সোমবার 22 জুমাদাল ছানী 1446 - 23 ডিসেম্বর 2024
বাংলা

শরীরচর্চার জন্য মাছ শিকার করার হুকুম

প্রশ্ন

শরীরচর্চা বা ব্যায়ামের জন্য মাছ শিকার করা কি জায়েয? উল্লেখ্য, আমরা শিকার করা মাছ নষ্ট করব না কিংবা অনর্থক কিছু করব না; বরং আমরা সেগুলো খাব।

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

এক:

মৌলিকভাবে শিকারের হুকুম হল বৈধতা। কেবল ইহরামকারী ব্যক্তি কিংবা হারাম এলাকায় অবস্থানকারী ব্যক্তির জন্য তা বৈধ নয়। এটি স্থলভাগের পশু শিকারের হুকুম। আর মাছ শিকার ও জলভাগের শিকার ইহরামকারীর জন্যেও হারাম নয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন: “তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে সমুদ্রের শিকার ও তার খাদ্য; তোমাদের ও মুসাফিরদের ভোগের জন্য। আর স্থলের শিকার তোমাদের উপর হারাম করা হয়েছে যতক্ষণ তোমরা ইহরাম অবস্থায় থাক। আর তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর, যার দিকে তোমাদেরকে একত্র করা হবে।”[মায়েদা: ৯৬]

কেউ যদি বৈধ নিয়তে বৈধ পশু শিকার করে; যেমন: বিক্রয়ের মাধ্যমে উপার্জন করা বা খাওয়া; তাহলে আলেমদের ঐক্যমতে সেটা শিকারে কোনো সমস্যা নেই।

অনুরূপভাবে মাছ শিকারে যার প্রাথমিক উদ্দেশ্য বৈধ হয়; যেমন: অবসর কাটানো, বিনোদন ইত্যাদি; তবে শিকার করা মাছ বিক্রি করে, খেয়ে বা অন্য কোনোভাবে সে কাজে লাগায় হয়; তাহলে এতেও কোনো আপত্তি নেই।

দুই:

আর যদি মাছ শিকারীর শিকারকৃত মাছের বিশেষ কোনো প্রয়োজন না থাকে; শুধু শখের বশে কিংবা খেল-তামাশার জন্য শিকার করে; তাহলে শিকারের হুকুম বৈধতা থেকে মাকরূহ (অপছন্দীয়তায়)-এ পরিবর্তিত হবে।

‘আল-মাউসুয়াতুল ফিকহিয়্যা’ (২৮/১১৫)-তে এসেছে: ‘যখন জানা গেল যে প্রাণী শিকারের মূল বিধান বৈধতা; সুতরাং শিকার করাকে উত্তমতার খেলাফ, মাকরূহ, হারাম, মুস্তাহাব বা ওয়াজিব এমন কোনো হুকুম প্রদান করা যাবে না সবিশেষ কিছু দলীলের ভিত্তিতে সবিশেষ কিছু অবস্থা ছাড়া। সেগুলো আমরা নিম্নে উল্লেখ করব:

... যদি শিকারের উদ্দেশ্য থাকে খেল-তামাশা ও বিনোদন তাহলে এটা মাকরূহ। যেহেতু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “প্রাণ আছে এমন কোনো কিছুকে তোমরা লক্ষ্যবস্তু বানাবে না।”[মুসলিম: ১৯৫৭] [সমাপ্ত]

একাধিক আলেম এমন অবস্থায় শিকার করাকে সুস্পষ্টভাবে মাকরূহ বলেছেন।

নাফরাওয়ী মালেকী রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “জবাই করার উদ্দেশ্য থাকার পরও বিনোদনের জন্য পশু শিকার করা মাকরূহে তানযীহি (অপছন্দনীয়)।”[আল-ফাওয়াকেহ আদ-দাওয়ানী (১/৩৯০)]

শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যা রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “প্রয়োজনে শিকার করা জায়েয। আর যে শিকার শুধু বিনোদন বা খেল-তামাশার জন্য সেটা মাকরূহ। যদি এ শিকারের মাধ্যমে মানুষের ফসল ও সম্পদের ওপর সীমালঙ্ঘন করা হয় তাহলে সেটা হারাম।”[আল-ফাতাওয়া আল-কুবরা (৫/৫৫০)]

শাইখ মনসুর আল-বুহূতী রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “বিনোদনের জন্য পশু শিকার করা মাকরূহ। যেহেতু সেটি অনর্থক কাজ। আর যদি শিকার করতে গিয়ে মানুষের ফসল ও সম্পদের ওপর সীমালঙ্ঘনের মাধ্যমে জুলুম করা হয় তাহলে সেটা হারাম। কারণ উদ্দিষ্ট কাজের যে হুকুম উক্ত কাজের মাধ্যমেরও একই হুকুম।’[কাশ্‌শাফুল ক্বিনা (৬/২১৩)]

ইবনে আবিদীন রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “মাজমাউল ফাতাওয়াতে রয়েছে: প্রমোদের জন্য পশু শিকার করা মাকরূহ।”[রাদ্দুল মুহতার (৫/২৯৭)]

তিন:

যদি শিকারের উদ্দেশ্য হয় বিনোদন ও শরীরচর্চা; কিন্তু শিকারকৃত পশু খাওয়া, বিক্রি করা কিংবা উপহার দেওয়ার মাধ্যমে সেটাকে কাজে লাগানো হয় তাহলে সেক্ষেত্রে মাকরূহ হওয়ার পূর্বোক্ত কারণ দূর হয়ে গেল এবং ‘শিকার করা’ এর মূল হুকুম বৈধতায় ফিরে এল। কারণ এই অবস্থায় শিকার করা অনর্থক কাজ নয়। এর মধ্যে সম্পদ নষ্ট করা নেই কিংবা পশুকে কষ্ট দেওয়া নেই।

শাইখ মুহাম্মাদ ইবন ইব্রাহীম রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “শরিয়তে অনর্থক পশু মারার বৈধতা নেই। যেমন: যারা গাড়িতে বসে পশু শিকার করে; শিকারকৃত পশু নিজে খাওয়া বা অন্যকে খাওয়ানোর কোনো উদ্দেশ্য তাদের নেই। হাদীসে আছে: “কেউ যদি অন্যায়ভাবে একটা চড়ুই পাখিকে হত্যা করে সেটার ব্যাপারে সে জিজ্ঞাসিত হবে।”[ফাতাওয়া ওয়া-রাসাইলু মুহাম্মাদ ইবন ইব্রাহীম আলুশ শাইখ (১২/২৩১)]

শাইখ বিন বায রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “যদি খাওয়া বা বিক্রি করার মত কোন শরয়ী কল্যাণে শিকার করে; যেমন হাউবারা, হরিণ, খরগোশ বা অন্য কোন বৈধ প্রাণী খাওয়া বা বিক্রি করার জন্য শিকার করে তাহলে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু যদি হত্যা করার জন্য বা ফেলে রাখার জন্য শিকার করে তাহলে সেটা অনুচিত। এর সর্বনিম্ন অবস্থা হলো চূড়ান্ত মাত্রায় মাকরূহ হওয়া। তাই খাওয়ার উপযুক্ত কোনো প্রাণী তখনই শিকার করবে যখন এতে কোন কল্যাণ থাকবে। হয় সেটা নিজে খাবে নতুবা দরিদ্রদেরকে খাওয়াবে ও সেটা উপহার দিবে কিংবা বিক্রি করবে। কিন্তু বিনোদনের জন্য হলে জায়েয নেই। কোন মুমিনের এ বিনোদন করা উচিত না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি খাওয়ার উদ্দেশ্য ছাড়া অন্যান্য উদ্দেশ্যে পশু শিকার করতে নিষেধ করেছেন। অর্থাৎ পশু খাওয়া ও এর থেকে উপকৃত হওয়ার উদ্দেশ্য ছাড়া।”[শাইখ ইবনে বাযের ওয়েবসাইট থেকে গৃহীত]

সারকথা হলো:

প্রশ্নে উল্লেখিত অবস্থায় শিকার করা মুবাহ তথা বৈধ। এতে কোনো সমস্যা নেই। যেহেতু শিকারকৃত পশু খাওয়া, বিক্রি করা বা অনুরূপ কিছু করার মাধ্যমে এর থেকে উপকৃত হওয়া যাচ্ছে।

আল্লাহই সর্বজ্ঞ।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব