আলহামদু লিল্লাহ।.
আল্লাহ তাআলা মানুষের উপর নানারকম ইবাদতের বিধান জারি করেছেন; যাতে তিনি তাদেরকে পরীক্ষা করতে পারেন তাদের মধ্যে কে উত্তম আমলকারী ও সঠিক পথ গ্রহণকারী। স্বভাব-প্রকৃতির দিক থেকে মানুষ বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। কারো কারো বিশেষ কোন ইবাদতের প্রতি ঝোঁক থাকে; যেহেতু সে ইবাদত তার স্বভাব-প্রকৃতির সাথে খাপ খায়। আবার অন্য ইবাদতের প্রতি ঝোঁক থাকে না; যেহেতু সে ইবাদত তার স্বভাব-প্রকৃতির সাথে খাপ খায় না। তাই আপনি দেখতে পাবেন প্রথম প্রকার ইবাদতের ক্ষেত্রে সে ব্যক্তি অগ্রণী। অন্যদিকে দ্বিতীয় প্রকার ইবাদতের ক্ষেত্রে সে ব্যক্তি অলস ও অনগ্রসর। তবে সত্যিকার মুমিন হচ্ছে সে ব্যক্তি যে তার মনিবের সন্তুষ্টির কাছে নিজেকে সঁপে দেয়; নিজের প্রবৃত্তির কাছে নয়। নানাবিধ ইবাদতের মধ্যে রয়েছে ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভ। এর মধ্যে কোনটি নিছক শারীরিক ইবাদত; যা পালন করতে শারীরিক কসরত প্রয়োজন হয়; যেমন- নামায। আবার এর মধ্যে কোনটি শারীরিক বটে; তবে এটি সাধিত হয় মানুষের নিকট আগ্রহব্যঞ্জক বিষয়াবলি থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে; যেমন- রোজা। আবার এর মধ্যে কোনটি হচ্ছে- নিছক সম্পদের সাথে সংশ্লিষ্ট; যেমন- যাকাত। আবার এর মধ্যে কোনটি হচ্ছে- শারীরিক ও আর্থিক; যেমন- হজ্জ। তাই হজ্জের মধ্যে কায়িক ও আর্থিক উভয় প্রকার ইবাদত সন্নিবেশিত হয়েছে। যেহেতু হজ্জ করতে হলে ভ্রমণ করতে হয়, অন্য ইবাদতের তুলনায় বেশি শারীরিক শ্রম ব্যয় করতে হয়। তাই আল্লাহ তাআলা হজ্জকে জীবনে মাত্র একবার ফরজ করেছেন এবং হজ্জ ফরজ হওয়ার জন্য সামর্থ্য থাকাকে শর্ত করে দিয়েছেন। সামর্থ্য থাকা হজ্জ ফরজ হওয়ার জন্য যেমন শর্ত; তেমনি অন্য যে কোন ইবাদত ফরজ হওয়ার জন্যেও শর্ত। তবে হজ্জের মধ্যে সামর্থ্যের বিষয়টি বেশি উল্লেখযোগ্য। হজ্জের রয়েছে নানাবিধ উপকারিতা:
১. হজ্জ পালন করার মাধ্যমে ইসলামের একটি রুকন আদায় করা হয়। এটিই হজ্জের গুরুত্ব প্রমাণ করে এবং আল্লাহ যে এ ইবাদতকে পছন্দ করেন সেটাও প্রমাণ করে।
২. হজ্জ—আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ এর একটি প্রকার। এ কারণে আল্লাহ তাআলা জিহাদের আয়াতগুলো উল্লেখ করার পর হজ্জকে উল্লেখ করেছেন। সহিহ হাদিসে এসেছে- যখন আয়েশা (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন: নারীদের উপর কি জিহাদ আছে? তিনি বললেন: হ্যাঁ; তাদের উপর এমন জিহাদ ফরজ যাতে মারামারি নেই। সেটি হচ্ছে— হজ্জ ও উমরা।
৩. যে ব্যক্তি শরয়ি পদ্ধতি মোতাবেক হজ্জ আদায় করবে সে অফুরন্ত সওয়াব ও মহা পুরস্কার পাবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সহিহ হাদিসে এসেছে—“মাবরুর হজ্জের প্রতিদান হচ্ছে— জান্নাত”। তিনি আরও বলেছেন: “যে ব্যক্তি হজ্জ আদায় করল এর মধ্যে কোন যৌনাচার করল না; পাপাচার করল না সে ঐ দিনের মত ফিরে আসবে যেদিন তার মা তাকে প্রসব করেছে।” আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “হাজিসাহেব ও উমরাকারীগণ আল্লাহর মেহমান। যদি তারা দুআ করেন আল্লাহ তাদের দুআ কবুল করেন। যদি তারা ক্ষমা প্রার্থনা করেন আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দেন” [হাদিসটি বর্ণনা করেছেন নাসাঈ ও ইবনে মাজাহ]
৪. হজ্জের মধ্যে আল্লাহর যিকির, তাঁকে তাযিম (সম্মানপ্রদর্শন) করা ও তাঁর নিদর্শনাবলি ফুটিয়ে তোলা হয়। যেমন- তালবিয়া পড়া, বায়তুল্লাহ ও সাফা-মারওয়ার মাঝে প্রদক্ষিণ করা, আরাফাতে অবস্থান করা, মুযদালিফাতে রাত্রিযাপন করা, জমরাগুলোতে কংকর নিক্ষেপ করা ও ইত্যাদির সাথে সংশ্লিষ্ট যিকির-আযকার। হাদিসে এসেছে— নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “বায়তুল্লাহর তাওয়াফ,সাফা-মারওয়ায় প্রদক্ষিণ ও কংকর নিক্ষেপ করার বিধান আল্লাহর যিকিরকে বুলন্দ করার জন্য জারী করা হয়েছে।”
৫. এ ইবাদত পালনের উদ্দেশ্যে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আগত মুসলমানদের সম্মিলন ঘটে, পারস্পারিক পরিচিতি, সম্পর্ক ও হৃদ্যতা তৈরী হয়। এর সাথে পাওয়া যায় নানা ওয়াজ-নসিহত, দিকনির্দেশনামূলক আলোচনা ও নেকীর কাজে উদ্বুদ্ধ করণমূলক নির্দেশনা।
৬. একই পোশাকে, একই স্থানে, একই সময়ে মুসলমানদের এভাবে প্রকাশ পাওয়া। কারণ হাজীগণ একই সময়ে পবিত্রস্থানগুলোতে একত্রিত হয়ে থাকেন। তাদের সকলের একই কাজ। সকলের পোশাকও এক– চাদর ও লুঙ্গি এবং সকলে আল্লাহর প্রতি বিনয়াবনত।
৭. এ ছাড়াও হজ্জের মৌসুমে দুনিয়া ও আখেরাতের আরও প্রভূত কল্যাণ সাধিত হয় এবং মুসলমানদের পারষ্পারিক সুবিধা বিনিময় হয়। তাইতো আল্লাহ তাআলা বলেন: “যাতে তারা তাদের জন্য যা কিছু কল্যাণকর সেগুলোতে উপস্থিত থাকতে পারে”[সূরা হজ্জ, আয়াত: ২৮] এ কল্যাণ দ্বারা দুনিয়া ও আখেরাতের উভয় কল্যাণ উদ্দেশ্য।
৮. হজ্জের মধ্যে যে ওয়াজিব কোরবানী ও মুস্তাহাব কোরবানী আল্লাহর উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হয়; আল্লাহর সীমানাগুলোর প্রতি সম্মানপ্রদর্শনপূর্বক। এর মাধ্যমে নিজেরা গোশত ভক্ষণ করা, অন্যকে হাদিয়া দান করা এবং গরীবদেরকে সদকা করা ইত্যাদি আমলের সুযোগ থাকে।
অতএব, হজ্জের উপকারিতা, এর গূঢ়রহস্য অফুরন্ত। সমাপ্ত