আলহামদু লিল্লাহ।.
এক:
আল্লাহ্ তাআলা তাঁর পবিত্র কিতাবে সম্মানিত রাসূলগণের কাছে ওহী পাঠানোর পদ্ধতি সম্পর্কে জানিয়েছেন। এর মধ্যে একটি পদ্ধতি হচ্ছে আড়াল থেকে কথা বলা। তিনি বলেন: “আর কোনো মানুষের এমন মর্যাদা নেই যে, আল্লাহ্ তার সাথে সরাসরি কথা বলবেন; তবে ওহীর মাধ্যমে অথবা পর্দার আড়াল থেকে বলেন; অথবা তিনি কোন রাসূল পাঠান, যে তাঁর অনুমতিক্রমে তিনি যা চান তা পৌঁছে দেয়। নিশ্চয়ই তিনি সুউচ্চ, প্রজ্ঞাময়।”[সূরা শুরা, আয়াত: ৫১]
তিনি আরও বলেন: “এই রাসূলদেরই কতককে কতকের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি। তাদের মধ্যে কেউ আছে যার সাথে আল্লাহ্ (সরাসরি) কথা বলেছেন, আবার কতককে অনেক উচ্চ মর্যাদায় উন্নীত করেছেন।”[সূরা বাক্বারা, আয়াত: ২৫৩]
আল্লাহ্ যে যে রাসূলের সাথে সরাসরি কথা বলেছেন তাঁদের মধ্যে রয়েছেন:
১। আদম আলাইহিস সালাম।
আবু উমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, এক লোক বলল: ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আদম কি নবী ছিলেন? তিনি বললেন: হ্যাঁ; তাঁর সাথে (আল্লাহ্) কথা বলেছেন। লোকটি বলল: তাঁর মাঝে ও নূহ আলাইহিস সালামের মাঝে কত সময়? তিনি বললেন: বিশ শতাব্দী।[সহিহ ইবনে হিব্বান (১৪/৬৯), মুহাক্কিক শুআইব আল-আরনাউত হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]
২। মুসা আলাইহিস সালাম।
আল্লাহ্ তাআলা বলেন: “আল্লাহ্ মুসার সাথে (সরাসরি) কথা বলেছেন।”[সূরা নিসা, আয়াত: ১৬৪] তিনি আরও বলেন: “আর মূসা যখন আমাদের নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হলেন এবং তার প্রভু তার সাথে কথা বললেন।”[সূরা আরাফ, আয়াত: ১৪৩] তিনি আরও বলেন: “তিনি বললেন: ‘হে মূসা! আমি আপনাকে আমার রিসালাত ও কথা দিয়ে মানুষের উপর মনোনীত করেছি।”[সূরা আরাফ, আয়াত: ১৪৪]
৩। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম:
আল্লাহ্র সাথে তাঁর সরাসরি কথা বলা তাঁর ঊর্ধ্বাকাশের ভ্রমণ (মেরাজ)-এর রাতে সাব্যস্ত। সে ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণীতে এসেছে: আমি ফিরে এলাম এবং মুসা আলাইহিস সালামকে অতিক্রম করে যাচ্ছিলাম। তিনি বললেন: আপনাকে কী আদেশ করা হয়েছে? তিনি বললেন: আমাকে প্রতিদিন পঁশ্চাশ ওয়াক্ত নামাযের আদেশ করা হয়েছে। তিনি বললেন: নিশ্চয় আপনার উম্মত প্রতিদিন পঁশ্চাশ ওয়াক্ত নামায পড়তে পারবে না। আল্লাহ্র শপথ! আপনার পূর্বে মানুষের ব্যাপারে আমার অভিজ্ঞতা হয়েছে। বনী ইসরাঈলের পেছনে আমি সর্বাত্মক চেষ্টা ব্যয় করেছি। আপনি আপনার প্রভুর কাছে ফিরে যান এবং তাঁর কাছে আপনার উম্মতের জন্য সহজায়ন প্রার্থনা করুন। তখন আমি ফিরে গেলাম এবং তিনি দশ ওয়াক্ত কমিয়ে দিলেন। এরপর আমি মুসা আলাইহিস সালামের কাছে ফেরত আসলাম। তিনি আগের মত আবার বললেন...আপনার প্রভুর কাছে ফিরে যান এবং আপনার উম্মতের জন্য সহজায়ন প্রার্থনা করুন। তিনি বললেন: আমি আমার প্রভুর কাছে প্রার্থনা করতে করতে লজ্জায় পড়ে গেছি। কিন্তু আমি সন্তুষ্ট ও মেনে নিয়ে নিচ্ছি।[সহিহ বুখারী (৩৬৭৪) ও সহিহ মুসলিম (১৬২)]
হাফেয ইবনে হাজার (রহঃ) বলেন:
আল্লাহ্ তাঁর নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে মিরাজের রাত্রিতে কোন মাধ্যম ছাড়া কথা বলার সপক্ষে যে সব দলিল পেশ করা হয় তার মধ্যে এটি সর্বাধিক শক্তিশালী।[ফাতহুল বারী (৭/২১৬)]
ইবনে কাছির (রহঃ) বলেন:
“তাদের মধ্যে কেউ আছে যার সাথে আল্লাহ্ (সরাসরি) কথা বলেছেন: অর্থাৎ মুসা আলাইহিস সালাম ও মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। অনুরূপভাবে আদম আলাইহিস সালাম; যেমনটি আবু যার (রাঃ) থেকে সহিহ ইবনে হিব্বান বর্ণিত হাদিসে উদ্ধৃত হয়েছে।
“আবার কতককে অনেক উচ্চ মর্যাদায় উন্নীত করেছেন”: যেমনটি মিরাজের হাদিসে সাব্যস্ত হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আসমানসমূহে নবীদেরকে আল্লাহ্র কাছে তাঁদের মর্যাদার তারতম্যের ভিত্তিতে দেখেছেন।[তাফসিরে ইবনে কাছির (১/৬৭০)]
ইবনে কাছির (রহঃ) আবু যার (রাঃ) এর যে হাদিসের দিকে ইঙ্গিত করছেন সেটি ‘সহিহ ইবনে হিব্বান’-এ (২/৭৬) রয়েছে। শাইখ শুআইব আল-আরনাউত সে হাদিসটি সম্পর্কে বলেন: এর সনদ খুবই দুর্বল।[সমাপ্ত]
আবু উমামা (রাঃ) এর পূর্বোক্ত হাদিস এই হাদিসের প্রয়োজন পূরণ করে দেয়।
দুই:
মুসা আলাইহিস সালামকে বিশেষভাবে ‘কালিমুল্লাহ্’ (আল্লাহ্র কথক) বলার কারণ:
শাইখ আব্দুর রহমান আল-মাহমুদ (হাফিঃ) বলেন:
আল্লাহ্ তাআলা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও আদম আলাইহিস সালামের সাথে কথা বলা সত্ত্বেও মুসা আলাইহিস সালামকে ‘কালিমুল্লাহ্’ (আল্লাহ্র কথক) নামে অভিহিত করার কারণ সম্ভবতঃ এটা যে, (সঠিক জ্ঞান আল্লাহ্র কাছে): আল্লাহ্ তাআলা তাঁর সাথে পৃথিবীতে কথা বলেছেন এবং তখন মুসা আলাইহিস সালাম মানব প্রকৃতির উপরে ছিলেন। পক্ষান্তরে, আদম আলাইহিস সালামের সাথে কথা বলেছেন; তখন আদম আসমানে ছিলেন এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালামের সাথে কথা বলেছেন; কিন্তু তখন তিনি তার দেহ ও রূহসমেত ঊর্ধ্বাকাশে (মিরাজে) গমন করেছেন। আর মুসা আলাইহিস সালামের সাথে কথা বলেছেন তখন মুসা ভূপৃষ্ঠে ছিলেন। এটি মুসা আলাইহিস সালামের বিশেষত্ব। তাঁর প্রতি ও আমাদের নবীর প্রতি আল্লাহ্র রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক।
[তাইসিরু লুমআতিল ইতিকাদ (পৃষ্ঠা-১৫২)]
আল্লাহই সর্বজ্ঞ।