বৃহস্পতিবার 16 শাওয়াল 1445 - 25 এপ্রিল 2024
বাংলা

প্রত্যেক দিন একশবার তাসবীহ পড়ার ফযিলত

প্রশ্ন

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত এ হাদিসটির শুদ্ধতা কতটুকু? তিনি বলেন: "তোমাদের কেউ কি প্রতিদিন এক হাজার নেকী হাছিল করতে অক্ষম? তখন তাঁর সাথীদের একজন জিজ্ঞেস করল: আমরা কিভাবে এক হাজার নেকী হাছিল করতে পারি? তখন তিনি বললেন: একশবার তাসবীহ পড়লে তার জন্য এক হাজার নেকী লেখা হবে কিংবা এক হাজার গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে"। অন্য এক রেওয়ায়েতে আছে: "তার জন্য এক হাজার নেকী লেখা হবে ও এক হাজার গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে"।

যদি কেউ এর চেয়ে বেশি পড়ে তাহলে নেকী কি বাড়বে অর্থাৎ কেউ যদি ১,০০০ বার পড়ে সে কি ১০,০০০ নেকী পাবে?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

উল্লেখিত হাদিসটি সহিহ। হাদিসটি ইমাম মুসলিম (২৬৯৮) তাঁর 'সহিহ' গ্রন্থে সংকলন করেছেন মুসআব বিন সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস থেকে তিনি বলেন আমার পিতা হাদিস বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেন: একবার আমরা রাসূলুল্লাহ্‌সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে ছিলাম। তখন তিনি বললেন: তোমাদের কেউ কি প্রতিদিন এক হাজার নেকী হাছিল করতে অক্ষম? তখন তাঁর একজন সাহাবী জিজ্ঞেস করল: কিভাবে আমাদের কারো জন্য একজন হাজার নেকী লেখা হতে পারে? তখন তিনি বললেন: একশবার তাসবীহ পড়লে (সুবহানাল্লাহ্‌বললে) তার জন্য এক হাজার নেকী লেখা হবে কিংবা তার এক হাজার গুনাহ মাফ হবে।"

ইমাম নববী "আল-আযকার" গ্রন্থে (পৃষ্ঠা-৫৩) বলেন: "ইমাম হাফেয আবু আব্দুল্লাহ্‌আল-হুমাইদী বলেন: সহিহ মুসলিমের সকল রেওয়ায়েতে أو يُحَطّ (কিংবা গুনাহ মাফ করা হবে) এভাবে বর্ণিত হয়েছে। আল-বারক্বানী বলেন: হাদিসটি বর্ণনা করেছেন শুবা, আবু আওয়ানা ও ইয়াহইয়া আল-কাত্তান প্রমুখ মূসা থেকে; যে মূসার সূত্রে ইমাম মুসলিমও হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। তারা সকলে বলেছেন ويُحَطّ (এবং গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে) আলিফ ছাড়া।[সমাপ্ত]

আব্দুল্লাহ্‌বিন আহমাদ বিন হাম্বল বলেন: আমার পিতা বলেছেন: ইবনে নুমাইরও বলেছেন: أو يُحَطّ (কিংবা গুনাহ মাফ করা হবে)। এবং ইয়া'লাও বলেছেন: أو يُحَطّ (কিংবা গুনাহ মাফ করা হবে)।[দেখুন: মুসনাদে আহামদ (৩/১৩৩)]

ইমাম তিরমিযি (৩৪৬৩) হাদিসটি ويُحَطّ (এবং গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে) ভাষ্যে সংকলন করেছেন এবং বলেছেন: "হাসান সহিহ'।

মোল্লা আলী ক্বারী "মিরক্বাতুল মাফাতীহ" গ্রন্থে (৪/১৫৯৪) বলেন: "যেহেতু এক নেকীর বদলে দশ নেকী দেওয়া হয়। কুরআনের আয়াত"যে ব্যক্তি একটি নেকী নিয়ে আসবে সে এর দশগুণ পাবে" [সূরা আনআম, আয়াত: ১৬০] এবং "আল্লাহ্‌যার জন্য ইচ্ছা বৃদ্ধি করবেন"[সূরা বাক্বারা, আয়াত: ২৬১]-এ প্রতিশ্রুত বৃদ্ধির এটি সর্বনিম্ন একক। হারাম এলাকার এক নেকী এক লক্ষ নেকীর সমান। কিংবা তার এক হাজার গুনাহ মাফ হবে" অর্থাৎ সগিরা গুনাহ হোক কিংবা কবিরা গুনাহ হোক; সেটা আল্লাহ্‌র ইচ্ছাধীন।"[সমাপ্ত]

উপরোক্ত আলোচনার ভিত্তিতে যে ব্যক্তি একশ এর চেয়ে বেশি পরিমাণ তাসবীহ পড়বে সে তার বৃদ্ধির জন্য বর্ধিত হারে সওয়াব পাবে। যেহেতু এক নেকীতে দশ নেকী দেওয়া হবে। সুতরাং যে ব্যক্তি এক হাজার বার তাসবীহ পড়বে সে ব্যক্তি দশ হাজার নেকী পাবে। এভাবে বৃদ্ধি করা হবে। আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ প্রশস্ত।

এ হাদিসে যা বর্ণিত হয়েছে এর কাছাকাছি একটি হাদিস যা ইমাম বুখারী (৩২৯৩) ও ইমাম মুসলিম (২৬৯১) আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ্‌সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: "যে ব্যক্তি

لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِير

(অর্থ: এক আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই। তাঁর কোন শরীক নেই। রাজত্ব তাঁরই। সমস্ত প্রশংসাও তাঁর। তিনি সকল কিছুর ওপর ক্ষমতাবান) দিনে একশত বার বলবে­- এটা তার জন্য দশজন দাসমুক্তির অনুরূপ হবে, তার জন্য একশত সওয়াব লেখা হবে, তার একশটি গুনাহ মুছে দেওয়া হবে, সেই দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত এটা তার জন্য শয়তান থেকে সুরক্ষা হবে। সে যে সওয়াব পাবে আর কেউ তার চেয়ে উত্তম সওয়াব পাবে না; তবে যে ব্যক্তি তার চেয়ে বেশি আমল করবে সে ব্যক্তি ছাড়া।"

ইমাম মুসলিম (২৬৯২) আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: "যে ব্যক্তি سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ (উচ্চারণ: সুবহা-নাল্লা-হি ওয়া বিহামদিহী) (অর্থ: আমি আল্লাহর প্রশংসাসহ পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি) সকালে একশত বার ও সন্ধ্যায় একশত বার পড়বে, কিয়ামতের দিন তার চেয়ে উৎকৃষ্ট কিছু কেউ নিয়ে আসতে পারবে না। তবে সে ব্যক্তি ছাড়া যে তার মত বলবে বা তার চেয়ে বাড়িয়ে আমল করবে।"

এ হাদিসে স্পষ্টভাবে উদ্ধৃত হয়েছে যে, যে ব্যক্তি "তার চেয়ে বাড়িয়ে আমল করবে" ও "তার চেয়ে বেশি আমল করবে": সে ব্যক্তি একশ বার উচ্চারণকারীর চেয়ে উত্তম সওয়াবে পাবে। অর্থাৎ সে একদিনে এ যিকিরটি দুইশ বার বলবে, তিনশ বার বলবে… কিংবা আল্লাহ্‌যতবার চান ততবার বলবে। যে বাড়াবে সে আল্লাহ্‌র কাছে বাড়তি পাবে। আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ প্রশস্ত।

আরও জানতে দেখুন: 220345 নং প্রশ্নোত্তর।

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ। 

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব