আলহামদু লিল্লাহ।.
ইবাদতগুলো আল্লাহ্র কাছে কবুল হওয়া এবং বান্দা এর সওয়াবপ্রাপ্ত হওয়ার ক্ষেত্রে দুটো শর্ত পরিপূর্ণ হতে হবে:
প্রথম শর্ত: আল্লাহ্র জন্য ইখলাস (একানিষ্ঠতা): আল্লাহ্ তাআলা বলেন: "অথচ তাদেরকে এই আদেশই দেওয়া হয়েছিল যে, অন্য সব (ধর্ম) থেকে বিমুখ হয়ে দ্বীনকে আল্লাহ্র জন্য একনিষ্ঠ করে তারা আল্লাহ্র ইবাদত করবে।"[সূরা বাইয়্যেনা, আয়াত: ৫] ইখলাস (একনিষ্ঠতা) মানে: বান্দার বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীন সকল বচন ও কর্মের উদ্দেশ্য হবে আল্লাহ্র সন্তষ্টি অন্বেষণ। আল্লাহ্ তাআলা বলেন: "তার কাছে কারো এমন কোন অনুগ্রহ থাকে না, যার প্রতিদান দিতে হবে (অর্থাৎ সে কারো কাছ থেকে এ রকম কোন অনুগ্রহ পেতে চায় না), সে শুধু তার সুউচ্চ প্রভুর সন্তুষ্টি অন্বেষণ করে।"[সূরা লাইল, আয়াত: ১৯-২০]
তিনি আরও বলেন: "আমরা কেবল আল্লাহ্র সন্তুষ্টির জন্য তোমাদেরকে খাওয়াই। আমরা তোমাদের কাছ থেকে কোন প্রতিদান বা কৃতজ্ঞতা চাই না।"[সূরা ইনসান, আয়াত: ৯]
আল্লাহ্ তাআলা আরও বলেন: "যে ব্যক্তি পরকালের ফসল (পুরস্কার) চায় তার জন্য আমি তার ফসল বাড়িয়ে দেই। আর যে ইহকালের ফসল চায় তাকে আমি তা থেকে (কিছু) দিয়ে দেই। পরকালে তার কোন অংশ থাকবে না।"[সূরা শূরা, আয়াত: ২০]
তিনি আরও বলেন: "যারা দুনিয়ার জীবন ও চাকচিক্য চায় আমি তাদেরকে সেখানে তাদের কাজের পুরোপুরি ফল দিয়ে থাকি, সেখানে তাদেরকে (কোন কিছু) কম দেওয়া হবে না। ওদের জন্য পরকালে জাহান্নাম ছাড়া আর কিছু নাই। এখানে তারা যা কিছু করেছে তা নিষ্ফল হয়েছে এবং তারা যেসব কাজ করত তা বাতিল।[সূরা হুদ, আয়াত: ১৫-৬]
উমর বিন খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি যে তিনি বলেন: "আমলসমূহের শুদ্ধাশুদ্ধি কেবল নিয়তের উপরই নির্ভর করে। প্রত্যেক ব্যক্তি যা নিয়ত করে সেটাই তার প্রাপ্য। অতএব, যার হিজরত হবে দুনিয়া পাওয়ার উদ্দেশ্যে কিংবা কোন নারীকে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে তাহলে সে যে উদ্দেশ্যে সফর করেছে সে উদ্দেশ্যেই তার হিজরত পরিগণিত হবে।[সহিহ বুখারী; ওহীর সূচনা/১)]
সহিহ মুসলিমে আবু হুরায়রা (রাঃ) এর হাদিস হিসেবে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: "আমি শির্ককারীদের শির্ক (অংশ) থেকে সর্বাধিক অমুখাপেক্ষী। যে ব্যক্তি এমন কোন আমল করে যে আমলে সে আমার সাথে অন্যকেও অংশীদার করে আমি সেই ব্যক্তিকে ও সেই ব্যক্তির আমল প্রত্যাখ্যান করি।"[সহিহ মুসলিম, (আয্-যুহদ ওয়ার রাকায়েক/৫৩০০)
দ্বিতীয় শর্ত: আল্লাহ্ শুধুমাত্র যে শরিয়ত অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছেন আমলটি সেই শরিয়ত মোতাবেক হওয়া। আর তা হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে অনুশাসনগুলো নিয়ে এসেছেন সেগুলোর অনুসরণ করা। হাদিসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে: "যে ব্যক্তি এমন কোন আমল করে যার উপর আমাদের নির্দেশনা (শরিয়ত) নেই সেটা প্রত্যাখ্যাত।"[সহিহ মুসলিম (আল-আক্বযিয়াহ/ ৩২৪৩)]
ইবনে রজব (রহঃ) বলেন: "এ হাদিসটি ইসলামের একটি সুমহান মূলনীতি। এটি আমলের বহিঃরূপের মানদণ্ড; যেমনিভাবে "সকল আমলের শুদ্ধাশুদ্ধি নিয়তের উপর নির্ভরশীল" হাদিসটি আমলগুলোর আন্তঃরূপের মানদণ্ড। যে সকল আমলের মাধ্যমে আল্লাহ্র সন্তুষ্টি চাওয়া হয় না সে সব আমলের জন্য আমলকারী যেমন সওয়াব পাবে না; ঠিক তেমনি প্রত্যেক যে আমল আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশনা মোতাবেক সম্পাদিত হবে না সেটাও আমলকারীর উপর প্রত্যাখ্যাত হবে। আর প্রত্যেক যে ব্যক্তি দ্বীনের মধ্যে এমন কোন কিছু চালু করে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল যা করার অনুমতি দেননি সেটি ধর্মীয় কিছু নয়।"[জামিউল উলুমি ওয়াল হিকাম (খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-১৭৬)]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সুন্নাহ ও আদর্শ অনুসরণ করার এবং এ দুটোকে আঁকড়ে ধরার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন: "তোমাদের উপর আবশ্যক আমার সুন্নাহ অনুসরণ করা এবং আমার পরে সুপথপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাহ্ অনুসরণ করা। তোমরা এটাকে মাড়ির দাঁত দিয়ে আঁকড়ে ধর।" তিনি বিদাত থেকে সাবধান করে বলেছেন: "তোমরা নব চালুকৃত বিষয়াবলী থেকে বেঁচে থাক। কেননা প্রত্যেক বিদাত পথভ্রষ্টতা"।[সুনানে তিরমিযি (আল-ইলম/২৬০০), আলবানী 'সহিহ সুনানে তিরমিযি' গ্রন্থে (২১৫৭) হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]
ইবনুল কাইয়্যেম (রহঃ) বলেছেন:
আল্লাহ্ তাআলা ইখলাস ও অনুসরণকে আমল কবুলের দুটো হেতু হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। যদি কোন একটি হেতু না পাওয়া যায় তাহলে সে আমল কবুল হবে না।[আর্-রূহ (১/১৩৫)]
আল্লাহ্ তাআলা বলেন: "যিনি মৃত্যু ও জীবনকে সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য; তোমাদের মধ্যে কে আমলে ভাল।" ফুযাইল (রহঃ) বলেন: আমলে ভাল অর্থাৎ আমলটি অধিকতর ইখলাসপূর্ণ ও অধিকতর শুদ্ধ। আল্লাহ্ই তাওফিকদাতা।