আলহামদু লিল্লাহ।.
অনেক মানুষ এ ধরণের ওয়াসওয়াসাতে (শুচিবায়ুতে) আক্রান্ত। লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াত্তা ইল্লা বিল্লাহ্ (কোন সামর্থ্য নেই, কোন শক্তি নেই আল্লাহ্ ছাড়া)। ওয়াসওয়াসার ঔষধ হচ্ছে বিতাড়িত শয়তান থেকে অধিকহারে আল্লাহ্র কাছে আশ্রয় চাওয়া। বিশেষতঃ সূরা ফালাক্ব ও সূরা নাস এর মাধ্যমে। কারণ আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়ার জন্য এ সূরাগুলোর তুল্য কিছু নেই: সূরা ফালাক্বের মধ্যে শয়তানের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাওয়া অন্তর্ভুক্ত। কেননা শয়তান আল্লাহ্র সৃষ্টি। আর সূরা নাসের মধ্যেও।
এই ওয়াসওয়াসার ঔষধ হচ্ছে বিতাড়িত শয়তান থেকে বেশি বেশি আল্লাহ্র কাছে আশ্রয় চাওয়া। আল্লাহ্র কাছে ধর্ণা দেয়া। ব্যক্তির অন্তরে যা উদিত হয় সেটার প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করার ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্প রাখা।
উদাহরণতঃ আপনি কি একবার ওযু করেছেন, না দুইবার, না তিনবার শয়তানের সে ওয়াসওয়াসার দিকে ভ্রুক্ষেপ করবেন না। এমনকি কোন ব্যক্তি যদি অনুভব করে যে, সে ওযু করেনি কিংবা কোন অঙ্গ ধৌত করেনি কিংবা নিয়ত করেনি; তবুও সে এর দিকে ভ্রুক্ষেপ করবে না। অনুরূপভাবে কেউ যদি তার নামাযের মধ্যে অনুভব করে যে, সে তাকবীরে তাহরীমা বলেনি সে দিকে সে ভ্রুক্ষেপ করবে না। অনুরূপভাবে প্রশ্নে যা উল্লেখ করা হয়েছে যে, আল্লাহ্কে গালি দেয়া কিংবা মুসহাফকে গালি দেয়া কিংবা অন্য কোন কুফরি; সে দিকে সে ভ্রুক্ষেপ করবে না। ভ্রুক্ষেপ না করায় তার কোন ক্ষতি হবে না। এমনকি যদি ধরে নেয়া হয় যে, তার মুখে সেটি তার অনিচ্ছা সত্ত্বেও উচ্চারিত হয়েছে; এতে করে তার উপর কোন কিছু বর্তাবে না। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “জবরদস্তিতে কোন তালাক্ব নেই”। হাদিসটি বর্ণনা করেছেন আবু দাউদ ‘সুনান’ গ্রন্থে (২১৯৩) এবং আহমাদ ‘মুসনাদ’ গ্রন্থে (৬/২৭৬)। আলবানী ‘আল-ইরওয়া গ্রন্থে হাদিসটিকে (২০৪৭) হাসান বলেছেন। যদি ওয়াসওয়াসাগ্রস্ত ব্যক্তির তালাক্বই কার্যকর না হয় তাহলে এটি ক্ষমার্হ হওয়ার আরও অধিক উপযুক্ত। কিন্তু ব্যক্তি এর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবেন এবং একে গুরুত্ব দিবেন না।
এই নারী ও তার মত অন্য যে সব নারী এই মুসিবতের শিকার তাদের জন্য আমার উপদেশ হলো: বেশি বেশি বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহ্র আশ্রয় চাওয়া। মহান সূরাদ্বয় (সূরা ফালাক্ব ও সূরা নাস) পড়া। দৃঢ় সংকল্প রাখা এবং এ সকল শয়তানী ওয়াসওয়াসার দিকে ভ্রুক্ষেপ না করা।
যদি শয়তান কারো অন্তরে আল্লাহ্র ব্যাপারে কিংবা এ জাতীয় কোন শয়তানী ওয়াসওয়াসা আরোপ করে এতে তার কিছু যায় আসে না। কেননা সেই ব্যক্তি এই সন্দেহের কারণে এই জন্য কষ্ট পাচ্ছেন যে, তার অন্তরে ঈমান রয়েছে। যার ঈমান নেই সন্দেহ হওয়া বা না-হওয়াতে তার কিছু যায় আসে না। কিন্তু এ সকল সন্দেহ থেকে যে ব্যক্তি কষ্ট পায় সে হলো মুমিন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবীদেরকে বলেছেন: “সেটি হচ্ছে সুস্পষ্ট ঈমান”।[সহিহ মুসলিম (১৩২)] অর্থাৎ শয়তান তোমাদের কারো অন্তরে এ ধরণের যে বিষয়গুলো নিক্ষেপ করে সেটি সুস্পষ্ট ঈমান তথা খাঁটি ঈমান। তিনি সেটাকে খাঁটি ঈমান বলে উল্লেখ করেছেন। কেননা এ ব্যক্তির অন্তরে সন্দেহের উদ্রেক হওয়ায় সে এই সন্দেহের কারণে স্বস্তি পাচ্ছে না। এর দিকে ভ্রুক্ষেপ করছে না। এতে কষ্ট পাচ্ছে এবং এই সন্দেহকে সে চাচ্ছে না। শয়তান ঐ সকল অন্তরগুলোতে আসে যেগুলো ঈমানে ভরপুর যাতে করে সেগুলোকে ধ্বংস করতে পারে। শয়তান বিশ্বাস বর্জিত অন্তরগুলোতে আসে না। কেননা সেগুলো বিশ্বাস বর্জিত। ইবনে আব্বাস (রাঃ) কিংবা ইবনে মাসউদ (রাঃ) কে বলা হয়েছিল: “ইহুদীরা বলে আমাদের নামাযে আমাদের ওয়াসওয়াসার উদ্রেক হয় না। তিনি বলেন: হ্যাঁ। শয়তান এমন অন্তরে কি করবে যেটি ধ্বংসপ্রাপ্ত!!”
সেই নারীর জন্য আমার উপদেশ হচ্ছে- তিনি এ সবকিছু থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবেন। তিনি শুরুতে কষ্ট পাবেন। শীঘ্রই তিনি দেখবেন যে, তিনি পবিত্রতা ছাড়া কিংবা তাকবীরে তাহরীমা ছাড়া নামায পড়েছেন কিংবা এ জাতীয় অন্য কিছু। কিন্তু তিনি অচিরেই এতে স্বস্তি পাবেন। তার সন্দেহ ও ওয়াসওয়াসা দূর হয়ে যাবে।
এমন অনেক মানুষ এ ধরণের রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং তাদেরকে এই ওয়াসওয়াসাকে প্রতিহত করার ব্যাপারে পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। আলহামদু লিল্লাহ্। আল্লাহ্ তাদেরকে সুস্থ করেছেন।
আমরা আল্লাহ্র কাছে সুস্থতার প্রার্থনা করছি।