শুক্রবার 10 শাওয়াল 1445 - 19 এপ্রিল 2024
বাংলা

পাশ্চাত্যে সন্তানদের রক্ষা করা ও তাদের চিন্তাধারার হেফাযত করা

প্রশ্ন

প্রশ্ন: আমরা পাশ্চাত্যের মুসলমানেরা আমাদের সন্তানদেরকে পাশ্চাত্য সমাজের সংস্কৃতিতে হারিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে চরম বেগ পাচ্ছি। আমরা এমন কিছু কার্যকরী পদক্ষেপের পরামর্শ চাচ্ছি যেগুলোর মাধ্যমে আমরা আমাদের সন্তানদেরকে ধরে রাখতে পারব। আল্লাহ্‌ আপনাদেরকে উত্তম প্রতিদান দিন।

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

আলহামদুলিল্লাহ।

অমুসলিম দেশে মুসলিম পরিবারের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য ঘরের ভেতরে ও বাইরে বেশ কিছু শর্ত পূর্ণ করা উচিত:

ক. ঘরের ভেতরে:

১। পিতাদের কতর্ব্য সন্তানদেরকে সাথে নিয়ে মসজিদে গিয়ে নামায পড়া। যদি নিকটে কোন মসজিদ না থাকেতাহলে তাদের নিয়ে একত্রে বাসায় জামাতে নামায আদায় করা।

২। প্রতিদিন তাদের কুরআন তেলাওয়াত করা ও তেলাওয়াত শ্রবণ করা।

৩। খাবারের জন্য তারা প্রত্যেকে একে অপরের সাথে একত্রিত হওয়া।

৪। যতদূর সম্ভব আরবী ভাষায় কথা বলা।

৫। তাদের উচিত পারিবারিক ও সামাজিক আদবগুলো মেনে চলা; কুরআন শরিফে রাব্বুল আলামীন যে আদবগুলো উল্লেখ করেছেন। যেমন- সূরা নূরে এমন কিছু আদবের উল্লেখ রয়েছে।

৬। তাদের উচিত হবে না, তাদের নিজেদের জন্যে কিংবা তাদের সন্তানদেরকে অশ্লীল ফিল্ম দেখার অনুমতি দেয়া।

৭। সন্তানদের উচিত হবে, যথাসম্ভব দীর্ঘ সময় বাসার মধ্যে কাটানো; যাতে করে বাহিরের খারাপ পরিবেশ থেকে তাদেরকে রক্ষা করা যায় এবং ঘরের বাইরে ঘুমানো থেকে তাদেরকে তীব্রভাবে বারণ করতে হবে।

৮। সন্তানদেরকে দূরবর্তী কোন ইউনিভার্সিটি না পড়ানো; যাতে করে তারা ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে থাকতে বাধ্য হয়। তা না হলে আমরা আমাদের সন্তানদেরকে হারাব এবং অচিরেই তারা কাফের সমাজে হারিয়ে যাবে।

৯। হালাল খাবার গ্রহণের ব্যাপারে পূর্ণ সচেতন থাকতে হবে। পিতামাতা কোন ধরণের হারাম জিনিস গ্রহণ করবেন না; যেমন সিগারেট, মেরিজুয়ানা ইত্যাদি যেগুলো পাশ্চাত্যে ব্যাপকভাবে সয়লাভ হয়ে আছে।

খ. ঘরের বাহিরে:

১। শিশুদেরকে শিশুশ্রেণী থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত ইসলামিক স্কুলে পাঠানো কর্তব্য।

২। সাধ্যানুযায়ী তাদেরকে মসজিদে পাঠানো কর্তব্য; জুমার নামায, জামাতে নামায, ইলমী মজলিস ও ওয়াজের মজলিস ইত্যাদিতে হাযির হওয়ার জন্য।

৩। শিশু ও যুবকদের জন্য শিক্ষণীয় ও শরীর চর্চার বিভিন্ন কর্মসূচী থাকা বাঞ্ছনীয়; যে কর্মসূচীগুলো মুসলমানদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে।

৪। শিক্ষামূলক ক্যাম্পিং করা; যেগুলোতে গোটা পরিবারের সবাই অংশ গ্রহণ করতে পারবে।

৫। পিতামাতা তাদের সন্তানদেরকে সাথে নিয়ে পবিত্র ভূমিতে হজ্জ ও উমরা আদায় করতে ভ্রমণ করা।

৬। সাধারণ ভাষায় ইসলাম সম্পর্কে কথা বলতে সন্তানদেরকে অভ্যস্ত করে তোলা; যে ভাষা বড় ছোট, মুসলিম-অমুসলিম সবাই বুঝতে পারবে।

৭। সন্তানদেরকে কুরআন শরীফ মুখস্ত করার প্রশিক্ষণ দেয়া। সম্ভব হলে তাদের কাউকে কাউকে ইলমে দ্বীন হাছিলের জন্য কোন আরব দেশে পাঠানো। এরপর তারা দ্বীনি ইলম, দ্বীনদারি ও কুরআনের ভাষা জ্ঞানে সুসজ্জিত হয়ে দাঈ হয়ে নিজ দেশে ফিরে আসবে।

৮। কিছু কিছু ছেলেকে জুমার খোতবাদান ও ইমামতি প্রশিক্ষণ দেয়া; যাতে করে অনাগত প্রজন্মের নেতৃত্ব দিতে পারে।

৯। ছেলেদেরকে অবিলম্বে বিয়ে করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা; যাতে করে আমরা তাদের দ্বীন ও দুনিয়া রক্ষা করতে পারি।

১০। অবশ্যই তাদেরকে মুসলিম মেয়ে এবং চারিত্রিক সৌন্দর্য ও দ্বীনদারির জন্য প্রসিদ্ধ ফ্যামিলিগুলোতে বিয়ে করার প্রতি উৎসাহিত করতে হবে।

১১। কমিউনিটি প্রধান কিংবা ইসলামিক সেন্টারের ইমাম বা খতিবের শরণাপন্ন হয়ে পারিবারিক সমস্যাগুলো নিরসন করা।

১২। নাচ-গানের অনুষ্ঠান, পাপে ভরপুর বিভিন্ন মেলা, অমুসলিমদের উৎসবাদি ইত্যাদিতে না যাওয়া এবং খ্রিস্টান স্কুলে অধ্যয়নরত ছাত্রদেরকে রবিবারে গির্জায় যেতে খুব কৌশলে বারণ করা।

আল্লাহ্‌ই তাওফিকদাতা ও সরল পথের দিশারী।

সূত্র: শাইখ মুহাম্মদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