বৃহস্পতিবার 18 রমজান 1445 - 28 মার্চ 2024
বাংলা

শরিয়তসম্মত হিজাবের বৈশিষ্ট্যাবলি

প্রশ্ন

 

ইসলামী  হিজাবের যে বৈশিষ্ট্যগুলো থাকা অপরিহার্য সেগুলো কি কি? কারণ  হিজাবের হরেক রকম মডেল রয়েছে। ডেনমার্কের নাগরিক আমার এক বান্ধবী আছে। যিনি কিছুদিন পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করেছেন। (আলহামদু লিল্লাহ) ইসলাম গ্রহণ করে তিনি খুশি। তিনি  হিজাব পরতে চান।
আশা করছি, আপনি আমাদেরকে জানাবেন যে, ‘ হিজাব সর্বাঙ্গ-আচ্ছাদনকারী লম্বা পোশাক (জিলবাব) হওয়া আবশ্যক’ এ বিষয়টি কোথায় উদ্ধৃত আছে? তিনি আপনার জবাবের খুবই মুখাপেক্ষী।

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

শাইখ আলবানী (রহঃ) বলেন:

হিজাবের শর্তাবলি হচ্ছে:

এক: সমস্ত শরীর ঢেকে রাখা; শুধু যে অংশটুকুর ব্যাপারে ব্যতিক্রম বিধান এসেছে সেইটুকু ছাড়া:

এই শর্তটি আল্লাহ্‌ তাআলার এ বাণীতে রয়েছে: “হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মুমিনদের নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের জিলবাব (সর্বাঙ্গ আচ্ছাদনকারী পোশাক) এর একটা অংশ নিজেদের উপর ঝুলিয়ে দেয় (যাতে করে গোটা দেহ ঢেকে যায় একটি চোখ বা দুইটি চোখ ছাড়া)। এতে করে তাদেরকে (স্বাধীন নারী হিসেবে) চেনা সহজতর হবে, ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আর আল্লাহ্‌ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”[সূরা আহযাব, আয়াত: ৫৯]

প্রথম আয়াতে স্পষ্টভাবে সকল সাজ-সজ্জা (তথা সাজগোজের অঙ্গসমূহ) ঢেকে রাখা ও পর-পুরুষের সামনে সে সবের কোন কিছু প্রকাশ না-করা আবশ্যকীয় হওয়ার কথা উল্লেখ আছে। তবে, অনিচ্ছাকৃতভাবে যা প্রকাশ হয়ে পড়ে সেটার কারণে তারা গুনাহগার হবে না; যদি তারা অনতিবিলম্বে সেটা ঢেকে নেয়।

ইবনে কাছির (রহঃ) তাঁর তাফসিরে বলেন:

অর্থাৎ পর-পুরুষকে সাজ-সজ্জার কোন কিছু দেখাবে না। তবে, যা লুকিয়ে রাখা সম্ভবপর নয় সেটা ছাড়া। ইবনে মাসউদ বলেন: যেমন চাদর ও কাপড়-চোপড়। অর্থাৎ আরব নারীরা যে পদ্ধতিতে মাথা-বন্ধনী ব্যবহার করত; যা দিয়ে নারী তার পোশাককে ঢেকে রাখত। পোশাকের নীচ দিয়ে যে অংশটুকু প্রকাশ হয়ে পড়ে তাতে কোন অসুবিধা নেই। কেননা সেটা ঢেকে রাখা সম্ভবপর নয়।

দুই: পোশাকটি নিজে কারুকাজ খচিত না হওয়া:

যেহেতু আল্লাহ্‌ বলেছেন: “তারা যেন তাদের সজ্জা প্রকাশ না করে”। এ বাণীটি এর ব্যাপকতা দিয়ে বাহ্যিক পোশাককেও অন্তর্ভুক্ত করে; যদি সে পোশাক নারীর দিকে পুরুষের দৃষ্টি আকর্ষক নকশাবিশিষ্ট হয়। এর সপক্ষে প্রমাণ হচ্ছে আল্লাহ্‌র বাণী: “আর তোমরা নিজেদের ঘরে অবস্থান কর। প্রাচীন জাহেলী যুগের মত নিজেদের সৌন্দর্য প্রদর্শন করে বেড়িও না।”[সূরা আহযাব, আয়াত: ৩৩] এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “তিন ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করো না (অর্থাৎ তাদের পরিণতি জিজ্ঞাসার যোগ্য নয়): যে ব্যক্তি (মুসলমানদের) দল ত্যাগ করে ইমাম বা রাষ্ট্রপ্রধানের অবাধ্য অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে। যে দাসী বা দাস পালিয়ে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। যে নারীর স্বামী তার পার্থিব জীবনোপকরণের ব্যবস্থা করে দিয়ে সফরে বেরিয়েছে, সে চলে যাওয়ার পর স্ত্রী নিজের রূপ-সৌন্দর্য প্রদর্শন করে বেড়িয়েছে; এদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করো না।”[মুসতাদরাকে হাকেম (১/১১৯), মুসনাদে আহমাদ (৬/১৯) গ্রন্থে ফুযালা বিনতে উবাইদ এর হাদিস হিসেবে বর্ণিত হয়েছে, সনদ সহিহ এবং হাদিসটি ‘আল-আদাবুল মুফরাদ’ গ্রন্থেও রয়েছে]

তিন: পোশাকের বুনন ঘন হওয়া; পোশাক স্বচ্ছ না হওয়া:

কারণ কাপড়ের বুনন ঘন না হলে এর দ্বারা আচ্ছাদন সাধিত হয় না। বরং স্বচ্ছ পোষাক নারীকে আরও আকর্ষণীয় ও সুন্দর করে তোলে। এ প্রসঙ্গে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “আমার উম্মতের শেষ যামানায় এমন কিছু নারী আসবে যারা পোশাক পরা সত্ত্বেও উলঙ্গ। তাদের মাথার উপরে থাকবে খোরাসানি (লম্বা-গলা বিশিষ্ট) উটের কুঁজের মত (অর্থাৎ তারা নিজেদের চুলের সাথে অন্য কাপড় বা পাগড়ী বেঁধে মাথাকে বড় করে ফুটাবে)। তোমরা তাদেরকে লানত কর। কেননা তারা লানতের উপযুক্ত।” অন্য এক রেওয়ায়েতে বর্ধিত অংশ হচ্ছে: “তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। জান্নাতের সুবাসও পাবে না; যদিও জান্নাতের সুবাস এত এত দূর থেকে পাওয়া যাবে।”[সহিহ মুসলিমে আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদিস]

ইবনে আব্দুল বার্‌র বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বুঝাতে চাচ্ছেন, যে সকল নারী এমন হালকা কিছু পরিধান করে যা শরীরকে আচ্ছাদিত না করে ফুটিয়ে তোলে; এমন নারীরা নামেমাত্র পোশাক পরিহিতা, প্রকৃতপক্ষে এরা উলঙ্গ।[সুয়ুতি ‘তানওয়িরুল হাওয়ালিক’ গ্রন্থে (৩/১০৩) ইবনে আব্দুল বার্‌র থেকে উদ্ধৃত করেছেন]

চার: পোশাকটি ঢিলেঢালা হওয়া, শরীরের কোন কিছু ফুটিয়ে তোলে এমন আঁটসাঁট না হওয়া:

কারণ পোশাক পরার উদ্দেশ্য হচ্ছে- ফিতনা (আকর্ষণ) রোধ করা। ঢিলেঢালা পোশাক ছাড়া এটি রোধ করা সম্ভব নয়। আঁটসাঁট পোশাক যদিও চামড়ার রঙ ঢেকে রাখে, কিন্তু এটি নারী দেহের কিংবা দেহের অংশ বিশেষের গঠন-প্রকৃতি ফুটিয়ে তোলে এবং পুরুষের চোখে চিত্রিত করে। এতেই রয়েছে অনৈতিকতা ও অনৈতিকতার দিকে আহ্বান; যা কারো কাছে অস্পষ্ট নয়। তাই পোশাক প্রশস্ত হওয়া আবশ্যকীয়। উসামা বিন যায়েদ (রাঃ) বলেন: রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে একটি মোটা মিশরীয় পোশাক উপহার দিলেন; যে পোশাকটি দিহয়া-কালবী তাঁকে উপহার দিয়েছিল। সে পোশাকটি আমি আমার স্ত্রীকে পরতে দিলাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেন: তুমি সেই মিশরী পোশাকটি পরছ না কেন? আমি বললাম: আমি আমার স্ত্রীকে দিয়েছি। তিনি বললেন: তাকে আদেশ দিবে যাতে করে এই পোশাকের নীচে একটি শেমিজ পরে। কেননা আমার আশংকা হচ্ছে­– এই পোশাকটি তার হাড্ডির আকৃতি ফুটিয়ে তুলবে।”[হাদিসটি আল-যিয়া আল-মাকদিসি ‘আল-আহাদিস আল-মুখতারা’ (১/৪৪১) গ্রন্থে এবং ইমাম আহমাদ ও বাইহাকী হাসান সনদে বর্ণনা করেছেন]।

পাঁচ: পোশাকটি সুগন্ধি মাখানো কিংবা ধূপায়িত না হওয়া:

