বৃহস্পতিবার 20 জুমাদাল আউওয়াল 1446 - 21 নভেম্বর 2024
বাংলা

বাধ্যগত শুচিবায়ু (OCD) কি এমন কোন দোষ যে, বিয়ের পাত্রকে জানানো আবশ্যক?

প্রশ্ন

যে মেয়ে বাধ্যগত শুচিবায়ু কিংবা অন্য কোন শুচিবায়ুতে আক্রান্ত; কিন্তু সে কাউকে বিষয়টি না জানায়নি। আল্লাহ্‌ ছাড়া অন্য কেউ তার মনের বিষয়টি জানে না। সে প্রাণান্তকরভাবে এই কুমন্ত্রণাকে রোধ করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এখন যদি কোন ব্যক্তি তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় সে কি তাকে বিষয়টি জানাবে; নাকি গোপন রাখবে? বিশেষতঃ তাকে জানালে এটি তার আরোগ্য লাভের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হতে পারে। কেননা এটি আরো বাড়বে...। ফাযিলাতুশ শাইখ, আপনি এ মেয়েকে কী উপদেশ দিবেন? কোন কোন দোষগুলো পাত্রের জানা আবশ্যকীয়?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

এক:বাধ্যগত শুচিবায়ু ও অন্যান্য শুচিবায়ুর চিকিৎসা হচ্ছে যিকির ও ইবাদতের মাধ্যমে এবং শুচিবায়ুকে ভুলে থাকা ও গুরুত্ব না দেয়ার মাধ্যমে। ক্ষেত্র বিশেষে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।

ফিকাহবিদদের দুটো অভিমতের মধ্যে অগ্রগণ্য অভিমত হচ্ছে প্রত্যেক এমন দোষ যা বিয়ের উদ্দেশ্যকে নষ্ট করে এবং স্বামী-স্ত্রীর একে অপরের মধ্যে দূরত্ব তৈরী করে; সেই দোষ জানানো আবশ্যক। সেই দোষ গোপন রাখার পর প্রকাশ পেলে বিয়ে ভেঙ্গে দেয়ার এখতিয়ার সাব্যস্ত হয়।

ইবনুল কাইয়্যেম (রহঃ) বলেন: “কিয়াস হচ্ছে প্রত্যেক এমন দোষ যা স্বামী-স্ত্রীর একজনকে অপরজন থেকে দূরে সরিয়ে রাখে ও বিয়ের উদ্দেশ্য তথা দয়া ও সহমর্মিতা অর্জিত হতে দেয় না সেটি (বিয়ে বিচ্ছেদের) এখতিয়ারকে আবশ্যক করে”।[যাদুল মাআদ (৫/১৬৬)]

তিনি আরও বলেন: “যে ব্যক্তি সাহাবায়ে কেরাম ও সালাফদের ফতোয়াগুলো ভেবে দেখবেন তিনি পাবেন যে তারা বিয়ে প্রত্যাহার করাকে কোন কোন দোষ বাদ দিয়ে কোন কোন দোষের সাথে বিশিষ্ট করেননি।”

তিনি আরও বলেন: “যদি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পণ্যের দোষ গোপন করাকে বিক্রেতার জন্য হারাম করে থাকেন এবং যে ব্যক্তি কোন দোষ জেনে থাকেন সেটা ক্রেতার কাছে গোপন করাকে হারাম করে থাকেন তাহলে বিয়ের ক্ষেত্রে দোষ গোপন করার বিষয়টি কেমন হতে পারে! যখন ফাতেমা বিনতে কাইস (রাঃ) মুয়াবিয়া (রাঃ) কিংবা আবুল জাহমের (রাঃ) সাথে বিয়ের ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে পরামর্শ চান তখন তিনি বলেন: ‘মুয়াবিয়া কপর্দকহীন; তার কোন সম্পদ নাই। আর আবু জাহম তার কাঁধ থেকে লাঠি নামায় না।’ এর থেকে জানা গেল যে, বিয়ের ক্ষেত্রে দোষ প্রকাশ করা অধিক যুক্তিযুক্ত ও অধিকতর আবশ্যকীয়। সুতরাং কিভাবে দোষ গোপন করা, কলাকৌশল করা ও নিষিদ্ধ ধোকা দেয়া বিয়ে অনিবার্য হওয়ার কারণ হবে এবং এই দোষকে তার সঙ্গির কাঁধে অনিবার্য শিকল হিসেবে ঝুলিয়ে দেয়া হবে; অথচ সে এই দোষের প্রতি চরমভাবে বীতশ্রদ্ধ।”[যাদুল মাআদ (৫/১৬৮) থেকে সমাপ্ত]

পূর্বোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে যে নারী শুচিবায়ুগ্রস্ত তার অবস্থা দেখতে হবে: যদি এই শুচিবায়ু তার স্বামীর স্বার্থসমূহ রক্ষায় প্রতিবন্ধক হয় এবং তার সাথে জীবনযাপন করা থেকে স্বামীকে বীতশ্রদ্ধ করে তাহলে এ ব্যাপারে স্বামীকে অবহিত করা আবশ্যক। এই জানানোটা তাকে না-জানিয়ে ধোকা দেয়ার চেয়ে উত্তম। পরবর্তীতে হতে পারে স্বামী বিচ্ছেদ করতে যাবে কিংবা দোষটি গোপন করার কারণে স্ত্রীকে অপছন্দ করবে।

আর যদি তার শুচিবায়ু তার স্বামীর সাথে সংসার করতে কোন প্রভাব ফেলার পর্যায়ে না হয় এবং তার প্রতি স্বামীকে বীতশ্রদ্ধ করার পর্যায়ে না হয় তাহলে এটি কোন দোষ নয় এবং পাত্রীর এ অবস্থা সম্পর্কে পাত্রকে অবহিত করা অনিবার্য নয়।

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব