রবিবার 21 জুমাদাল ছানী 1446 - 22 ডিসেম্বর 2024
বাংলা

কাফের শাসকের হাতে বাইআত করা কি জায়েয?

82681

প্রকাশকাল : 24-11-2015

পঠিত : 6427

প্রশ্ন

প্রশ্ন: কোন কাফের শাসকের হাতে বাইআত করা কি জায়েয?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

আলহামদুলিল্লাহ।

বাইআত হচ্ছে- আনুগত্য করার প্রতিশ্রুতি। এটি বাইআতকারী ও বাইআতগ্রহণকারীর মধ্যে আইনানুগ চুক্তি। বাইআতগ্রহণকারী হচ্ছে- আমীর কিংবা খলিফা।

আহলে হিল্ল ওয়া আকদ কর্তৃক খলিফা মনোনীত করার মাধ্যমেই বাইআত সংঘটিত হয়; আহলে হিল্ল ওয়া আকদ বলা হয় ঐ সমস্ত ব্যক্তিবর্গকে যাদের মধ্যে আমানতদারিতা ও নীতিনির্ধারণের যোগ্যতা রয়েছে।

‘আল-মাওসুআ আল-ফিকহিয়্যা’ গ্রন্থে (৯/২৭৪) এসেছে-

বাইআতের পারিভাষিক সংজ্ঞায় ইবনে খালদুন তাঁর ‘মুকাদ্দিমা’ গ্রন্থে বলেন: আনুগত্যের প্রতিশ্রুতি গ্রহণ; যেন বাইআতকারী আমীরের সাথে এ মর্মে চুক্তিবদ্ধ হচ্ছেন যে, তার নিজের ব্যাপারে ও মুসলমানদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেয়ার অধিকার আমীরকে প্রদান করা হল। এ ব্যাপারে তার সাথে দ্বন্দ করবে না। এমনকি সুখ-দুঃখ সর্বাবস্থায় আমীর কর্তৃক যে দায়িত্ব প্রদান করা হয় সেক্ষেত্রে তার আনুগত্য করবে। লোকেরা যখন আমীরের হাতে বাইআত করত: তখন তারা আমীরের হাতে হাত রাখত। তাই এটি যেন বিক্রেতা ও ক্রেতার চুক্তির মত। হাতে হাত রেখে মুসাফাহা এর মাধ্যমে বাইআত সংঘটিত হয়।[সমাপ্ত]

উল্লেখিত গ্রন্থে (৯/২৭৮) আরও এসেছে:

আহলে হিল্ল ওয়া আকদ কর্তৃক ইমাম (রাষ্ট্রপ্রধান) মনোনীত করা ও তাদের বাইআতের মাধ্যমেই তাঁর ইমামত ও খিলাফতের বাইআত সংঘটিত হয়। আহলে হিল্ল ওয়া আকদ হচ্ছে- আলেম শ্রেণী ও নীতিনির্ধারক শ্রেণী। যাদের মাঝে ইলমের সাথে আমানতদারিতা, ন্যায়পরায়নতা ও সিদ্ধান্ত দেয়ার যোগ্যতা রয়েছে।[সমাপ্ত]

আহলে হিল্ল ওয়া আকদ এর সদস্যদের মধ্যে যেমন কিছু গুণাবলি থাকা শর্ত ঠিক তেমনি বাইআত গ্রহণকারী খলিফার মধ্যেও কিছু গুণাবলি থাকা শর্ত। এর মধ্যে কিছু গুণাবলি নিয়ে মতভেদ আছে; আর কিছু গুণাবলি সর্বসম্মত। খলিফা মুসলিম হতে হবে এ ব্যাপারে আলেমদের কারো মাঝে কোন দ্বিমত নেই। কারণ বাইআত গ্রহণ করার দাবী হচ্ছে- আল্লাহর আইন বাস্তবায়ন করা, দণ্ডবিধি কায়েম করা, রাষ্ট্রের সীমান্ত সংরক্ষণ করা। তাই একজন কাফের কিভাবে আল্লাহর আইন কায়েম করবে এবং এ কাজগুলো বাস্তবায়ন করবে?! বরঞ্চ যে খলিফা মুসলিম ছিল; কিন্তু সে কাফের হয়ে গেছে তাহলে তার কুফরীর কারণে তাকে পদচ্যুত করা হবে।

ইবনে হাজম (রহঃ) খলিফা হওয়ার শর্তগুলো উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন:

মুসলিম হওয়া। কারণ আল্লাহ তাআলা বলেন: “আল্লাহ কখনইমুসলিমদের বিরুদ্ধে কাফেরদের জন্য কোন পথ রাখবেননা।”।[সূরা নিসা, আয়াত: ১৪১] খিলাফত হচ্ছে- সবচেয়ে বড় পথ। এছাড়াও আল্লাহ আহলে কিতাবদেরকে ছোট করে রাখার এবং তাদের নিকট থেকে জিযিয়া আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন।[সমাপ্ত; আল-ফাসলু ফিল মিলাল ওয়াল আহওয়া ওয়ান নিহাল (৪/১২৮)]

ইমাম নববী বলেন:

কাযী বলেন: আলেমগণের ইজমা অনুযায়ী কোন কাফেরের ইমামত ও খিলাফত সংঘটিত হবে না। যদি খলিফার মধ্যে নতুনভাবে কুফরী প্রবেশ করে তাহলে তাকে পদচ্যুত করা হবে।[সমাপ্ত; শারহু মুসলিম (১২/২২৯)]

আল-মাওসুআ আল-ফিকহিয়্যা (৬/২১৮) তে এসেছে:

ফিকাহবিদগণ খলিফা হওয়ার জন্য কতগুলো শর্ত করে থাকেন। এর মধ্যে কিছু শর্ত আছে সর্বসম্মত; আর কিছু শর্ত নিয়ে মতভেদ আছে। খলিফা হওয়ার জন্য সর্বসম্মত শর্তের মধ্যে রয়েছে:

১. ইসলাম। এটি সাক্ষ্য গ্রহণ করা ও কারো অভিভাবকত্ব গ্রহণ করার ক্ষেত্রেও শর্ত। যে কাজগুলো খিলাফতের চেয়ে অনেক কম গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ তাআলা বলেন: “আল্লাহ কখনইমুসলিমদের বিরুদ্ধে কাফেরদের জন্য কোন পথ রাখবেননা।”।[সূরা নিসা, আয়াত: ১৪১] যেমনটি ইবনে হাজম বলেছেন: ইমামত বা খিলাফত হচ্ছে- সবচেয়ে বড় পথ এবং যাতে করে মুসলিম খলিফা মুসলমানদের সুবিধাগুলোকে অগ্রাধিকার দিতে পারে।[সমাপ্ত]

উপরোক্ত আলোচনার ভিত্তিতে: কাফের শাসকের হাতে বাইআত করা নাজায়েয।

আল্লাহই ভাল জানেন।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব