রবিবার 21 জুমাদাল ছানী 1446 - 22 ডিসেম্বর 2024
বাংলা

সংক্ষেপে পুরুষের পোশাক সংক্রান্ত বিধি-বিধান

প্রশ্ন

কুরআনে স্পষ্টভাবে নারীর জন্য যে কোন দেশে, যে কোন সমাজে -সেটা ইসলামী দেশ হোক কিংবা অনৈসলামী দেশ হোক- কি পরিধান করা আবশ্যকীয় সেটা উল্লেখ করা হয়েছে। আমি পুরুষের পোশাকের ব্যাপারটি জানতে চাই। সেটা যে দেশে বা যে সমাজে হোক না কেন; ইসলামী দেশে কিংবা অনৈসলামী দেশে?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

সংক্ষেপে পুরুষের পোশাক সংক্রান্ত বিধি-বিধান। আমরা আল্লাহ্‌র কাছে প্রার্থনা করছি যেন এই সংক্ষিপ্ত আলোচনাটি যথেষ্ট হয় এবং কাজে আসে:

১. পরিধানযোগ্য সব পোশাকের মূল বিধান হচ্ছে– বৈধতা। যদি না কোন পোশাক হারাম হওয়ার পক্ষে দলিল থাকে; যেমন- পুরুষদের জন্য রেশমের কাপড় পরা। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “নিশ্চয় এ দুটো জিনিস আমার উম্মতের পুরুষদের উপর হারাম (নিষিদ্ধ), নারীদের জন্য জায়েয (বৈধ)।”[সুনানে ইবনে মাজাহ (৩৬৪০), আলবানী সহিহ সুনানে ইবনে মাজাহ্‌ গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন] যেমন- মৃতপ্রাণীর চামড়া পরিধান করা অবৈধ; তবে দাবাগত করলে তথা প্রক্রিয়াজাত করলে বৈধ। আর ভেড়া, উট ও ছাগলের পশম দিয়ে তৈরী পোশাক এর বিধান হচ্ছে– এগুলো পবিত্র ও বৈধ। মৃতপ্রাণীর চামড়া ব্যবহারের বিধান সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে 1695 নং ও 9022 নং প্রশ্নোত্তর দেখুন।

২. স্বচ্ছ পোশাক পরিধান করা অবৈধ; যে পোশাকে সতর ঢাকে না।

৩. পোশাকাদির ক্ষেত্রে কাফের ও মুশরিকদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করা হারাম। তাই যে সব পোশাক কাফেরদের নিজস্ব পোশাক সেগুলো পরিধান করা নাজায়েয।

আব্দুল্লাহ্‌ বিন আমর বিন আস (রাঃ) বলেন: রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে কুসুম রঙ-এর দুটো কাপড় পরিহিত দেখে বললেন: এগুলো কাফেরদের পোশাক। তাই, তুমি এগুলো পরিধান করো না।[সহিহ মুসলিম (২০৭৭)]

৪. পোশাকের ক্ষেত্রে পুরুষদের জন্য নারীদের বেশ ধারণ করা এবং নারীদের জন্য পুরুষদের বেশ ধারণ করা হারাম। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারীদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণকারী পুরুষ ও পুরুষদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণকারী নারীদেরকে লানত করেছেন।[সহিহ বুখারী (৫৫৪৬)]

৫. সুন্নত হচ্ছে– যে কোন মুসলিম বিসমিল্লাহ্‌ বলে ডান দিক থেকে কাপড় পরা শুরু করবে এবং বাম দিক থেকে কাপড় খোলা শুরু করবে। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যখন তোমরা পোশাক পরবে কিংবা ওযু করবে তখন ডান দিক থেকে শুরু কর।”[সুনানে আবু দাউদ (৪১৪১), আলবানী ‘সহিহুল জামে’ গ্রন্থে (৭৮৭) হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন।

 

