আমরা আশা করছি, আপনাদের ওয়েবসাইট Islam Q&A (ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব) কে সাপোর্ট দেয়ার জন্য মুক্তহস্তে দান করবেন; যাতে করে ইনশা আল্লাহ্ ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সেবায় আপনাদের ওয়েবসাইট তার পথ চলা অব্যাহত রাখতে পারে।
কিভাবে আমরা হাদিসে কুদসি “ওহে বান্দারা, নিশ্চয় তোমরা কখনও আমাকে ক্ষতি করার পর্যায়ে পৌঁছতে পারবে না যে আমার ক্ষতি করবে” এবং অন্য হাদিস “বনী আদম সময়কে গালি দিয়ে আমাকে কষ্ট দেয়। আমিই সময়। আমার হাতেই নির্দেশ। আমিই রাতদিনের পরিবর্তন ঘটাই।” এর মাঝে সমন্বয় করতে পারি? আশা করি বিস্তারিত জবাব দিবেন; যাতে করে আমি ভালভাবে বুঝতে পারি এবং ইনশাআল্লাহ্ অন্যকে শিখাতে পারি।
আলহামদু লিল্লাহ।.
আবু হুরায়রা (রাঃ) এর হাদিস; তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহ্ আয্যা ওয়া জাল্লা বলেন: বনী আদম সময়কে গালি দিয়ে আমাকে কষ্ট দেয়। আমিই সময়। আমার হাতেই নির্দেশ। আমিই রাতদিনের পরিবর্তন ঘটাই।”[সহিহ বুখারী (৪৮২৬) ও সহিহ মুসলিম (২২৪৬)]
এই হাদিস আবু যার (রাঃ) এর হাদিসের সাথে সাংঘর্ষিক নয়। যাতে এসেছে: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ্ তাআলা থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: “...ওহে বান্দারা, নিশ্চয় তোমরা আমার ক্ষতি করার পর্যায়ে পৌঁছতে পারবে না যে, আমার ক্ষতি করবে এবং তোমরা আমার উপকার করার পর্যায়ে পৌঁছতে পারবে না যে, উপকার করবে...”[সহিহ মুসলিম (২৫৭৭)]
সাংঘর্ষিক না হওয়া একাধিক দিক থেকে ফুটে উঠে:
প্রথম দিক:
কষ্টপ্রাপ্তি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াকে অনিবার্য করা এবং কষ্ট ও ক্ষতির মাঝে অবিচ্ছিন্নতা: মানুষের ক্ষেত্রে প্রবল। যে মানুষের প্রকৃতি হচ্ছে দুর্বলতা ও কসুর। পক্ষান্তরে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তাআলা: তাঁর মত কোন কিছু নেই।
ইবনুল কাইয়্যেম (রহঃ) বলেন:
“আল্লাহ্র কষ্ট মাখলুকের ক্ষেত্রে অর্জিত কষ্ট শ্রেণীয় নয়। যেমনিভাবে তাঁর ক্রোধ, রাগ ও অপছন্দ মাখলুকের (ক্রোধ, রাগ ও অপছন্দ) শ্রেণীয় নয়”।[আস-সাওয়ায়েক আল-মুরসালা (৪/১৭৫১)]
সুতরাং এটি আল্লাহ্র ‘ক্রোধ’ গুণ এর মত। অন্যের আচরণে মানুষের মধ্যে যে ক্রোধ জন্মে হতে পারে সেটি মানুষের ক্ষতি করে; কিন্তু আল্লাহ্ তাআলা জানিয়েছেন যে, যে ব্যক্তি আল্লাহ্কে ক্রুদ্ধ করে এটি তাঁর কোন ক্ষতি করে না। যেমনিভাবে আল্লাহ্ তাআলা কাফের ও মুরতাদদের বিবরণ দিতে গিয়ে বলেন: “এটা এজন্য যে, যা আল্লাহ্কে ক্রুব্ধ করে তারা সেটার অনুসরণ করেছে এবং তাঁর সন্তুষ্টিকে তারা অপছন্দ করেছে। তাই তিনি তাদের কর্মগুলো নিষ্ফল করে দিয়েছেন।”[সূরা মুহাম্মদ; ৪৭:২৮]
তাদের কুফরি ও মন্দ আমলের মাধ্যমে তারা আল্লাহ্কে ক্রুব্ধ করেছে বটে; কিন্তু তারা কখনও আল্লাহ্র ক্ষতি করতে পারবে না। যেহেতু আল্লাহ্ তাআলা বলেছেন: “নিশ্চয় যারা কুফরি করে ও আল্লাহ্র পথ থেকে (মানুষকে) ফিরিয়ে রাখে এবং নিজেদের কাছে সুপথ স্পষ্ট হওয়ার পরও রাসূলের বিরোধিতা করে তারা আল্লাহ্র কোন ক্ষতি করতে পারবে না; বরং তিনিই তাদের কর্মসমূহ নিষ্ফল করে দেবেন।”[সূরা মুহাম্মদ; ৪৭:৩২]
দ্বিতীয় দিক:
“কষ্ট”: কষ্টের বিষয়টি হালকা; কষ্ট ক্ষতির পর্যায়ে পৌঁছে না।
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া বলেন:
“খাত্তাবী ও অন্যান্যরা উল্লেখ করেছেন যে, বুৎপত্তিগত দিক থেকে ‘কষ্ট’-এর বিষয়টি হালকা এবং এর অকল্যাণ ও মন্দের প্রভাব দুর্বল— এ ব্যাপারটি খেয়ালে রাখা বাঞ্ছনীয়। তিনি যা বলেছেন বিষয়টি তেমনই। শব্দটির নানাবিধ ব্যবহার সেটাই প্রমাণ করে। এর উদাহরণ হচ্ছে আল্লাহ্র বাণীতে: “তারা কষ্ট দেয়া ছাড়া তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না।”
এই জন্য আল্লাহ্ তাআলা বলেছেন: “নিশ্চয় যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দেয়।” এবং তাঁর রাসূল তাঁর কাছ থেকে বর্ণনা করেছেন যে, “বনী আদম সময়কে গালি দিয়ে আমাকে কষ্ট দেয়।” নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “কাব বিন আশরাফের জন্য কে আছ? নিশ্চয় সে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দিয়েছে”। তিনি আরও বলেন: “কষ্টকর কিছু শুনে ধৈর্য রাখার ক্ষেত্রে আল্লাহ্র চেয়ে শ্রেষ্ঠ কে? তারা তাঁর সাথে সমকক্ষ নির্ধারণ করে, তাঁর জন্য সন্তান নির্ধারণ করে; অথচ তিনি তাদেরকে সুস্থতা দিয়ে যাচ্ছেন এবং জীবিকা দিয়ে যাচ্ছেন”। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ্র পক্ষ থেকে আরও বর্ণনা করেন: “ওহে বান্দারা, নিশ্চয় তোমরা আমার ক্ষতি করার পর্যায়ে পৌঁছতে পারবে না যে, আমার ক্ষতি করবে”। আল্লাহ্ তাআলা তাঁর কিতাবে বলেন: “যারা কুফরির দিকে ধাবিত হয় তারা যেন আপনাকে দুশ্চিন্তায় না ফেলে। তারা আল্লাহ্র কোন ক্ষতি করতে পারবে না।”[সূরা আলে-ইমরান; ৩:১৭৬]
অতএব তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, মাখলুক কুফরি করার মাধ্যমে তাঁর ক্ষতি করতে পারবে না; কিন্তু তাঁকে কষ্ট দিবে: যখন তারা পরিস্থিতি পরিবর্তনকারীকে গালি দিবে, যখন তারা তাঁর জন্য সন্তান ও শরীক স্থাপন করবে কিংবা তারা তাঁর রাসূল ও মুমিনদেরকে কষ্ট দিবে।”[আস-সারিমুল মাসলুল (২/১১৮-১১৯) থেকে সমাপ্ত]
শাইখ উছাইমীন (রহঃ) বলেন:
“কষ্ট ক্ষতিকে অনিবার্য করে না। মানুষ বিশ্রী কিছু শুনে বা দেখে কষ্ট পায়; কিন্তু এর দ্বারা সে ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। পেঁয়াজ ও রসুনের দুর্গন্ধে কষ্ট পায়; কিন্তু এর দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। এ কারণে আল্লাহ্ তাআলা কুরআনে কষ্ট সাব্যস্ত করেছেন। তিনি বলেন: “নিশ্চয় যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দেয় আল্লাহ্ তাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে লানত করেন। তিনি তাদের জন্য লাঞ্ছনাকর শাস্তিও প্রস্তুত করে রেখেছেন।”[সূরা আহযাব; ৩৩:৫৭] হাদিসে কুদসীতে আছে: “বনী আদম সময়কে গালি দিয়ে আমাকে কষ্ট দেয়”। কিন্তু কেউ তার ক্ষতি করতে পারাকে তিনি নাকচ করেছেন। তিনি বলেন: “নিশ্চয় তারা কখনও আল্লাহ্র কোন ক্ষতি করতে পারবে না”। হাদিসে কুদসিতে এসেছে: “ওহে বান্দারা, নিশ্চয় তোমরা আমার ক্ষতি করার পর্যায়ে পৌঁছতে পারবে না যে, আমার ক্ষতি করবে”।[আল-ক্বওলুল মুফিদ (২/২৪১) থেকে সমাপ্ত]
শাইখ আব্দুল্লাহ্ বিন আকীল (রহঃ) বলেন:
“পক্ষান্তরে হাদিসদ্বয়ের মধ্যে সমন্বয়: আলহামদু লিল্লাহ্; হাদিসদ্বয়ের মধ্যে কোন স্ববিরোধিতা ও বৈপরীত্য নেই। কেননা কষ্ট ক্ষতির চেয়ে হালকা। তাছাড়া একটি অপরটিকে আবশ্যক করে না। কুরআনে কারীমে কষ্ট সাব্যস্ত হয়েছে। যেমনটি আল্লাহ্র বাণীতে এসেছে: “নিশ্চয় যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দেয় আল্লাহ্ তাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে লানত করেন।”[সূরা আহযাব; ৩৩:৫৭]
অতএব, আল্লাহ্ তাআলা কষ্ট পান; যেমনটি হাদিসে উদ্ধৃত হয়েছে; যদিও বান্দারা তাঁর কোন ক্ষতি করতে পারে না। যেমনটি আল্লাহ্ তাআলা বলেছেন: “যারা কুফরির দিকে ধাবিত হয় তারা যেন আপনাকে দুশ্চিন্তায় না ফেলে। তারা আল্লাহ্র কোন ক্ষতি করতে পারবে না।”[সূরা আলে-ইমরান; ৩:১৭৬]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর খোতবাতে বলতেন: “আর যে ব্যক্তি তাঁদের উভয়ের (আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের) অবাধ্য হবে সে ব্যক্তি নিজের ক্ষতি ব্যতীত আল্লাহ্র কোন ক্ষতি করবে না”।[ফাতাওয়া ইবনে আকীল (২/২৭৩) থেকে সমাপ্ত]
আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।