আলহামদু লিল্লাহ।.
আপনি যে শহরে স্থানান্তরিত হয়েছেন যদি সে শহরের ফজরের ওয়াক্ত শুরুর সঠিক সময় না জেনে থাকেন এবং ফজর শুরু হওয়ার পর ফজর হওয়ার কথা না-জেনে আহার করে থাকেন: আলেমগণ ঐ ব্যক্তির হুকুমের ব্যাপারে মতভেদ করেছেন যে ব্যক্তি রাত আছে ও ফজর হয়নি এ ধারণা করে পানাহার করেছে; অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি সূর্য অস্ত গেছে ধারণা করে পানাহার করেছে; এরপর প্রমাণ হয়েছে যে, এটি তার ভুল ছিল।
অনেক আলেমের অভিমত হল যে, এই পানাহারের মাধ্যমে তার রোযা নষ্ট হয়ে গেছে এবং এর বদলে অন্য একদিন রোযা রাখা তার উপর আবশ্যক।
অপর একদল আলেমের মতে, তার রোযা সহিহ; সে ব্যক্তি তার রোযাটি পূর্ণ করবে এবং তাকে কাযা পালন করতে হবে না।
এটি তাবেয়ীদের মধ্যে মুজাহিদ, হাসান (রহঃ) এর অভিমত। ইমাম আহমাদ থেকে এক বর্ণনা। শাফেয়ি মাযহাবের আলেম মুযানি ও শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া এই মতটি নির্বাচন করেছেন এবং শাইখ উছাইমীন এ অভিমতকে প্রাধান্য দিয়েছেন।
সাহল বিন সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
وَكُلُوا وَاشْرَبُوا حَتَّى يَتَبَيَّنَ لَكُمُ الخَيْطُ الأَبْيَضُ، مِنَ الخَيْطِ الأَسْوَدِ
আয়াতটি নাযিল হল; কিন্তু مِنَ الفَجْرِ অংশটি নাযিল হয়নি। তখন এমন কিছু লোক ছিল যারা রোযা রাখতে চাইলে তাদের পায়ে একটি সাদা সুতা ও কালো সুতা বেঁধে নিত এবং যতক্ষণ পর্যন্ত উভয়টির মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করা না যেত ততক্ষণ পর্যন্ত খেতে থাকত। পরবর্তীতে আল্লাহ্নাযিল করেন: مِنَ الفَجْرِ । তখন তারা বুঝতে পারল যে, আল্লাহ্এখানে রাত ও দিনকে বুঝাচ্ছেন।”[সহিহ বুখারী (১৯১৭) ও সহিহ মুসলিম (১০৯১)]
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া বলেন:
“না-জানার কারণে কোন ওয়াজিব ছেড়ে দেয়া: যেমন যে ব্যক্তি ধীরস্থিরতা রক্ষা না করে নামায আদায় করেছিল এবং সে জানত না যে, এটি ওয়াজিব তার ব্যাপারে আলেমগণ মতভেদ করেছেন যে, সময় পার হয়ে যাওয়ার পর পুনরায় নামায আদায় করা কি তার উপর ওয়াজিব; নাকি ওয়াজিব নয়। দুটো অভিমত: ইমাম আহমাদের মাযহাবের ও অন্য মাযহাবের।
সঠিক অভিমত হচ্ছে এমন ব্যক্তিকে পুনরায় নামায আদায় করতে হবে না। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সহিহ হাদিসে সাব্যস্ত হয়েছে যে, নামায আদায়ে অসঠিকভাবে নামায আদায়কারী বেদুঈনকে বলেছেন: তুমি গিয়ে নামায আদায় কর। কারণ তোমার নামায হয়নি। দুইবার বা তিনবার। লোকটি বলেন: ঐ সত্তার শপথ যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন আমি এর চেয়ে ভালভাবে নামায পড়তে পারি না। আমাকে শিখিয়ে দিন যেভাবে পড়লে আমার নামায হবে। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে ধীরস্থিরভাবে নামায পড়া শিখিয়ে দিলেন। কিন্তু তিনি তাকে এই ওয়াক্তের পূর্বের ওয়াক্তের নামায পুনরায় আদায় করার নির্দেশ দেননি। অথচ সে লোকটি বলেছে যে, যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন আমি এর চেয়ে ভাল পারি না। তিনি তাকে সেই নামাযটি পুনরায় পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। কেননা সেই নামাযটির সময় ছিল। অতএব সেই ব্যক্তি সেই নামাযটি সেই সময়ে আদায় করতে আদিষ্ট। আর যে নামাযের সময় পার হয়ে গেছে সেটি পুনরায় আদায় করার জন্য তিনি তাকে নির্দেশ দেননি; অথচ সে ব্যক্তি কিছু ওয়াজিব ছেড়ে দিয়েছিল। যেহেতু সেই ব্যক্তি জানত না যে, সেটি তার উপর ওয়াজিব।
অনুরূপভাবে যে লোকেরা সাদা সুতা থেকে কালো সুতা পার্থক্য করতে পারা অবধি আহার করেছে, ফজর উদিত হওয়ার পরও আহার করেছে তিনি তাদেরকেও রোযাগুলো পুনরায় রাখার আদেশ দেননি। যেহেতু এই ব্যক্তিগণ ওয়াজিব সম্পর্কে অজ্ঞ ছিলেন। তাই তিনি তাদের অজ্ঞতার সময়ে তারা যে ওয়াজিব ছেড়ে দিয়েছে সেই আমলের কাযা পালনের নির্দেশ দেননি। যেমনিভাবে কাফের ব্যক্তিকে সে কাফের থাকা অবস্থায় যে আমলগুলো পালন করেনি সেগুলোর কাযা পালন করার নির্দেশ দেয়া হয় না।”[মাজমুউল ফাতাওয়া (২১/৪২৯-৪৩১)]
শাইখ ইবনে উছাইমীন (রহঃ) বলেন:
“অজ্ঞতা হচ্ছে (আল্লাহ্আপনাকে মুবারকময় করুন): না-জানা। কিন্তু কখনও কখনও মানুষের অজ্ঞতার ওজর গ্রহণ করা হয় পূর্বেকৃত আমলের ক্ষেত্রে; বর্তমান আমলের ক্ষেত্রে নয়। এর উদাহরণ যা সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিম আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, এক লোক এসে এভাবে নামায পড়ল যাতে কোন ধীরস্থিরতা ছিল না। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে তাকে সালাম দিল। তখন তিনি বললেন: ফিরে গিয়ে নামায পড়। কারণ তোমার নামায হয়নি। এভাবে তিনবার তাকে ফিরিয়ে দিলেন। তখন লোকটি বলল: ঐ সত্তার শপথ যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন আমি এর চেয়ে ভাল পারি না। অতএব আপনি আমাকে শিখিয়ে দিন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে শিখিয়ে দিলেন। কিন্তু তিনি তাকে পূর্বের নামায কাযা পালন করার নির্দেশ দেননি। যেহেতু সে অজ্ঞ ছিল। তিনি তাকে কেবল বর্তমান নামাযটি পুনরায় আদায় করার নির্দেশ দিলেন।”[লিকাউল বাব আল-মাফতুহ; শামেলার নম্বর (১৯/৩২)]
আরও বেশি জানতে পড়ুন: 38543 নং প্রশ্নোত্তর।
এ অভিমতের সারাংশ হল: নতুন শহরের সময়ের পার্থক্য না জানার কারণে আপনার ওজর গ্রহণযোগ্য এবং আপনার রোযা সঠিক। কিছু কিছু সাহাবীদের ক্ষেত্রেও এমন ঘটনা ঘটার ব্যাপারে জানা গেছে। কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে রোযা কাযা করার নির্দেশ দিয়েছেন মর্মে উদ্ধৃত হয়নি।
তবে তা সত্ত্বেও আপনি যদি নিজের দ্বীনের ব্যাপারে সতর্কতা গ্রহণ করে এ দিনগুলোর রোযা কাযা পালন করেন তাহলে সেটা ভাল, সন্দেহ থেকে অধিক দূরবর্তী এবং আলেমদের মধ্যে যারা ওয়াজিব বলে থাকেন তাদের মতভেদের ঊর্ধ্বে থাকার উপায়।
আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।