আলহামদু লিল্লাহ।.
এই ধরণের দোয়া মানুষের পক্ষ থেকে দুইভাবে সংঘটিত হতে পারে:
এক.
সঙ্গির প্রতি মমত্ব থেকে দোয়াগুলো মুখে চলে আসা; আসলে দোয়াগুলোর স্বরূপ উদ্দেশ্য না হওয়া এবং নিজের বিপক্ষে দোয়া করা দোয়াকারীর ইচ্ছায় না থাকা। তাহলে এমন দোয়াগুলো অনিচ্ছাকৃত নিরর্থক কথার অন্তর্ভুক্ত হবে।
আল্লাহ্ তাআলা বলেন: “নিরর্থক শপথের জন্য আল্লাহ্ তোমাদেরকে পাকড়াও করবেন না। বরং তিনি তোমাদেরকে পাকড়াও করবেন তোমাদের অন্তরের অভিপ্রায়ের জন্য। আল্লাহ্ ক্ষমাপরায়ণ, ধৈর্যশীল।”[সূরা বাক্বারা, ২: ২২৫]
শাইখ আব্দুর রহমান আস্-সা’দী (রহঃ) বলেন: “অর্থাৎ তোমাদের মুখে যে নিরর্থক কসমগুলো এসে যায় সেগুলোর জন্য তোমাদেরকে পাকড়াও করবেন না; যে কসমগুলো বান্দা উদ্দেশ্য ছাড়া, অন্তরের সংকল্প ছাড়া উচ্চারণ করে ফেলে। যে কসমগুলো কথা বলার সময় ব্যক্তির মুখে চলে এসেছে; যেমন কোন ব্যক্তি তার কথার মাঝখানে বলে ফেলল যে, “লা- ওয়াল্লাহ্” (আল্লাহ্র কসম; না), “বালা, ওয়াল্লাহ্ (আল্লাহ্র কসম, হ্যাঁ)। অনুরূপভাবে অতীতের কোন বিষয়ে নিজেকে সত্যবাদী মনে করে কসম করা। বরং ব্যক্তিকে পাকড়াও করা হবে ব্যক্তির অন্তর দৃঢ় সংকল্প করলে।
এর মধ্যে দলিল রয়েছে যে, কথাবার্তার ক্ষেত্রেও ব্যক্তির উদ্দেশ্যগুলো ধর্তব্য; যেমনিভাবে কাজকর্মের ক্ষেত্রে উদ্দেশ্যগুলো বিবেচ্য।”[তাফসিরে সা’দী (পৃষ্ঠা-১০১) থেকে সমাপ্ত]
ইবনুল কাইয়্যেম (রহঃ) বলেন:
“শব্দগুলোর ক্ষেত্রে নিয়ত ও উদ্দেশ্যসমূহ বিবেচ্য। শব্দগুলোর মাধ্যমে আরোপিত বিধান ততক্ষণ পর্যন্ত অনিবার্য হবে না যতক্ষণ না বক্তা স্বেচ্ছায় শব্দগুলো উচ্চারণ করে এবং শব্দগুলো যেটাকে আবশ্যক করে সেটাকে উদ্দেশ্য করে; অনুরূপভাবে শব্দ দিয়ে কথা বলাটাও তার উদ্দেশ্য হতে হবে। সুতরাং দুটো ইচ্ছা থাকা অবধারিত:
নিজ এখতিয়ারে শব্দ দিয়ে কথা বলার ইচ্ছা।
শব্দ যেটাকে আবশ্যক করে সেটাকে ইচ্ছা করা। বরং শব্দকে উদ্দেশ্য করার চেয়ে শব্দের অর্থকে ইচ্ছা করা অধিক তাগিদপূর্ণ। কেননা অর্থই হল লক্ষ্য; শব্দ হল মাধ্যম। এটি ইসলামের আলেমদের মধ্যে ফতোয়া দেয়ার যোগ্য ইমামদের অভিমত...।”[ইলামুল মুওয়াক্কিয়ীন (৪/৪৪৭)]
দুই.
স্বেচ্ছায় ও উদ্দেশ্যমূলকভাবে এই দোয়াগুলোর মাধ্যমে দোয়া করা।
দোয়া করার বিষয়গুলো উন্মুক্ত। আল্লাহ্ তাআলা বলেন: “তোমাদের প্রভু বলেন: তোমরা আমাকে ডাক; আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব।”[সূরা গাফের, আয়াত: ৬০]
আল্লাহ্ তাআলা আরও বলেন: “তোমরা আল্লাহ্র কাছে তাঁর অনুগ্রহ প্রার্থনা কর। নিশ্চয় আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে জ্ঞানী।”[সূরা নিসা, আয়াত: ৩২]
আপনি আপনার পূর্বেকৃত দোয়ার প্রতিকার এভাবে করতে পারেন যে, আল্লাহ্ যেন তাঁর আনুগত্যের উপর আপনার হায়াত বাড়িয়ে দেন, আপনার স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য্য অটুট রাখেন এবং আপনার সাথীকেও আপনার মত দান করেন। আল্লাহ্র অনুগ্রহ প্রশস্ত। সুতরাং বান্দা নির্দিষ্ট কোন বিষয়ে আল্লাহ্র সাথে লেনদেন সীমাবদ্ধ রাখবে না। আল্লাহ্র ভাণ্ডার পরিপূর্ণ; খরচ করলে সেটাতে ঘাটতি হয় না। তাই এমন কোন প্রয়োজন নাই যে, আপনার স্বাস্থ্য থেকে নিয়ে আপনার সাথীকে দিতে হবে!!
আপনার উপর ওয়াজিব হল আপনার নিজের জন্য বদদোয়া করার গুনাহ থেকে তাওবা করা। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “তোমরা তোমাদের নিজেদের জন্য ভাল ছাড়া কোন মন্দ দোয়া করবে না”।[সহিহ মুসলিম (৯২০)]
আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।