শুক্রবার 21 জুমাদাল আউওয়াল 1446 - 22 নভেম্বর 2024
বাংলা

যে ব্যক্তি হারাম সম্পদ উপার্জন করেছে এবং সেই সম্পদ দিয়ে একটি ফ্ল্যাট ক্রয় করেছে; তাকে কি এই ফ্ল্যাট থেকে অবমুক্ত হতে হবে?

প্রশ্ন

আমি বিয়ের আগে একটি চাকুরী করতাম। সেই চাকুরীতে আমি কিছু অবৈধ সম্পদ উপার্জন করেছি। কিছু সময় পর আমি এই সম্পদগুলো একত্রিত করে একটি আবাসিক ফ্ল্যাট ক্রয় করেছি এবং একটি পরিবহন গাড়ীর অর্ধেক শেয়ার দিয়েছি। এটাই আমার মালিকানাধীন সর্বসাকুল্য সম্পদ। বিয়ের পর আমি আল্লাহ্‌র সাথে অঙ্গীকার করেছি যে, আমি আমার বাসাতে কোন হারাম সম্পদ প্রবেশ করাব না। আমি চাকুরীটি ছেড়ে দিয়েছি এবং তাওবা করেছি। এখন আমি ফ্ল্যাট ও গাড়ীটিকে কী করব? আমি আমার ঘর ও সম্পদকে হারাম থেকে পবিত্র করতে চাই। আল্লাহ্‌ যাতে আমার প্রতি সন্তুষ্ট হন এবং আমার তাওবা কবুল করেন সে জন্য আমি কী করব?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

এক:

আমরা আল্লাহ্‌র কাছে দোয়া করছি তিনি যেন আপনার তাওবা কবুল করে নেন এবং আপনাকে হালাল উত্তম রিজিক দেন।

জেনে রাখুন, তাওবার শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে: আত্মসাৎকৃত সম্পদগুলো স্ব স্ব মালিককে ফিরিয়ে দেয়া। তাই এ সম্পদগুলোর কিছু যদি মালিকের অসম্মতিতে গ্রহণ করা হয়ে থাকে; চুরি করা কিংবা জালিয়াতি ও ধোকা দেয়ার মাধ্যমে; তাহলে সে সম্পদ এর মালিককে ফিরিয়ে দেয়া আবশ্যক। যদি অনুসন্ধান ও খোঁজাখুজি করার পরও সে সম্পদের মালিককে কিংবা মালিকের ওয়ারিশগণকে পাওয়া না যায় তাহলে আপনি তাদের পক্ষ থেকে সে সম্পদগুলো দান করে দিবেন। যদি কোন একদিন এর মালিক ফিরে আসে তখন আপনি তাকে দুটো অপশন দিবেন: সম্পদ ফিরিয়ে দেয়া ও সদকার সওয়াব আপনার জন্য হওয়া কিংবা সদকাকে স্বীকৃতি দেয়া ও এর সওয়াব তার জন্য হওয়া।

দুই:

হারাম সম্পদগুলো যদি উভয় পক্ষের সম্মতিক্রমে কোন হারাম বিনিময় কিংবা হারাম কাজের বিপরীতে অর্জিত হয়ে থাকে; যেমন মদের মূল্য, গানবাজনা, জ্যোতিষীপনা, সুদের লিখন, মিথ্যা-সাক্ষ্য দেয়া ইত্যাদি হারাম কাজের বিপরীতে তাহলে এটি ব্যাখ্যাসাপেক্ষ:

ক. যদি ব্যক্তি এর হারাম হওয়া সম্পর্কে না-জেনে এটি উপার্জন করে থাকে তাহলে এই সম্পদ তার। এই সম্পদ থেকে মুক্ত হওয়া তার উপর আবশ্যক নয়। যেহেতু আল্লাহ্‌ তাআলা সুদের নিষেধাজ্ঞা নাযিল করার পর সুদের ব্যাপারে বলেন: অতএব, যার নিকট তার প্রভুর কাছ থেকে উপদেশ আসার পর সে (সুদ খাওয়া থেকে) বিরত হয়, তাহলে আগে যা (নেওয়া) হয়েছে তা তারই এবং তার বিষয়টি (ফয়সালার ভার) আল্লাহ্‌র কাছে। আর যারা ফিরে যাবে (অর্থাৎ পুনরায় সুদ খাবে) তারা জাহান্নামের অধিবাসী হবে, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে।[সুরা বাক্বারা, ২:২৭৫]

খ. আর যদি সেই ব্যক্তি এই সম্পদ হারাম হওয়া সম্পর্কে জ্ঞাত থাকে; তবে ঐ সম্পদটি সে খরচ করে ফেলে ও নিঃশেষ হয়ে যায়; তাহলে সে যদি তাওবা করে তার ওপর আর কিছু আবশ্যক হবে না।

গ. আর যদি সেই সম্পদ অবশিষ্ট থাকে; তাহলে সেই সম্পদকে কোন ভাল খাতে ব্যয় করে এর থেকে মুক্ত হওয়া অনিবার্য। তবে সে যদি ঐ সম্পদের মুখাপেক্ষী থাকে তাহলে তার প্রয়োজন মাফিক সেই সম্পদ থেকে গ্রহণ করবে এবং অবশিষ্ট সম্পদ থেকে সে অবমুক্ত হবে।

ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটিকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল:

আমি আপনাদেরকে জিজ্ঞেস করছি যে, একজন আলেমের একটি ফতোয়া মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে। সেটি হলো যদি কোন ব্যক্তি মদ বানিয়ে বা বিক্রি করে কিংবা মাদকদ্রব্য বিক্রি করে সম্পদ উপার্জন করে এবং আল্লাহ্‌র কাছে তাওবা করে; তাহলে মদ বানানো বা বিক্রি করা কিংবা মাদকদ্রব্য বিক্রি করা বা বাজারজাত করার মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ তার জন্য হালাল।

তারা জবাব দেন: যদি হারাম সম্পদ উপার্জনকালে এটি হারাম হওয়া সম্পর্কে অবহিত থাকে তাহলে তাওবার মাধ্যমে এটি তার জন্য হালাল হবে না। বরং কোন নেক কাজে ও ভালো কাজে ব্যয় করার মাধ্যমে এর থেকে মুক্ত হওয়া তার উপর আবশ্যক হবে।[সমাপ্ত]

[ফাতাওয়াল লাজনাদ দায়িমা (১৪/৩৩)]

ইবনুল কাইয়্যেম (রহঃ) বলেন: “যদি কোন ব্যক্তি অপর কাউকে কোন হারামের বিনিময় প্রদান করে ও বিনিয়মটি সেই ব্যক্তি গ্রহণ করে; যেমন ব্যভিচারিনী, গায়ক, মদবিক্রেতা, মিথ্যাসাক্ষ্যদানকারী প্রমুখ; পরবর্তীতে ঐ ব্যক্তি এর থেকে তাওবা করে এবং ঐ বিনিয়মটি তার হাতে থাকে; সেক্ষেত্রে একদল আলেম বলেন: বিনিময়টি এর মালিককে ফেরত দিবে। যেহেতু এটি স্বয়ং সেই সম্পদ; যা গ্রহণ করার অনুমতি শরিয়তপ্রণেতা (আইনদাতা) প্রদান করেননি এবং এ সম্পদের মালিকের এর বিপরীতে বৈধ উপকার অর্জিত হয়নি। আর অপর একদল আলেমের মতে, এই সম্পদ দান করে দেয়াটাই হলো তার তাওবা। যার কাছ থেকে এটি গ্রহণ করেছে তাকে ফেরত দিবে না। এটি শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়ার নির্বাচিত অভিমত এবং সর্বাধিক সঠিক অভিমত... ।” [মাদারিজুস সালেকিন (১/৩৮৯) থেকে সমাপ্ত]

ইবনুল কাইয়্যেম (রহঃ) এই মাসয়ালাটি ‘যাদুল মাআদ’-এ (৫/৭৭৮) বিশদভাবে আলোচনা করেছেন এবং তিনি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, এই সম্পদ থেকে অবমুক্ত হওয়া ও তাওবার পরিপূর্ণতা হবে: এটি দান করে দেয়ার মাধ্যমে। আর যদি এই সম্পদের মুখাপেক্ষী হয় তাহলে তার প্রয়োজন মাফিক এর থেকে গ্রহণ করবে এবং বাকীটুকু দান করে দিবে।[সমাপ্ত]

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া বলেন: “যদি এই পতিতা ও এই মদবিক্রেতা তাওবা করে এবং তারা গরীব হয়; তাহলে এই সম্পদ থেকে তাদের প্রয়োজন অনুপাতে খরচ করা জায়েয হবে। যদি ব্যবসা জানে কিংবা কাপড় বুননের মত কোন পেশা জানে তাহলে তাকে এই সম্পদ থেকে মূলধন প্রদান করা হবে।” [মাজমুউল ফাতাওয়া (২৯/৩০৮) থেকে সমাপ্ত]

উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে যদি আপনি ফ্ল্যাট ও পরিবহন গাড়ীর শেয়ারের প্রতি মুখাপেক্ষী হন তাহলে আমরা আশা করছি আল্লাহ্‌ আপনাকে ক্ষমা করে দিবেন এবং এর কোন কিছু থেকে অবমুক্ত হওয়া আপনার ওপর অনিবার্য হবে না।

আপনার কর্তব্য নেক আমলের ও বেশি বেশি দান করার চেষ্টা করা। কেননা আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: আর আমি অবশ্যই ক্ষমাশীল তার প্রতি যে তওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকাজ করে তারপর সৎপথে অবিচল থাকে।[সূরা ত্বাহা, ২০:৮২]

আল্লাহই সর্বজ্ঞ।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব