শনিবার 22 জুমাদাল আউওয়াল 1446 - 23 নভেম্বর 2024
বাংলা

ভাগ্নীদের বেপর্দার কারণে মামার কি হিসাব নেয়া হবে?

প্রশ্ন

জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করছে যে, তার বোনের মেয়েরা আঁটসাঁট পোশাক পরার কারণে তাদের পিতা থাকা সত্ত্বেও সে কি তাদেরকে মারতে পারবে? তাদের এ পোশাকের কারণে সে কি গুনাহগার হবে?

আলহামদু লিল্লাহ।.

এক:

ভাগ্নীদের পিতা জীবিত থাকা অবস্থায় ভাগ্নীদের উপর মামার কর্তৃত্ব নেই:

ভাগ্নীদের পিতা আকলবান, শরয়ি ভারপ্রাপ্ত (মুকাল্লাফ), উপস্থিত ও জীবিত থাকা অবস্থায় ভাগ্নীদের উপর মামার কর্তৃত্ব নেই। এটি সুবিদিত বিষয় যে, পিতা জীবিত থাকা অবস্থায় পিতার উপর সন্তানদের তত্ত্বাবধান করা ওয়াজিব। সন্তানদের তত্ত্বাবধান ও প্রতিপালনের ব্যাপারে পিতাগণ আল্লাহ্‌র কাছে হিসাব দিতে হবে।

আব্দুল্লাহ্‌ বিন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: তোমরা প্রত্যেকে দায়িত্বশীল, প্রত্যেককে তার অধীনস্থদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। যিনি মানুষের আমীর তিনি তাদের উপর দায়িত্বশীল; তাকে তাদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ব্যক্তি তার পরিবারের উপর দায়িত্বশীল; তাকে তাদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। নারী তার স্বামীর বাসা ও সন্তানদের উপর দায়িত্বশীল; তাকে তাদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ক্রীতদাস তার মনিবের সম্পদের ব্যাপারে দায়িত্বশীল; তাকে সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। সাবধান, জেনে রাখ; তোমরা প্রত্যেকে দায়িত্বশীল; তোমাদের প্রত্যেককে তার অধীনস্থদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।[সহিহ বুখারী (২৫৫৪) ও সহিহ মুসলিম (১৮২৯)]

কিন্তু সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধের দিক থেকে মামার দায়িত্ব রয়েছে। যদি মামা তার ভাগ্নীদের মধ্যে গর্হিত কিছু দেখে তার উপর আবশ্যক এর বিরোধিতা করা।

আবু সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি: তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কোন গর্হিত কিছু দেখে সে যেন তা হাত দিয়ে পরিবর্তন করে। যদি তা না পারে তাহলে যেন মুখ দিয়ে পরিবর্তন করে। যদি তা না পারে তাহলে যেন অন্তর দিয়ে করে। আর এটি হলো ঈমানের দুর্বলতর স্তর।[সহিহ মুসলিম (৪৯)]

ইমাম নববী বলেন: “সে যেন তা পরিবর্তন করে”: উম্মতের আলেমদের ইজমার ভিত্তিতে এটি  “ওয়াজিবকরণ-মূলক নির্দেশ” এবং সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারে কুরআন, হাদিস ও ইজমার দলিল সম্মিলিত হয়েছে। এবং এটি কল্যাণকামিতার অন্তর্ভুক্ত; যা হলো হলো দ্বীনদারি।

দুই:

মামা কি তার বোনের সন্তানদেরকে শাসন করতে পারবে?:

এ ধরণের ক্ষেত্রে ভাগ্নীদেরকে মামার প্রহার করার অধিকার নেই। কেননা প্রহার করার মাধ্যমে শাস্তি দেয়ার অধিকার পিতার কিংবা শিশুর উপর যার কর্তৃত্ব আছে তার; যেমন পিতা যাকে অভিভাবকের দায়িত্ব দিয়েছেন কিংবা আইনানুগ বিচারক যাকে অভিভাবক বানিয়েছে।

আল-মাওসুআ আল-ফিকহিয়্যাতে (১০/২৫) এসেছে:

“পিতামাতা তাদের সন্তানকে শিষ্টাচার শেখাতে গিয়ে প্রহার করা বৈধ বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত এবং পিতামাতার অনুরূপ হচ্ছে ওসিয়তপ্রাপ্ত অভিভাবক।

শিক্ষক শাসন করার কর্তৃত্ব লাভ করেন অভিভাবকের পক্ষ থেকে।”[সমাপ্ত]

কিন্তু মামা যা করছে সেটা জেনেও পিতা যদি চুপ থাকে তাহলে এটি তার পক্ষ থেকে মামা যা করবে সেটার পক্ষে স্বীকৃতি। সেক্ষেত্রে মামা তাদের প্রতিপালন ও শাসনের জন্য যেটাকে উপযুক্ত মনে করেন সেটা করার জন্য যেন তাকে দায়িত্ব দেয়া হলো।

কোন কোন পরিবারে মামার শাসন করার এমন এক মর্যাদা থাকে যে, তাকে শাসন করতে দেয়া হয়, মানুষ প্রথাগতভাবে সেটাই দেখে আসছে; কেউ এর বিরোধিতা করে না।

আর যদি পিতা মামার হস্তক্ষেপের উপর আপত্তি করেন সেক্ষেত্রে মামা কেবল উপদেশ দিয়েই ক্ষান্ত হবেন। পিতামাতাকেও উপদেশ দিবেন। কেননা তাদের মেয়েদের ব্যাপারে এটা তাদের দায়িত্ব। তারা উভয়ে শক্তি প্রয়োগ করে তাদের মেয়েদেরকে নিষিদ্ধ পোশাক পরিধান থেকে বাধা দেয়ার অধিকার রাখেন।

আল্লাহই সর্বজ্ঞ।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব