সোমবার 4 রবীউছ ছানী 1446 - 7 অক্টোবর 2024
বাংলা

যে ব্যক্তি এমন কোন গুদামে চাকুরী করেন যেখানে কোন কোন সময় তাকে শূকরের গোশত ট্রাক বোঝাই করতে হয়

85191

প্রকাশকাল : 09-03-2015

পঠিত : 12925

প্রশ্ন

প্রশ্ন: আমি একজন মুসলিম যুবক। পাশ্চাত্যের একটি দেশে মার্কেট ও দোকানে খাদ্য সরবরাহকারী কোম্পানির গুদামে চাকুরি করি। আমাদের কাজ হলো- খাদ্যদ্রব্য একত্রিত করে মার্কেটে নেয়ার জন্য ট্রাকে বোঝাই করা। আমরা যেসব খাদ্যদ্রব্য বোঝাই করি এর মধ্যে থাকে বিভিন্ন শাক-সবজি, ফলমূল, দুধ ও মাংস...। অনেক সময় এমন গ্রাহক আসে যে শূকর অথবা শূকরজাত কোনো দ্রব্য চেয়ে বসে। তখন আমরা এগুলো একত্রিত করতে ও ট্রাকে উঠাতে বাধ্য হই। আমার প্রশ্ন হল: শরিয়তের দৃষ্টিতে এ চাকুরী করার বিধান কি? উল্লেখ্য, আর যে চাকুরীগুলোর সুযোগ পাওয়া যায় সেগুলো রেস্টুরেন্ট ও ক্যাফেতে। সেখানেও শূকরের গোশত পরিবেশন করতে হয়।

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.


আলহামদুলিল্লাহ।
শূকরের গোশত বিক্রি করা, অর্থের বিনিময়ে বহন করা অথবা এ ক্ষেত্রে কোন প্রকার সহযোগিতা করা হারাম। দলিল হচ্ছে-রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ ও তাঁর রাসূল মদ, মৃতজন্তু, শূকর ও মূর্তি বিক্রি করা হারাম করেছেন।”[সহিহ বুখারী (২০৮২) ও সহিহ মুসলিম (২৯৬০)] আল্লাহর বাণী: “তোমরাসৎকর্ম ও তাকওয়ার ক্ষেত্রেএকে অপরকে সহযোগিতা কর। পাপাচার ও সীমালংঘনে পরস্পরকে সহযোগিতা করো না।”[সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ২]

অনুরূপভাবে যে কোন বিষয়ের ‘হারাম হওয়া’ সাব্যস্ত হলে সে বিষয়ে সহযোগিতা করাও হারাম। যেমন- কোন রেস্টুরেন্টে মদ, মৃতজন্তু, বন্য গাধার গোশত ইত্যাদি পরিবেশন করার কাজ করা। আল্লাহ তাআলা বলেন: “তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত প্রাণী, রক্ত ও শূকরের গোশত এবং যা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে যবেহ করা হয়েছে; শ্বাসরোধ হয়ে মরা জন্তু, প্রহারে মরা জন্তু, উঁচু থেকে পড়ে মরা জন্তু, অন্য প্রাণীর শিঙের আঘাতে মরা জন্তু এবং যে জন্তুকে হিংস্র প্রাণী খেয়েছে; তবে খেলেও যে প্রাণীকে যবেহ করা গেছে সেটা ছাড়া।” [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৩]

প্রতিটি মুসলমানের কর্তব্য হল সর্বদা আল্লাহকে ভয় করা। হালাল উপার্জনের মাধ্যম অন্বেষণ করা, হারাম মাধ্যম বর্জন করা। কারণ হারাম উপার্জন দিয়ে পরিপুষ্ট দেহ জাহান্নামের আগুনে দগ্ধ হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে শরীর হারাম উপার্জনে গঠিত সে শরীর জাহান্নামের আগুনে দগ্ধ হওয়া যুক্তিযুক্ত।”[ তাবারানী ও আবু নুআইম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং আলবানী সহিহ আল-জামে (৪৫১৯) গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]

সৌদি আরবের ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটিকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, যে সকল হোটেলে শূকরের গোশত, মদ পরিবেশন করা হয় সে হোটেলে চাকুরি করা জায়েয কি না? তারা উত্তরে বলেছেন, এ সকল হোটেলে কাজ করা হারাম। সেখানে কাজ করে যা উপার্জন করা সেটাও হারাম। কেননা এটা অবৈধ বা হারাম কাজে সহযোগিতা। হারাম কাজে সহযোগিতা করা আল্লাহ নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন, “মন্দকর্ম ও সীমালঙ্ঘনে পরস্পরের সহযোগিতা করো না।”[সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ২]

তাই আমরা আপনাকে উপদেশ দিচ্ছি- আপনি এ জাতীয় হোটেলে চাকুরি করা পরিহার করুন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যা হারাম ও অবৈধ বলে ঘোষণা করেছেন তা করতে কাউকে সাহায্য সহযোগিতা করবেন না।[ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটির ফতোয়াসমগ্র (১৩/৪৯)]

মোটকথা হল, আমি এই গুদামে কাজ করতে পারেন তবে সেখানে হারাম বস্তুসামগ্রী বহন, সংরক্ষণ, পরিবেশনের কাজ করা জায়েয হবে না।

আল্লাহই ভাল জানেন।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব