রবিবার 21 জুমাদাল ছানী 1446 - 22 ডিসেম্বর 2024
বাংলা

কষ্টকর পেশায় যারা কাজ করেন যেমন খনিজ পদার্থ গলানো

প্রশ্ন

যে সব কর্মী কষ্টকর কায়িক পরিশ্রম করেন বিশেষতঃ গ্রীষ্মের মৌসুমে, তাদের ব্যাপারে ইসলামী শরিয়তের হুকুম কি? যেমন- যারা খনিজ পদার্থ গলানোর চুল্লীর সামনে কাজ করেন তাদের জন্য রমজানের রোজা না-রাখা কি জায়েয?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

এটি সবার জানা যে, ইসলাম ধর্মে রমজান মাসে সিয়াম পালন করা প্রত্যেক মুকাল্লাফ (শরয়ি ভারপ্রাপ্ত) ব্যক্তির উপর ফরজ।রোজা ইসলামের অন্যতম একটি স্তম্ভ। তাই প্রত্যেক মুকাল্লাফ ব্যক্তির উচিতআল্লাহর কাছ থেকে সওয়াব পাওয়ার আশা নিয়ে এবং তাঁর শাস্তিকে ভয় করে তিনি যা ফরজ করেছেন তা বাস্তবায়নে তথা সিয়াম পালনে সচেষ্ট হওয়া। তবে দুনিয়াকে একেবারে ভুলে গিয়ে নয়। আবার আখিরাতের উপরে দুনিয়াকে প্রাধান্য দিয়েও নয়।যদি আল্লাহর ফরজকৃত ইবাদতপালন ও দুনিয়ার কর্মের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয় তবে উভয়টার মধ্যে সমন্বয় করা ওয়াজিব; যাতে সে উভয়টাপালন করতে পারে। যেমনটি এই প্রশ্নে উল্লেখিত উদাহরণে রয়েছে। এক্ষেত্রে এ কর্মীরা রাতের বেলায় তাদের দুনিয়াবিকাজ করতে পারেন। তা সম্ভব না হলে রমজান মাসে চাকুরী থেকে ছুটি নিতে পারেন; এমনকি সেটা বেতন ছাড়া হলেও। তাও সম্ভব না হলে অন্য কোন পেশা বেছে নেবেন, যাতে করে উভয় ওয়াজিব সমানভাবে পালন করতে পারেন। কিন্তু দুনিয়াকে আখিরাতের উপর প্রাধান্য দিয়ে নয়। পেশা অনেক এবং অর্থ উপার্জনের উপায়ও বিভিন্ন; এধরনের কষ্টকর পেশার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। আল্লাহর ইচ্ছায়একজন মুসলিমের এমন কোন বৈধ কাজের অভাব হবে না যার পাশাপাশি সে আল্লাহর ফরজকৃতইবাদত পালন করতে পারে।

ومن يتق الله يجعل له مخرجاً ، ويرزقه من حيث لا يحتسب ومن يتوكل على الله فهو حسبه إن الله بالغ أمره قد جعل الله لكل شيء قدراً [65 الطلاق : 2]

“যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করেআল্লাহ তার জন্য কোন উপায় করে দিবেন এবং এমন জায়গা থেকে তাকে রিযিক দিবেন যা সে কখনও কল্পনাও করতে পারেনি। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর উপরভরসা করে তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট;নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর আদেশ বাস্তবায়িত করবেন, আল্লাহ সব কিছুর তাকদির নির্ধারণ করে রেখেছেন।”[৬৫আত্ব-ত্বালাক : ২-৩]

আর যদি ধরে নেওয়া হয় যে, উনি উল্লেখিত কাজ ছাড়া অন্য কোন কাজ পাননি, যে কাজ করে ইবাদত পালনেতার কষ্ট হচ্ছে, তাহলে তিনি যেন তাঁর দ্বীনদারিরক্ষার্থে সেই ভূমি ছেড়ে অন্য ভূমিতে পালিয়ে যান যেখানে তিনি তাঁর দ্বীন ও দুনিয়ার দায়িত্ব সমভাবে পালন করতে পারবেন, মুসলমানদের সাথে নেককাজ ও তাক্বওয়ার ক্ষেত্রে পারস্পারিক সহযোগিতা পাবেন।আল্লাহর জমিন প্রশস্ত।আল্লাহ তাআলা বলেন:

ومن يهاجر في سبيل الله يجد في الأرض مراغماً كثيراً وسعة [4 النساء : 100]

“যে হিজরত করবেআল্লাহর পথে সে পৃথিবীতে অনেকআশ্রয়স্থল ও স্বচ্ছলতা পাবে।” [৪ সূরা আন-নিসা: ১০০]

আল্লাহ তাআলা আরও বলেন:

قل يا عباد الذين آمنوا اتقوا ربكم للذين أحسنوا في هذه الدنيا حسنة وأرض الله واسعة إنما يوفى الصابرون أجرهم بغير حساب [39 الزمر : 10] .

“বলুন, হে আমার দাসেরা, যারা ঈমান এনেছো, তোমাদের রবকেভয় করো। যারা এ দুনিয়ায় কল্যাণের কাজ করে তাদের জন্য রয়েছে কল্যাণ। আল্লাহর জমিন তো প্রশস্ত। ধৈর্যশীলদেরকেতাদেরপ্রতিদান দেওয়া হবে অফুরন্ত”। [৩৯ আয্-যুমার : ১০]

যদি উল্লেখিত বিকল্প প্রস্তাবনার কোনটি অবলম্বনকরা সে ব্যক্তির পক্ষে সম্ভব না হয়এবং তিনি প্রশ্নে উল্লেখিত কঠিন কাজ করতে বাধ্য হন তাহলে তিনি রোজা রাখতে থাকবেন যতক্ষণ পর্যন্ত না অসুবিধা অনুভব করেন। অসুবিধা অনুভব করলে খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করবেন;যতটুকুতে তার কষ্টদূর হয়। এরপর পুনরায় বাকি সময় পানাহার থেকে বিরত থাকবেন এবং সিয়াম পালনের জন্য সুবিধামত সময়ে এই রোজার কাযা করবেন।আল্লাহই তাওফিকদাতা।

আমাদের নবী মুহাম্মাদ এর প্রতি ও তাঁর পরিবার বর্গ ও সাহাবীগণেরপ্রতি আল্লাহর রহমত ও শান্তি বর্ষিতহোক।

সূত্র: ইসলামি গবেষণা ও ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটি ( ১০/২৩৩-২৩৪)