কারণ অনেক হাদিসে, নারীরা যখন ঘর থেকে বের হয় তখন সুগন্ধি লাগানো থেকে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। এখানে আমরা সহিহ সনদে বর্ণিত হয়েছে এমন কিছু হাদিস উল্লেখ করব:

১. আবু মুসা আল-আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে নারী সুগন্ধি মেখে (পুরুষ) জনসমষ্টির পাশ দিয়ে গমন করে যাতে করে তার সুগন্ধি তাদের নাকে লাগে সে নারী ব্যভিচারী।”

২. যয়নব আল-সাকাফিয়্যা থেকে বর্ণিত আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “যদি তোমাদের কেউ (সম্বোধন নারীকে) মসজিদে আসতে চায় সে যেন সুগন্ধি স্পর্শ না করে”।

৩. আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে নারী ধূপ দ্বারা সুবাসিত হয়েছে সে যেন আমাদের সাথে শেষ-এশার নামাযে হাযির না হয় (উদ্দেশ্য হচ্ছে- এশার নামায; যেহেতু মাগরিবের নামাযকেও ‘এশা’ বলা হয়, সেজন্য শেষ-এশা বলেছেন)”।

৪. আবু হুরায়রা (রাঃ) সম্পর্কে মূসা বিন ইয়াসার বর্ণনা করেন যে: এক নারী তাঁর পাশ দিয়ে যাচ্ছিল যার গায়ে থেকে তীব্র সুঘ্রাণ আসছিল। তখন তিনি বললেন: ওহে পরাক্রমশালীর বান্দী, তুমি মসজিদে যেতে চাও? মহিলাটি বলল: হ্যাঁ। তিনি বললেন: মসজিদে যাওয়ার জন্যই সুগন্ধি মেখেছ? মহিলাটি বলল: হ্যাঁ। তিনি বললেন: তুমি ফিরে যাও এবং গোসল কর। কারণ আমি রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি: “যে নারী তীব্র সুঘ্রাণ নিয়ে মসজিদে আসবে আল্লাহ্‌ তার নামায কবুল করবেন না; যতক্ষণ না সে নারী বাড়ীতে ফিরে গিয়ে গোসল করে আসে।”

এ হাদিসগুলো থেকে আমাদের বক্তব্যের পক্ষে প্রমাণ পেশ করার প্রক্রিয়া হচ্ছে– এ উক্তিগুলোর ব্যাপকতা। যেহেতু ‘সুগন্ধি মাখানো’ বা ‘সুগন্ধি লাগানো’ কথাটি শরীরে সুগন্ধি লাগানো এবং জামা-কাপড়ে সুগন্ধি লাগানো উভয় ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতে পারে। বিশেষতঃ তৃতীয় হাদিসে ধূপধুনার কথা বলা হয়েছে। ধূপধুনা দেহের চেয়ে পোশাকে বেশি দেয়া হয় এবং এটি পোশাকের জন্য খাস।

এই নিষেধাজ্ঞার কারণ সুস্পষ্ট। যেহেতু সুগন্ধি যৌন কামনাকে চাঙ্গা করে তোলে। আলেমগণ সুন্দর পোশাক, চোখে পড়ে এমন অলংকার, উৎকট সাজগোজ এবং পুরুষদের সাথে অবাধ-মেলামেশাকেও এর অন্তর্ভুক্ত করেছেন।[দেখুন: ফাতহুল বারী (২/২৭৯)]

ইবনে দাকীকুল ঈদ বলেন: “এ হাদিস থেকে মসজিদে গমনেচ্ছু নারীর জন্য সুগন্ধি ব্যবহার করা হারাম জানা যায়। যেহেতু সুগন্ধি পুরুষের যৌন কামনাকে চাঙ্গা করে।[আবু হুরায়রা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত প্রথম হাদিসের ব্যাখ্যায় ‘আল-মুনাওয়ি’ তাঁর ‘ফায়যুল কাদির’ গ্রন্থে উদ্ধৃত করেছেন]

ছয়: পুরুষের পোশাকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ না হওয়া:

যেহেতু বেশ কিছু সহিহ হাদিসে পোশাক-আশাকে কিংবা অন্যান্য ক্ষেত্রে পুরুষের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণকারী নারীকে লানত করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা যে হাদিসগুলো জানি সেগুলো থেকে কিছু আপনার কাছে তুলে ধরছি:

১। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: “রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহিলার পোশাক পরিধানকারী পুরুষকে এবং পুরুষের পোশাক পরিধানকারী নারীকে লানত করেছেন।”।

২। আব্দুল্লাহ্‌ বিন আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আমি রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি তিনি বলেন: “যে নারী পুরুষের সাথে সাদৃশ্য ধারণ করে কিংবা যে পুরুষ নারীদের সাথে সাদৃশ্য ধারণ করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়।”

৩. ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারীর রূপ ধারণকারী পুরুষ ও পুরুষের রূপ ধারণকারী নারীদেরকে লানত করেছেন”। তিনি আরও বলেছেন: “তাদেরকে তোমাদের গৃহ থেকে বের করে দাও”। ইবনে আব্বাস আরও বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অমুক অমুককে বের করে দিয়েছেন এবং উমর (রাঃ) অমুক অমুককে বের করে দিয়েছেন। অন্য এক বর্ণনায় এসেছে– “রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারীদের সাথে সাদৃশ্যগ্রহণকারী পুরুষ ও পুরুষদের সাথে সাদৃশ্য-গ্রহণকারী নারীদেরকে লানত করেছেন।”

৪. আব্দুল্লাহ্‌ বিন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “তিন শ্রেণীর লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং কিয়ামতের দিন আল্লাহ্‌ তাদের দিকে তাকাবেন না: পিতামাতার অবাধ্য সন্তান, পুরুষদের সাথে সাদৃশ্য-গ্রহণকারী নারী এবং দাইয়্যুস (ব্যভিচারকে প্রশ্রয় দেয় যে পুরুষ)।”

৫. ইবনে আবু মুলাইকা (তাঁর নাম হচ্ছে আব্দুল্লাহ্‌ বিন উবাইদুল্লাহ্‌) বলেন: আয়েশা (রাঃ) কে বলা হল: কোন নারী কি (পুরুষের) স্যান্ডেল পরতে পারে? তিনি বললেন: “রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুরুষের সাথে সাদৃশ্য-গ্রহণকারী নারীদের উপর লানত করেছেন।”

এই হাদিসগুলোতে নারীদের জন্য পুরুষের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করা এবং পুরুষদের জন্য নারীদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করা হারাম হওয়ার স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে। এই সাদৃশ্য গ্রহণ পোশাক-পরিচ্ছদকে এবং অন্যান্য বিষয়গুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করে; শুধু প্রথম হাদিসটি ছাড়া। সে হাদিসটি এককভাবে পোশাকের ব্যাপারে।

সাত: কাফের নারীদের পোশাকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ না হওয়া:

শরিয়তের প্রতিষ্ঠিত বিধান হচ্ছে– মুসলিম নর-নারীর জন্য কাফেরদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করা নাজায়েয; সেটা তাদের উপাসনার ক্ষেত্রে হোক, কিংবা তাদের উৎসবের ক্ষেত্রে হোক, কিংবা তাদের নিজস্ব পোশাকাদির ক্ষেত্রে হোক। এটি ইসলামী শরিয়তের মহান একটি নীতি। কিন্তু, দুঃখের বিষয় হচ্ছে– অনেক মুসলমান এই নীতিকে লঙ্ঘন করছেন; এমনকি যারা দ্বীন পালনে সচেতন, দাওয়াতী কাজে তৎপর তারাও নিজেদের অজ্ঞতাবশতঃ কিংবা প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, কিংবা সময়ের স্বভাবে গা ভাসিয়ে, কাফের ইউরোপের অনুকরণে এ নীতি লঙ্ঘন করছেন। যার ফলে, এটি মুসলমানদের পিছিয়ে পড়া, দুর্বল হয়ে পড়া, তাদের উপর বিধর্মীদের আধিপত্য অর্জন করা ও উপনিবেশবাদের শিকার হওয়ার অন্যতম একটি কারণ। “নিশ্চয় আল্লাহ্‌ কোন সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা নিজেরা পরিবর্তন করে”[সূরা রাদ, আয়াত: ১১] হায়, তারা যদি বুঝত।

সকলের জানা উচিত, এই গুরুত্বপূর্ণ নীতিটির শুদ্ধতার পক্ষে কুরআন-সুন্নাহর অসংখ্য দলিল রয়েছে। যদিও কুরআনের দলিলগুলো ব্যাখ্যাসাপেক্ষ; কিন্তু সুন্নাহ্‌তে সেগুলোর ব্যাখ্যা রয়েছে, যেভাবে ব্যাখ্যা সর্বদা সুন্নাহ্‌তে এসে থাকে।

আট: পোশাকটি খ্যাতি অর্জনের জন্য না হওয়া:

দলিল হচ্ছে ইবনে উমর (রাঃ) এর হাদিস, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি দুনিয়াতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হওয়ার জন্য পোশাক পরবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ্‌ তাকে লাঞ্ছনার পোশাক পরাবেন, অতঃপর তাকে আগুনে জ্বালাবেন”।[‘হিজাবুল মারআতিল মুসলিমা’ (পৃষ্ঠা ৫৪-৬৭) সংকলিত]

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

সূত্র: শাইখ মুহাম্মদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