আমরা আশা করছি, আপনাদের ওয়েবসাইট Islam Q&A (ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব) কে সাপোর্ট দেয়ার জন্য মুক্তহস্তে দান করবেন; যাতে করে ইনশা আল্লাহ্ ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সেবায় আপনাদের ওয়েবসাইট তার পথ চলা অব্যাহত রাখতে পারে।
আল্লাহ্র কাছে কষ্ট থেকে মুক্তির দোয়া করা কি জায়েয; নাকি উত্তম হলো ধৈর্য ধারণ করা?
আলহামদু লিল্লাহ।.
কষ্ট থেকে মুক্তির জন্য দোয়া করতে কোন আপত্তি নেই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে নিরাপত্তা প্রার্থনার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন। তিনি বলেছেন: “তোমরা শত্রুর সাক্ষাৎ কামনা করো না। আল্লাহ্র কাছে নিরাপত্তার দোয়া কর।”[সহিহ বুখারী (৭২৩৭) ও সহিহ মুসলিম (১৭৪২)]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দোয়া ছিল যখন তিনি কোন রোগীকে দেখতে যেতেন:
اللَّهُمَّ أَذْهِبْ الْبَأْسَ رَبَّ النَّاسِ ، وَاشْفِ ، فَأَنْتَ الشَّافِي ، لَا شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ ، شِفَاءً لَا يُغَادِرُ سَقَمًا
(ওগো আল্লাহ, ওগো মানুষের প্রভু! আপনি কষ্ট দূর করে দিন। আপনি আরোগ্য দিন। আপনিই আরোগ্যকারী। আপনার আরোগ্য ছাড়া আর কোন আরোগ্য নেই। এমন আরোগ্য যা কোন রোগ রেখে যাবে না)।[সুনানে তিরমিযি (৩৫৬৫), আলবানী ‘সহিহুত তিরমিযি’ গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]
উসমান বিন আবুল আস (রাঃ) এসে তার শরীরে ব্যথার অভিযোগ করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: আপনার শরীরের যে স্থানে ব্যথা হচ্ছে সেখানে আপনার হাত রেখে তিনবার بسم الله (বিসমিল্লাহ্) বলুন এবং সাতবার বলুন:
أَعُوذُ بِاللَّهِ وَقُدْرَتِهِ مِنْ شَرِّ مَا أَجِدُ وَأَحَاذِرُ
(আমি যে অনিষ্ট পাচ্ছি ও যে অনিষ্টের আশংকা করছি তা থেকে আল্লাহ্র কাছে ও তাঁর কুদরতের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।)[সহিহ মুসলিম (২২০২)]
আল্লাহ্ তাআলা তাঁর নির্বাচিত বান্দা তথা আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামের ব্যাপারে উল্লেখ করেছেন যে, তারা তার কাছে রোগ দূর হওয়ার জন্য দোয়া করতেন। আল্লাহ্ তাআলা বলেন: "আর স্মরণ করুন আইয়ূবকে; যখন তিনি তার প্রভুকে ডেকে বলছিলেন: ক্ষতি আমাকে স্পর্শ করেছে; আর আপনি তো সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু। তখন আমরা তার ডাকে সাড়া দিলাম।”[সূরা আম্বিয়া, ২১: ৮৩-৮৪]
তিনি আরও বলেন: “আর স্মরণ করুন যুন-নূনকে (মাছওয়ালাকে); যখন তিনি প্রচণ্ড রেগে প্রস্থান করলেন। তিনি ধারণা করেছিলেন যে, আমরা তার ওপর সংকীর্ণতা আরোপ করব না। তারপর তিনি অন্ধকারসমূহে থেকে এই বলে ডাক দিলেন: ‘আপনি ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই। আপনি কতইনা পবিত্র ও মহান! নিশ্চয়ই আমি অন্যায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত। তখন আমরা তার ডাকে সাড়া দিলাম এবং তাকে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত করলাম। আর এভাবেই আমরা মুমিনদেরকে মুক্ত করে থাকি।”[সূরা আম্বিয়া, ২১: ৮৭-৮৮]
এবং এটিও সাব্যস্ত হয়েছে যে, যখন ইহুদী লাবীদ বিন আল-আ’সাম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জাদু করেছিল তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপন প্রভুর কাছে দোয়া করেছিলেন যাতে করে তিনি তাকে এই পরীক্ষা থেকে আরোগ্য করেন।
ইমাম মুসলিম (২১৮৯) আয়িশা (রাঃ) থেকে সংকলন করেন যে, তিনি বলেন: বনু যুরাইক্ব গোত্রের এক ইহুদী রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জাদু করেছিল। সেই ইহুদীকে বলা হত: লাবীদ বিন আল-আ’সাম। তিনি বলেন: এক পর্যায়ে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে মনে হত যে, তিনি কোন কাজ করেছেন; অথচ তিনি সেটি করেননি। এক পর্যায়ে এক দিন কিংবা এক রাতে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দোয়া করলেন, আবার দোয়া করলেন, আবার দোয়া করলেন। এরপর বললেন: হে আয়িশা! তুমি কি অনুভব করতে পেরেছ: আমি যে বিষয়ে আল্লাহ্র কাছে ফতোয়া চেয়েছি তিনি সেই বিষয়ে আমাকে ফতোয়া দিয়েছেন... হাদিসটির শেষ পর্যন্ত।
নববী বলেন:
রাসূলের বাণী: “এক পর্যায়ে এক দিন কিংবা এক রাতে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দোয়া করলেন, আবার দোয়া করলেন, আবার দোয়া করলেন”: অপছন্দনীয় কোন কিছু ঘটলে দোয়া করা, বারবার দোয়া করা এবং উত্তমরূপে আল্লাহ্র কাছে ধর্ণা দেয়া মুস্তাহাব হওয়ার পক্ষে এটি দলিল।[সমাপ্ত]
এর মাধ্যমে পরিস্কার হয়ে গেল যে, বিপদ দূর করার জন্য দোয়া করা ও ধৈর্য ধারণ করার মধ্যে কোন সংঘর্ষ নেই। কেননা আল্লাহ্ তাআলা আমাদেরকে দোয়া করার ও তাঁর কাছে মিনতি করার নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা তাঁকে ডাকাটাই ইবাদত। তিনি বলেন: “তোমাদের প্রভু বলেন: তোমরা আমাকে ডাক; আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব।”[সূরা গাফের, আয়াত: ৬০]
এবং তিনিই আমাদেরকে ধৈর্য ধরার নির্দেশ দিয়েছেন এবং ধৈর্য ধারণ করলে অবারিত পুরস্কার দেয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। তিনি বলেন: “তিনি ধৈর্যশীলদেরকে তাদের প্রতিদান বেহিসাবে প্রদান করেন”।[সূরা যুমার, আয়াত: ১০]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর প্রভুকে ডেকেছেন। আর তিনি হচ্ছেন ধৈর্য ধারণের ক্ষেত্রে সর্বাধিক পরিপূর্ণ বান্দা, আল্লাহ্র তাকদীরের প্রতি সর্বাধিক সন্তুষ্ট ব্যক্তি। এটি প্রমাণ করে যে, দোয়া করাটা ধৈর্য ধারণ এর সাথে সাংঘর্ষিক নয়। কেননা ধৈর্য হচ্ছে: তাকদীর ও নিয়তির প্রতি অসন্তুষ্টি ও আপত্তি তোলা থেকে নিজেকে সংবরণ করা।
তাই কোন বান্দা সবরের ইবাদত ও দোয়ার ইবাদত একত্রে পালন করার ক্ষেত্রে কোন প্রতিবন্ধকতা নেই। বরঞ্চ সেটি অধিক উত্তম ও সর্বাধিক পরিপূর্ণ। এবং এটি ছিল আমাদের নবী মুহাম্মদের অবস্থা।
আমরা আল্লাহ্র কাছে দোয়া করছি যাতে করে তিনি আমাদেরকে দ্বীনি জ্ঞানে প্রজ্ঞা দেন।
আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ।