আলহামদু লিল্লাহ।.
এক: কোন মুসলিমের জন্য সালামের উত্তর সমমানের ভাষায় কিংবা এর চেয়ে উত্তম ভাষায় পেশ করা মুস্তাহাব
যাকে সালাম দেয়া হল শরিয়ত তাকে অনুরূপ ভাষায় কিংবা এর চেয়ে উত্তম ভাষায় জবাব দেয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। আল্লাহ্ তাআলা বলেন: “আর যখন তোমাদেরকে অভিবাদন জানানো হয় তখন তোমরা তার চেয়ে উত্তম অভিবাদন জানাবে কিংবা সেটা দিয়ে জবাব দিবে। নিশ্চয় আল্লাহ সব বিষয়ে পূর্ণ হিসাবকারী।”[সূরা নিসা, আয়াত: ৮৬]
ইবনুল আরাবী (রহঃ) বলেন:
“আর যখন তোমাদেরকে অভিবাদন জানানো হয় তখন তোমরা তার চেয়ে উত্তম অভিবাদন জানাবে কিংবা সেটা দিয়ে জবাব দিবে।” এ আয়াতের ব্যাপারে দুটো অভিমত রয়েছে:
১। তার চেয়ে উত্তম অর্থাৎ বৈশিষ্টগতভাবে। যেমন কেউ যদি আপনার জন্য দীর্ঘায়ুর দোয়া করে আপনি বলুন: ‘সালামুন আলাইকুম’। কেননা এটি ওটার চেয়ে উত্তম। যেহেতু এটি মানব সমাজের ও ইসলামী শরিয়তের রীতি।
২। যদি কেউ আপনাকে বলে: ‘সালামুন আলাইকা’ আপনি তাকে বলুন: ‘ওয়া লাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’।[আহকামুল কুরআন (৪৬৪-৪৬৫) থেকে সমাপ্ত]
ইবনে কাছির (রহঃ) বলেন:
“আল্লাহ্র বাণী: আর যখন তোমাদেরকে অভিবাদন জানানো হয় তখন তোমরা তার চেয়ে উত্তম অভিবাদন জানাবে কিংবা সেটা দিয়ে জবাব দিবে। অর্থাৎ যদি কোন মুসলিম সালাম দেয় তাহলে তার সালামের জবাবে সে যেভাবে সালাম দিয়েছে এর চেয়ে উত্তমভাবে সালাম দাও কিংবা সে যেভাবে জবাব দিয়েছে তদ্রুপভাবে জবাব দাও। অতিরিক্ত দিয়ে জবাব দেয়া মুস্তাহাব। আর সমানভাবে জবাব দেয়া ফরয।”[তাফসিরে ইবনে কাছির (২/৩৬৮) থেকে সমাপ্ত]
দুই: সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ্ বলে সালামের জবাব দেয়ার হুকুম
প্রশ্নকারী যে দেশের কথা উল্লেখ করেছেন সে দেশের ও অন্যান্য দেশের সাধারণ মানুষ সালামের জবাবে ‘ওয়া লাইকুমুস সালাম’ না বলে “সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ্” বলে উত্তর দেয়াটা প্রথমে সালাম দানকারী ব্যক্তির চেয়ে অনুত্তমভাবে উত্তর দেয়া। কেননা প্রথমে সালামদানকারী নির্দিষ্টবাচক শব্দ ব্যবহার করে السلام (আস্-সালামু) বলেছিলেন; আর তিনি তার থেকে কমিয়ে سلام (সালামুন) বলেছেন এবং তিনি عليكم (আলাইকুম) শব্দটিও বাদ দিয়েছেন। অথচ উচিত ছিল তার জবাবে ‘ওয়া আলাইকুম’ কথাটি থাকা। যেহেতু কোন মতভেদ ছাড়া এভাবে উত্তর দেয়াই উত্তম।
তবে উত্তরদাতা যদি কেবল এ কথাটি বলে উত্তর দেয় কিংবা এটি কোন এক দেশে ব্যাপকতা পেয়ে থাকে: তাহলে সঠিক মতানুযায়ী এভাবে জবাব দিলেও চলবে এবং জবাব দেয়া হয়নি বলে গণ্য হবে না। যদিও সালামদানকারীর চেয়ে উত্তমভাবে উত্তর দেয়ার ফযিলতটি তার ছুটে যায়।
একাধিক আলেম দ্ব্যর্থহীনভাবে উল্লেখ করেছেন যে, (السلام শব্দটির সাথে ال যোগ করে) السلام (আস্-সালামু) বলা মুস্তাহাব; ওয়াজিব নয়।
ইবনু মুফলিহ (রহঃ) ‘আল-আদাব আশ্-শারইয়্যাহ’ গ্রন্থে (১/৩৯৯) বলেন:
“উত্তরদাতার সালাম (শব্দটি) মারিফা হওয়া (ال যুক্ত করে السلام বলা)। ছড়াকার (মূল গ্রন্থাকার) এ মাসয়ালায় এটাকে মূল হিসেবে উল্লেখ করেছেন। যা প্রমাণ করে যে, শব্দটি মারিফা হওয়াটা মুস্তাহাব। এ বিষয়টি পরিস্কার।”[সমাপ্ত]
ইমাম নববী (রহঃ) পরিস্কারভাবে বলেছেন:
“প্রথমে সালামদানকারী যদি বলে: ‘সালামুন আলাইকুম’ কিংবা বলে ‘আস্-সালামু আলাইকুম’ তাহলে উত্তরদাতা উভয়ক্ষেত্রে বলতে পারেন: ‘সালামুন আলাইকুম’। এবং তিনি ‘আস্-সালামু আলাইকুম’-ও বলতে পারেন। আল্লাহ্ তাআলা বলেছেন: قَالُوا سَلَامًا قَالَ سَلَامٌ (তারা বলল: ‘সালামান’। তিনি বললেন: ‘সালামুন’।) আমাদের মাযহাবের ইমাম আবুল হাসান আল-ওয়াহিদি বলেছেন: ‘সালাম’ শব্দটিকে মারিফা (আলিফ-লাম যুক্ত করে ‘আস্-সালামু’ বলা) হিসেবে কিংবা নাকিরা (আলিফ-লাম বিহীন ‘সালামুন’) হিসেবে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে আপনি স্বাধীন। আমি বলব: কিন্তু আলিফ-লাফ যুক্ত করে (আস্-সালামু) বলাটা উত্তম।”[আল-আযকার (পৃষ্ঠা-২১৯) থেকে সমাপ্ত এবং অনুরুপ কথা ‘শারহুল মুহায্যাব’ (৪/৫৯৭)-এ ও রয়েছে]
আরও জানতে দেখুন ইবনু আল্লানের ‘আল-ফুতুহাত আর্-রাব্বানিয়া’ (৫/২৯৪-২৯৫)।
সারকথা:
প্রশ্নে উল্লেখিত ভাষায় সালামের জবাব দিলে আদায় হয়ে যাবে। যদিও উত্তম হচ্ছে পরিপূর্ণ ভাষায় সালামের জবাব দেয়া; যেভাবে উপরে বিস্তারিত জবাবে বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।
আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।