৬. নতুন পোশাক পরে আল্লাহ্‌র শুকরিয়া আদায় করা ও দোয়া করা সুন্নত। আবু সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখনই কোনো নতুন কাপড় পরিধান করতেন, তখন এই পোশাকের নাম উল্লেখ করতেন; যেমন- পাগড়ি বা জামা কিংবা চাদর। তারপর বলতেন:
اللَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ كَسَوْتَنِيهِ، أَسْأَلُكَ مِنْ خَيْرِهِ وَخَيْرِ مَا صُنِعَ لَهُ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهِ وَشَرِّ مَا صُنِعَ لَهُ
(অর্থ :হে আল্লাহ্! সকল প্রশংসা আপনারই জন্য। আপনিই আমাকে এ পোশাক পরিয়েছেন। আমি আপনার কাছে এর কল্যাণ ও এটি যে উদ্দেশ্যে তৈরি হয়েছে সে কল্যাণ প্রার্থনা করি। আর আমি এর অনিষ্ট এবং এটি যে জন্য তৈরি করা হয়েছে সেটার অনিষ্ট থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই।)[সুনানে তিরমিযি (১৭৬৭), সুনানে আবু দাউদ (৪০২০), শাইখ আলবানী ‘সহিহুল জামে’ গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]

৭. অহমিকা ও অতিরঞ্জন বর্জন করে পোশাক-পরিচ্ছদ পরিচ্ছন্ন রাখার প্রতি যত্নবান হওয়া সুন্নত। আব্দুল্লাহ্‌ বিন মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: “যে ব্যক্তির অন্তরে অণু পরিমাণ অহংকার থাকবে সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এক লোক বলল: ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! মানুষ তো পছন্দ করে তার কাপড়টি সুন্দর হবে, তার জুতাটি সুন্দর হবে। তিনি বললেন: নিশ্চয় আল্লাহ্‌ সুন্দর, তিনি সৌন্দর্য পছন্দ করেন। অহংকার হচ্ছে– সত্যকে প্রত্যাখ্যান করা এবং মানুষকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা।”[সহিহ মুসলিম (৯১)]

৮. সাদা রঙের পোশাক পরিধান করা মুস্তাহাব। ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া বলেছেন: “তোমরা সাদা পোশাক পরিধান করো। কেননা সাদা পোশাক সর্বোত্তম পোশাক। এবং সাদা পোশাকে তোমাদের মৃতব্যক্তিদেরকে কাফন দাও।”[সুনানে তিরমিযি (৯৯৪) হাসান সহিহ, আলেমগণ সাদা রঙের পোশাক পরাকে মুস্তাহাব বলেন; সুনানে আবু দাউদ (৪০৬১) ও সুনানে ইবনে মাজাহ (১৪৭২)]

৯. পরিধেয় যে কোন পোশাকের সর্বোচ্চ সীমা টাকনু পর্যন্ত; কোন পোশাককে টাকনুর নীচে প্রলম্বিত করা হারাম। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেন: “লুঙ্গির যতটুকু টাখনুর নীচে যাবে ততটুকু জাহান্নামে যাবে।”[সহিহ বুখারী (৫৪৫০)] আবু যর (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: “আল্লাহ্‌ কিয়ামতের দিন তিন ব্যক্তির সাথে কথা বলবেন না, তাদেরকে পবিত্র করবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। আবু যার (রাঃ) বলেন: রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ কথাটি তিনবার বলেছেন। আবু যার (রাঃ) বলেন: তারা ব্যর্থ হোক ও ক্ষতিগ্রস্ত হোক। ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! তারা কারা? তিনি বললেন: লুঙ্গি প্রলম্বিতকারী, খোঁটা দানকারী ও মিথ্যা শপথ করে পণ্যসামগ্রী বিক্রয়কারী।[সহিহ মুসলিম (১০৬)]

১০. ‘যশোদ-পোশাক’ পরিধান করা হারাম। সেটা এমন পোশাক যা পরিহিতকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তোলে; যাতে করে তার দিকে চোখ তুলে তাকানো হয়, তার পরিচিতি লাভ হয় এবং খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি যশোদ-পোশাক পরবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ্‌ তাকে অনুরূপ পোশাক পরাবেন।” অপর এক বর্ণনায় বর্ধিত আছে, “এরপর তাকে আগুনে পোড়ানো হবে”। অন্য এক বর্ণনায় আছে, “তাকে লাঞ্ছনার পোশাক পরানো হবে”।[সুনানে আবু দাউদ (৪০২৯), সুনানে ইবনে মাজাহ (৩৬০৬) ও (৩৬০৭), শাইখ আলবানী ‘সহিহুত তারগীব গ্রন্থে (২০৮৯) হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন।]

প্রশ্নকারী ভাই এ ওয়েব সাইটের ‘পোশাক’ অধ্যায় দেখতে পারেন; সেখানে এ বিষয়ে আরও জ্ঞান রয়েছে।

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব