো সম্পর্ক নেই। ডিজাইন থেকে কোম্পানি উপকৃত হতে পারে; আবার নাও পারে।

ডিজাইন বিক্রি করার ক্ষেত্রে শর্ত হলো: অঙ্কন বা লেখাটি বৈধ হওয়া। এর মাধ্যমে যেন কোন পাপ কাজে সহায়তা করা না হয়। তাই নারী-যুবতীদের টি-শার্ট থেকে দূরে থাকা আবশ্যক। কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রে বেহায়া হারাম প্রদর্শনে এগুলো ব্যবহৃত হয়।

আর যদি আপনি পুরুষ অথবা ছেলেদের টি-শার্ট ডিজাইন করেন তারপরও কেউ সেগুলো ক্রয় করে বেহায়া প্রদর্শনে সেটি ব্যবহার করবে; তাতে আপনার কোনো গুনাহ হবে না।

আল্লাহই সর্বজ্ঞ।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব