আলহামদু লিল্লাহ।.
মানুষের উপর যাদু কিংবা জ্বিনের প্রভাব বাস্তব; অস্বীকার করার কিছু নেই। কিন্তু একজন মুসলিম তার জিন্দেগীতে যে সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হয় সে সবগুলোকে যাদু বা জ্বিনের প্রভাবের সাথে সম্পৃক্ত করাটা অনুচিত। এটি করার ফলে ব্যক্তি নানা সংশয় ও কল্পনার মধ্যে বাস করবে এবং দিনের পর দিন এটি বাড়তে থাকবে ও সুদৃঢ় হবে।
একজন মুসলিমের কর্তব্য প্রথমে নিজের অবস্থা বিচার করা: আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য সবকিছুর মূলধন এবং সকল কল্যাণের কারণ। আর আল্লাহ্র অবাধ্যতা সকল অকল্যাণের কারণ। তাই একজন মুসলিমের উচিত আল্লাহ্র আনুগত্যের ব্যাপারে সচেষ্ট হওয়া এবং তাঁর অবাধ্যতা থেকে বেঁচে থাকা। কারণ উত্তম জীবন হচ্ছে মুমিনদের জন্য যারা নেক আমল করে: “যে পুরুষ বা নারী ঈমানদার অবস্থায় সৎকাজ করবে তাকে আমি উত্তম জীবন দান করব এবং অবশ্যই তাদেরকে তাদের শ্রেষ্ঠ কাজের পুরস্কার দেব।”[সূরা আন-নাহল, ১৬: ৯৭] আর দুর্দশাগ্রস্ত জীবন হচ্ছে তার জন্য যে আল্লাহ্র যিকির (স্মরণ) থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়: “আর যে আমার স্মরণ থেকে বিমুখ হবে তার জন্য রয়েছে কষ্টের জীবন এবং আমি তাকে কিয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উঠাব।”[সূরা ত্বহা, ২০: ১২৪]
অবাধ্যতা ও বিমুখতা যত তীব্র হবে কষ্ট ও সংকট তত তীব্র হবে।
এরপর আসবে উপায়-উপকরণ গ্রহণ করার পালা; চাকুরীর সন্ধান করার মাধ্যমে, অলসতা না করা এবং কর্মক্ষেত্রে বা অন্য ক্ষেত্রে মানুষ যে কষ্ট পায় সেটাতে ধৈর্য ধরা; যাতে করে এক পর্যায়ে আল্লাহ্ তাকে তাওফিক দেন এবং তার ধারণার বাইরে থেকে তাকে জীবিকা দান করেন।
অনুরূপভাবে আপনি পরিবারের সদস্যদের মাঝে অনেক সমস্যা বিদ্যমান থাকার যে কথাটি উল্লেখ করেছেন সেক্ষেত্রে প্রত্যেকের উচিত নিজেকে সংশোধন করা। প্রত্যেকে নিজেকে উত্তম চরিত্রে ভূষিত করার মাধ্যমে, অধিক ধৈর্য, সহ্য, খারাপ আচরণের বদলে ভাল আচরণ করার মাধ্যমে এবং এই সমস্যাগুলোর কারণ নির্ণয়ের মাধ্যমে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যে কারণগুলো নিয়ে আলোচনা পর্যালোচনার তেমন কিছু থাকে না। আর যদি প্রকৃতপক্ষে কিছু কারণ থেকে থাকে তাহলে শান্ত ও ভালোবাসার পরিবেশে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা; যাতে সে কারণগুলো দূর করা যায়।
এগুলো করার সাথে সাথে আপনি নির্ভরযোগ্য কোন ঝাড়ফুঁককারীর কাছে যেতে কোন বাধা নেই; যিনি আপনাকে এই যাদুকে পরাজিত করতে সাহায্য করবেন। যদি সত্যিই কোন যাদু থেকে থাকে। আমরা আপনাকে এই পরামর্শই দিচ্ছি।
এর সাথে সূরা বাক্বারা পড়ার ক্ষেত্রে আপনার দৃঢ় সংকল্প থাকা চাই; তা আপনার জন্য যত কঠিনই হোক না কেন। কারণ এটি চিকিৎসা ও সমাধানের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। এক্ষেত্রে অবহেলা করা বা কসুর করা উচিত হবে না। এমন যেন না হয় এক্ষেত্রে কসুর করে পরে যাদু, সংকট ও সমস্যার অভিযোগ করবেন...।
আর সত্তর হাজার মানুষের হাদিস: এই সত্তর হাজার মানুষ এরা সর্বোত্তম মানুষ নয়, আর না তারা জান্নাতের সর্বোচ্চ মর্যাদাধারী। হতে পারে কোন মানুষের হিসাব নেয়া হবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং জান্নাতে এই সত্তর হাজার ব্যক্তির চেয়ে উচ্চ স্তরে থাকবে যেমনটি শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া উল্লেখ করেছেন।
তাছাড়া এই সত্তর হাজার ব্যক্তি এই মহান মর্যাদা তথা বিনা হিসাবে ও বিনা আযাবে জান্নাতে প্রবেশ করা কেবল ঝাড়ফুঁক বর্জন করার কারণে লাভ করেনি। বরং তাদের তাওহীদের পরিপূর্ণতা ও আল্লাহ্র উপর তাওয়াক্কুলের পরিপূর্ণতার কারণে লাভ করেছে। পরিপূর্ণ তাওহীদ ও পরিপূর্ণ তাওয়াক্কুল ছিল সর্বক্ষেত্রে তাদের জীবনাদর্শ।
তদুপরি ঝাড়ফুঁক তলব করা হারাম নয়; মাকরুহও নয়। বরং কোন কোন আলেম হাদিসটির অর্থ এভাবে করেছেন যে: তারা যে ঝাড়ফুঁক তলব করে না কিংবা যে ঝাড়ফুঁক নিজেরাও করে না; সেটা হচ্ছে জাহেলী ঝাড়ফুঁক, যাদুকরদের মন্ত্র ইত্যাদি। পক্ষান্তরে কুরআন দিয়ে, আল্লাহ্র যিকির দিয়ে শরিয়তসম্মত ঝাড়ফুঁক নিষিদ্ধ নয়; এমনকি সেটা যদি রোগী তলব করে তবুও।
কুস্তাল্লানি (রহঃ) বলেন:
“তারা ঝাড়ফুঁক তলব করে না”: অর্থাৎ তারা সাধারণভাবে কোন ঝাড়ফুঁক তলব করে না। কিংবা তারা জাহেলী ঝাড়ফুঁক তলব করে না।[ইরশাদুস সারী (৯/২৭১) থেকে সমাপ্ত]
দেখুন: ইবনুল হাজারের ‘ফাতহুল বারী’ (১১/৪১০)।
এই অভিমতের ভিত্তিতে: রোগীর ঝাড়ফুঁক তলব করা তথা শরয়ি ঝাড়ফুঁক তলব করা তাকে সত্তর হাজার ব্যক্তির গণ্ডি থেকে বের করে দিবে না।
তাছাড়া এই সত্তর হাজার ব্যক্তির অন্তর্ভুক্ত হওয়ার নিমিত্তে ব্যক্তি ঝাড়ফুঁক বর্জন করে উদ্বিগ্ন, অস্থির, পেরেশান, সংকীর্ণ চিত্ত, সন্দেহপ্রবণ ও অধৈর্য হয়ে বসে থাকা প্রজ্ঞাপূর্ণ নয়। এগুলোর কোনটি এই সত্তর হাজার ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য নয়। বরং আপনার মত যার অবস্থা তার উচিত কোন ঝাড়ফুঁককারীর কাছে যাওয়া, আল্লাহ্র্ আনুগত্য পালনে পরিশ্রমী হওয়া এবং তাঁর অবাধ্যতা থেকে দূরে থাকা। আশা করি আপনি এই সত্তর হাজার ব্যক্তির মর্যাদা থেকেও বঞ্চিত হবেন না।
আর যদি ধরে নেয়া হয় যে, আপনি এই সত্তর হাজার ব্যক্তির মধ্যে পড়বেন না তদুপরি আল্লাহ্র অনুগ্রহ প্রশস্ত। আশা করি আল্লাহ্ আপনাকে জান্নাতে এই বিশেষ মর্যাদার বদলে অন্য মর্যাদা দিবেন।
আল্লাহ্ তাআলা আপনাকে তাওফিক দিন।
আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।