রবিবার 21 জুমাদাল ছানী 1446 - 22 ডিসেম্বর 2024
বাংলা

পিতার ওসিয়ত সন্তানেরা বাস্তবায়ন করেনি

প্রশ্ন

আমার বাবা মারা গেছেন। তিনি ওয়ারিশদের জন্য অনেক সম্পদ রেখে গেছেন; শুধু একটি বাড়ী ছাড়া। এ বাড়ীটি তিনি আল্লাহর ওয়াস্তে ওয়াকফ করা ও এর ভাড়া (সদকায়ে জারিয়া হিসেবে) গরীব ও দরিদ্র মানুষদের জন্য খরচ করার ওসিয়ত করে গেছেন। কিন্তু ওয়ারিশগণ তাঁর ওসিয়তটি পূর্ণ করেনি। বরং ওয়ারিশরা সকলে ছোট ভাইয়ের কাছে তাদের অংশ বিক্রি করে দিয়েছে। বড় ভাই হিসেবে আমি আমার অংশ আল্লাহর ভয়ে তার কাছে বিক্রি করিনি। কিন্তু আমার ছোট ভাই আমাকে প্রচণ্ড চাপ দিচ্ছে যেন আমিও আমার অংশ তার কাছে বিক্রি করে দিই। এখন আমার জন্যে কি আমার অংশ বিক্রি করে সেই অর্থ কোন দাতব্য প্রতিষ্ঠান কিংবা (সদকায়ে জারিয়া হিসেবে) আমার মরহুম পিতার জন্য একটি মসজিদ বানানোর কাজে খরচ করার মাধ্যমে এ সমস্যা নিরসন করা জায়েয হবে?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

এক:

ওসিয়ত করার বিধান কুরআন, হাদিস ও ইজমা দ্বারা সাব্যস্ত। আল্লাহ তাআলা বলেন: “তোমাদের কারো যখন মৃত্যু উপস্থিত হয়, সে যদি কিছু ধন-সম্পদ রেখে যায়, তবে তার জন্য পিতা-মাতা ও নিকটাত্মীয়দের জন্য ইনসাফের সাথে ওসিয়ত করা ফরজ করা হলো; মুত্তাকীদের উপর এটি অত্যাবশ্যক।”[সূরা বাকারা, আয়াত: ১৮০]

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “আল্লাহ তোমাদের মৃত্যুর সময় নিজেদের সম্পদের এক তৃতীয়াংশ তোমাদের উপর দাক্ষিণ্য করেছেন যেন তোমরা এর দ্বারা নেক আমল বাড়াতে পার।”[সুনানে ইবনে মাজাহ, (২৭০৯); আলবানি সহিহ ইবনে মাজাহ গ্রন্থে হাদিসটির সনদকে ‘হাসান’ বলেছেন]

‘ওয়াকফ’ সদকায়ে জারিয়ার একটি প্রকার; যা দিয়ে মানুষ মৃত্যুর পরেও উপকৃত হতে থাকে। যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “মানুষ মরে গেলে তার আমল বন্ধ হয়ে যায়; তবে তিনটি আমল ব্যতীত: সদকায়ে জারিয়া, উপকারী ইলম কিংবা নেক সন্তান; যে তার জন্য দুআ করে।”[সহিহ মুসলিম (১৬৩১)]

সম্পদের এক তৃতীয়াংশের বেশি ওসিয়ত করা জায়েয নেই। দলিল হচ্ছে সাদ বিন আবু ওয়াক্কাসকে উদ্দেশ্য করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাণী; সাদ যখন তার সকল সম্পত্তি দিয়ে ওসিয়ত করতে চাইলেন তখন তিনি তাকে বললেন: “এক তৃতীয়াংশ; এক তৃতীয়াংশ তো অনেক”[সহিহ বুখারী (২৭৪২) ও সহিহ মুসলিম (১৬২৮)]

সুতরাং এ বাড়ীটি যদি পরিত্যক্ত সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশ হয় বা এর চেয়ে কম হয় তাহলে গোটা বাড়ীটি ওয়াকফ সম্পত্তি। আর যদি এক তৃতীয়াংশের বেশি হয় তাহলে সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশ এ বাড়ীর যতটুকু অংশ হয় ততটুকু ওয়াকফ সম্পত্তি।

দুই:

ওয়াকফ সম্পত্তি বিক্রি করা, এর মালিকানা গ্রহণ করা কিংবা জবরদখল করা জায়েয নেই। অনুরূপভাবে মীরাছের সম্পত্তির মধ্যে গণ্য করে ভাগ করে ফেলাও জায়েয নেই।

উমর বিন খাত্তাব (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে এসেছে তিনি যখন খায়বারে তার মালিকানাধীন একটি জমি ওয়াকফ করতে চাইলেন তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন: “এটি বিক্রি করা যাবে না, কাউকে উপহার দেয়া যাবে না, কেউ এর ওয়ারিশ হতে পারবে না...”[সহিহ বুখারী (২৭৬৪) ও সহিহ মুসলিম(১৬৩৩)]

উপরোক্ত আলোচনার ভিত্তিতে আপনার জন্য আপনার ভাইয়ের কাছে এ সম্পত্তি বিক্রিতে সায় দেয়া জায়েয হবে না। বরং এ বাড়ীটির মালিক তো আপনি নন যে, আপনি সেটা বিক্রি করবেন। আর বর্তমানে আপনি যেহেতু তাদের সামনে বাধা সুতরাং কোন অবস্থায় আপনি হার মানবেন না। বরং আপনি অস্বীকার করে যান; এক পর্যায়ে আল্লাহ হয়তো তাকে হেদায়েত করবেন।

আর ইতিপূর্বে আপনার ভাইয়েরা যে তার কাছে বাড়ীটির অংশ বিক্রি করেছে সে লেনদেন সঠিক হয়নি।

তাদের প্রতি আপনার কর্তব্য হচ্ছে- আল্লাহকে ভয় করার উপদেশ দেয়া, আপনার ছোট ভাই থেকে গ্রহণকৃত অর্থ ফিরিয়ে দেয়ার পরামর্শ দেয়া এবং বাড়িটিকে ওয়াকফ হিসেবে ছেড়ে দেয়া যেভাবে আপনাদের পিতা ওসিয়ত করে গেছেন।

তাদেরকে আল্লাহর শাস্তির ভয় দেখান। হারাম সম্পদ ভক্ষণ করার ভয় দেখান। হারাম সম্পদ দিয়ে যে দেহ গঠিত হয় সে দেহ জাহান্নামের আগুনে জ্বলাই উপযুক্ত।

আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেন তাদেরকে হেদায়েত করেন এবং আপনাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ অর্জন করার তাওফিক দেন।

আল্লাহই ভাল জানেন।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব