শনিবার 22 জুমাদাল আউওয়াল 1446 - 23 নভেম্বর 2024
বাংলা

যে ব্যক্তি কনডম ব্যবহার করে রমযানের দিনের বেলায় স্ত্রী সহবাস করেছে

প্রশ্ন

যে ব্যক্তি কনডম ব্যবহার করে রমযানের দিনের বেলায় স্ত্রী সহবাস করেছে তার হুকুম কী? সে তার স্ত্রীকে জনৈক তালিবুল ইলমের ফতোয়া শুনিয়েছে যে, কনডমের কারণে খতনার স্থানদ্বয় একটি অপরটিকে স্পর্শ করে না বিধায় সহবাস বাস্তবায়িত হয় না। তাই স্ত্রী তার স্বামীর ডাকে সাড়া দিয়েছে।

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

এক:

রোযাদারের জন্য রমযানের দিনের বেলায় স্ত্রী সহবাস করা হারাম। যেহেতু আল্লাহ্‌তাআলা বলেন: “রোযার রাতে তোমাদের জন্য স্ত্রীসম্ভোগ বৈধ করা হয়েছে তারা তোমাদের পরিচ্ছদ, তোমরাও তাদের পরিচ্ছদ আল্লাহ্‌জানেন যে, তোমরা ইতিপূর্বে অন্যায় করে নিজেদের ক্ষতি করছিলে পরে তিনি তোমাদের প্রতি সদয় হয়েছেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন এখন তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের সংস্পর্শে যেতে পার এবং আল্লাহ্‌তোমাদের জন্য যা বরাদ্দ করে রেখেছেন (অর্থাৎ সন্তান-সন্ততি) তা কামনা করতে পার আর কালো রেখা থেকে প্রভাতের সাদা রেখা স্পষ্ট  না হওয়া পর্যন্ত (অর্থাৎ রাতের অন্ধকার চলে গিয়ে ভোরের আলো উদ্ভাসিত না হওয়া পর্যন্ত) তোমরা পানাহার কর তারপর (পরবর্তী) রাত আসা পর্যন্ত রোযা পূর্ণ কর[সূরা বাক্বারা, আয়াত: ১৮৭]

হাদিসে কুদসীতে আল্লাহ্‌তাআলা বলেন: আমার কারণে সে পানাহার যৌন-কামনা বর্জন করে রোযা আমারই জন্য আমি এর প্রতিদান দিব একটি নেকীকে দশগুণ হিসেবে[সহিহ বুখারী (১৮৯৪)]

যে ব্যক্তি কনডম ব্যবহার করে সহবাস করেছে সে তো নিজের যৌন-কামনাকে পূর্ণ করেছে; এতে কোন সন্দেহ নাই।

এই কনডম ব্যবহার করে সহবাস করলেও এর কারণে সকল বিধান আরোপিত হয়; যেমন গোসল ফরয হওয়া, রোযা নষ্ট হওয়া, হজ্জ নষ্ট হওয়া যদি প্রথম হালালের আগে করে থাকে, হায়েয অবস্থায় এটা করা হারাম হওয়া এবং এর মাধ্যমে তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনা ইত্যাদি।

ইমাম নববী (রহঃ) “আর-রওজা’ গ্রন্থে (১/৮২) বলেন:

“যদি কেউ তার পুরুষাঙ্গের উপর একটি ন্যাকড়া বেঁধে নিয়ে এটিকে প্রবেশ করায় তাহলে সঠিক মতানুযায়ী গোসল ফরয হবে। দ্বিতীয় মতানুযায়ী ফরয হবে না। তৃতীয় মতানুযায়ী যদি ন্যাকড়াটি মোটা হয় এবং যোনির আর্দ্রতা পুরুষাঙ্গে পৌঁছতে এবং একটি অঙ্গের উষ্ণতা অপরটিতে পৌঁছতে বাধা দেয় তাহলে গোসল ফরয হবে না; অন্যথায় ফরয হবে।

আমি বলব: আল-বাহর এর গ্রন্থাকার বলেছেন: হজ্জ নষ্ট হওয়ার ক্ষেত্রেও এই অভিমতগুলো প্রযোজ্য। সব বিধিবিধানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হওয়া বাঞ্ছনীয়।”[সমাপ্ত]

তুহফাতুল মুহতাজ গ্রন্থে (৩/৩৯৭) বলেন: “আলেমদের ইজমা হচ্ছে: সহবাস থেকে বিরত থাকা। অতএব সহবাসের মাধ্যমে রোযা ভেঙ্গে যাবে; এমনকি যদি বীর্যপাত না করে তবুও।”

শারওয়ানি পূর্বোক্ত গ্রন্থের পাদটীকাতে বলেন: “রোযা ভেঙ্গে যাবে” এমনকি যদি সেটা কোন আচ্ছাদন ব্যবহার করে হয় তবুও। এটাই বাহ্যিক মর্ম।[সমাপ্ত]

কাশ্‌শাফুল ক্বিনা গ্রন্থে (১/২০১) হায়েযবতী নারীর সাথে সহবাস করা হারাম হওয়া প্রসঙ্গে বলেছেন: “এমনকি যদি পুরুষাঙ্গের উপর কোন আচ্ছাদন বেঁধে কিংবা পুরুষাঙ্গকে থলিতে ঢুকিয়ে সহবাস করা হয় তবুও।”[সমাপ্ত]

প্রশ্নোক্ত ফতোয়াদানকারী ভুল ফতোয়া দিয়েছেন। যে ফতোয়া রোযার ভিতকেই ধ্বংস করে দেয়। যদি কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তি বিষয়টি একটু ভেবে দেখেন তাহলে এই ফতোয়ার কদর্যতা তার কাছে পরিস্কারভাবে ফুটে উঠবে। যদি কোন ব্যক্তি পানাহার থেকে বিরত থেকে প্রতিদিন আচ্ছাদন ব্যবহার করে স্ত্রী সহবাস করতে থাকে; তাহলে এটা কোন ধরণের রোযা?!

হতে পারে সে এমন কোন ব্যক্তির ফান্দে পড়বে যে তাকে বলবে যে: বীর্যপাত করা রোযা ভঙ্গকারী নয়। তখন সহবাস ঘটবে, বীর্যপাতও ঘটবে এরপরও বলবে: আমি রোযাদার!

এটি তামাশা; গোটা শরিয়ত এর থেকে পবিত্র।

এই বক্তব্যের ভিত্তিতে কেউ যদি কোন বেগানা নারীর সাথে সহবাস করে বলে যে, সে ব্যভিচার করেনি। কেননা সহবাস সংঘটিত হয়নি। তখন এই মুফতি তাকে কী বলবে?!

তাই অঙ্গটি ঢুকানো সম্পন্ন হওয়ার পরও আচ্ছাদন থাকার কারণে যে ব্যক্তি এটাকে সহবাস বলবে না তার কথার প্রতি ভ্রুক্ষেপ করার সুযোগ নাই। এমনকি যদি এমন কথা কোন ফকীহ বলে থাকেন তার প্রতিও। বিশেষতঃ এই পাতলা আচ্ছাদনগুলো স্বাদ লাভে কোন প্রতিবন্ধকতা তৈরী করে না। এই আচ্ছানদগুলো পুরুষাঙ্গের উপর ন্যাকড়া বাঁধার মত নয়; যেমনটি ফিকাহবিদগণ কল্পিত রূপ পেশ করেছিলেন।

দুই:

ফতোয়া কেবলমাত্র ফতোয়া দেয়ার উপযুক্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকেই গ্রহণ করতে হয়। তাই যে ব্যক্তি প্রশ্নোক্ত গুনাতে লিপ্ত হয়েছে তার করণীয় নিম্নরূপ:

১। এই হারাম কাজে লিপ্ত হওয়ার কারণে আল্লাহ্‌র কাছে তাওবা করা।

২। সহবাসের মাধ্যমে যে রোযাটি নষ্ট করেছে সেটি কাযা পালন করা।

৩। কাফ্‌ফারা পরিশোধ করা। আর তা হল: একজন দাস আযাদ করা। যদি দাস না পায় তাহলে লাগাতরভাবে দুইমাস রোযা রাখা। যদি তা না পারে তাহলে ষাটজন মিসকীনকে খাদ্য খাওয়ানো।

সহবাস করে সে বীর্যপাত করুক কিংবা না করুন।

‘আল-মাওসুআ আল-ফিকহিয়্যা’-তে (৩৫/৫৫) এসেছে: “যে ব্যক্তি রমযান মাসের দিনের বেলায় কোন ওজর ছাড়া ইচ্ছাকৃতভাবে যৌনাঙ্গে সঙ্গম করেছে তার উপর কাফ্‌ফারা ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারে ফিকাহবিদদের মাঝে কোন মতভেদ নাই; চাই সে ব্যক্তি বীর্যপাত করুক কিংবা না করুক।”[সমাপ্ত]

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব