আলহামদু লিল্লাহ।.
মৃতব্যক্তির জন্য কাঁদা জায়েয; যদি এর সাথে বিলাপ , গালে চপেটাঘাত করা...যুক্ত না হয়। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর মেয়ে যয়নব (রাঃ)-এর ছেলের মৃত্যুতে কেঁদেছেন। যেমনটি সহিহ বুখারীতে (১২৮৪) উসামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন: “একবার আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে ছিলাম। ইতোমধ্যে তাঁর এক মেয়ের পক্ষ থেকে তাঁর কাছে লোক আসল; তার ছেলে মারা যাচ্ছেন। এজন্য তাঁকে ডাকার জন্য পাঠিয়েছেন...। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উঠে গেলেন, তাঁর সাথে সাদ বিন উবাদা ও মুআয বিন জাবালও উঠে গেলেন। তখন শিশুটিকে তাঁর কাছে দেয়া হলো। সে সময় শিশুটির প্রাণ ছটপট করছিল; যেন সেটি পানির মশকের ভেতর। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চক্ষুদ্বয় অশ্রু সিক্ত হল। তা দেখে সাদ বললেন: ইয়া রাসূলুল্লাহ্! এটি কী? তিনি বললেন: এটি রহমত; যা আল্লাহ্ তাঁর বান্দাদের মনে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ্ তাঁর বান্দাদের মধ্যে কেবল দয়াবানদের প্রতি দয়া করেন।”
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর মায়ের কবর যিয়ারত করে কাঁদলেন এবং তাঁর পাশে যারা ছিল তাদেরকেও কাঁদালেন। এরপর বললেন: আমি আমার প্রভুর কাছে অনুমতি চেয়েছি মায়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার; কিন্তু তিনি অনুমতি দেননি। তখন আমি তাঁর কবর যিয়ারত করার অনুমতি চেয়েছি। তিনি আমাকে সে অনুমতি দিয়েছেন।”[সহিহ মুসলিম (৯৭৬)]
যদি কান্নার সাথে গালে চপেটাঘাত করা, জামাকাপড় ছেড়া ও আল্লাহ্র তাকদীরের প্রতি অসন্তুষ্টি যুক্ত হয়; তাহলে সেটি নাজায়েয। যেহেতু আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি গালে চপেটাঘাত করে, জামাকাপড় ছিড়ে এবং জাহেলী যামানার আর্তনাদ করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়।”[সহিহ বুখারী (১২৯৪)]
নববী (রহঃ) বলেন:
“মর্সিয়া-ক্রন্দন, বিলাপ করা, গালে চড় মারা, জামাকাপড় ছিড়ে ফেলা, চেহারাতে খামচি মারা, চুল ছেড়া ও হায়হুতাশ করে আর্তনাদ করা; এই সবকিছু মাযহাবের আলেমদের সর্বসম্মতিক্রমে হারাম। জমহুর আলেম স্পষ্টভাবে হারাম বলেছেন...। একদল আলেম হারাম হওয়ার মর্মে ইজমা উদ্ধৃত করেছেন।”[শারহুল মুহায্যাব (৫/২৮১) থেকে সমাপ্ত]
ইবনে আব্দুল বার্র বলেন:
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: فإذا وجب فلا تبكين باكية (যদি অবধারিত হয়ে যায়; তাহলে ক্রন্দনকারিনী হবে না)। এখানে অবধারিত হওয়া দ্বারা উদ্দেশ্য মৃত্যু। অর্থ হচ্ছে: (আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ) মৃত্যুর পর চিৎকার ও বিলাপের কোন কিছু জায়েয নয়। তবে অশ্রু-বিজর্সন ও অন্তর ভারাক্রান্ত হওয়া বৈধ হওয়ার পক্ষে সাব্যস্ত হাদিস রয়েছে এবং একদল আলেম এর পক্ষে রয়েছেন।”[আল-ইসতিযকার (৩/৬৭) থেকে সমাপ্ত]
শাইখ বিন বায (রহঃ) বলেন:
“মুসলমানদের উপর আবশ্যকীয় এসব ক্ষেত্রে ধৈর্য ধারণ করা ও সওয়াব প্রাপ্তির নিয়ত করা; বিলাপ না করা, জামাকাপড় না ছেড়া, গালে চপেটাঘাত না করা ইত্যাদি। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি গালে চপেটাঘাত করে, জামাকাপড় ছিড়ে এবং জাহেলী যামানার আর্তনাদ করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়।” যেহেতু তিনি সহিহ হাদিসে আরও বলেছেন: “আমার উম্মতের মধ্যে জাহেলী যামানার চারটি বিষয় রয়েছে; যেগুলো তারা ত্যাগ করবে না: আত্মগুণ নিয়ে অহংকার করা, বংশের উপর কালিমালেপন করা, নক্ষত্রের মাধ্যমে বৃষ্টি প্রার্থনা এবং মৃতের জন্য বিলাপ করা।
যেহেতু তিনি আরও বলেছেন: “যদি বিলাপকারিনী নারী মৃত্যুর পূর্বে তাওবা না করে তাহলে তাকে এমন অবস্থায় তোলা হবে যে, তার গায়ে থাকবে আলকাতরার জামা এবং অভ্যন্তরীণ জামা হবে (তথা চামড়া হবে) খোসপাঁচড়ার।”[সহিহ মুসলিম]
নিয়াহা (বিলাপ) দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে: উচ্চস্বরে মৃতের জন্য ক্রন্দন করা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন: “আমি প্রত্যেক উচ্চস্বরে ক্রন্দনকারিনী, মাথা-মুণ্ডণকারিনী ও জামা-ছিন্নকারিনী থেকে মুক্ত”। “মাথা-মুণ্ডণকারিনী” দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে- যে নারী মুসিবতের সময় মাথার চুল ফেলে দেয় কিংবা টেনে তুলে ফেলে। “জামা-ছিন্নকারিনী” দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে- যে নারী বিপদের সময় গায়ের জামা ছিড়ে ফেলে। আর “উচ্চস্বরে ক্রন্দনকারিনী” দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে- যে নারী মুসিবতের সময় কণ্ঠস্বরকে উঁচু করে। এর প্রত্যেকটি অধৈর্যের বহিঃপ্রকাশ। তাই কোন নারী বা পুরুষের জন্য এর কোনটি করা জায়েয নয়...”।[মাজমুউল ফাতাওয়া (১৩/৪১৪) থেকে সমাপ্ত]
আল্লাহই সর্বজ্ঞ।