শুক্রবার 21 জুমাদাল আউওয়াল 1446 - 22 নভেম্বর 2024
বাংলা

নামাযের সিজদা সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ হওয়ার পর ভুলক্রমে সহু সিজদা না দিলে সে নামাযের হুকুম কি?

প্রশ্ন

জনৈক ব্যক্তির নামাযে সিজদা সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ হয়েছে। তিনি শাইখ বিন বাযের ফতোয়ার আলোকে একীনের (নিশ্চিত জ্ঞানের) উপর নির্ভর করে অতিরিক্ত একটি সিজদা দিয়েছেন। সালাম ফেরানোর পর আর কোন সহু সিজদা দেননি। তিনি মনে করেছেন তাকে আর কোন সিজদা দিতে হবে না। তার নামায কি সহিহ হল?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

এক:

যে ব্যক্তি নামাযের সিজদা সংখ্যা নিয়ে সন্দেহে পড়েছেন; অর্থাৎ তিনি কি এক সিজদা দিয়েছেন; না দুই সিজদা দিয়েছেন এ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যান তাহলে তিনি একীনের (নিশ্চিত জ্ঞানের) উপর নির্ভর করবেন। একীন হচ্ছে- ছোট সংখ্যাটি হিসাব করা। তাই তিনি শুধু একটি সিজদা দিয়েছেন ধরে নিয়ে দ্বিতীয় সিজদাটি আদায় করবেন। এরপর সালাম ফেরানোর আগে সহু সিজদা দিয়ে নেয়া উত্তম। এটি শাইখ বিন বায (রহঃ) এর অভিমত।

শাইখ বিন বায (রহঃ) বলেন: “আর যদি সন্দেহটি নামাযের মধ্যে হয় তাহলে সে ব্যক্তি একীনের উপর নির্ভর করবে এবং সিজদাটি আদায় করবে। যদি সন্দেহ হয় এক সিজদা দিয়েছে, নাকি দুই সিজদা দিয়েছে তাহলে সে ব্যক্তি দ্বিতীয় সিজদাটি আদায় করবে। এটি প্রথম, কিংবা দ্বিতীয়, কিংবা তৃতীয় কিংবা চতুর্থ যে রাকাতের ক্ষেত্রে হোক না কেন। এরপর সালাম ফিরানোর পূর্বে সহু সিজদা দিবে; যদি সালাম ফিরানোর পরেও দেয় তাতে কোন অসুবিধা নেই। তবে আগে দেয়াই উত্তম”।[শাইখ বিন বাযের ফতোয়াসমগ্র (১১/৩০) থেকে সমাপ্ত]

আর কোন কোন আলেমের মতে, নামাযের কোন রুকন আদায়ে সন্দেহ হওয়া নামাযের রাকাত সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ হওয়ার মত। যদি সন্দেহকারীর কাছে কোন একটি সম্ভাবনাকে অগ্রগণ্য মনে না হয় তাহলে সে ব্যক্তি একীনের উপর নির্ভর করবে; একীন হচ্ছে ছোট সংখ্যাটি হিসাব করা। এ অবস্থায় সে ব্যক্তি সালাম ফিরানোর পূর্বে সহু সিজদা আদায় করবে।

আর যদি তার কাছে কোন একটি সম্ভাবনাকে অগ্রগণ্য মনে হয় তাহলে সে ব্যক্তি তার কাছে যে সম্ভাবনাটি অগ্রগণ্য মনে হয় সেটার উপর নির্ভর করে নামায চালিয়ে যাবে এবং সালাম ফিরানোর পূর্বে সহু সিজদা দিবে।

মুরদাওয়ি (রহঃ) বলেন:

“গ্রন্থকারের বক্তব্য: কারো কোন একটি রুকন ছুটে গেছে সন্দেহ হওয়া সে রুকন আদৌ পালন না করার মত এটাই মাযহাবের অভিমত। মাযহাবের অধিকাংশ আলেম এ মতটি গ্রহণ করেছেন। তাদের অনেকে এ মতটিকে অকাট্য বলেছেন। কারো কারো মতে, এ মাসয়ালাটি কোন একটি রাকাত ছেড়ে দেয়ার মাসায়ালার সাথে কিয়াসযোগ্য। তাই সে ব্যক্তি নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করবে এবং প্রবল ধারণার ভিত্তিতে আমল করবে।”[আল-ইনসাফ (২/১৫০) থেকে সমাপ্ত]

শাইখ উছাইমীন (রহঃ) বলেন:

“যদি কারো কোন একটি রুকন ছুটে গেছে সন্দেহ হয় সেটা কোন রুকন ছেড়ে দেয়ার মতই”। অর্থাৎ সে ব্যক্তি যদি সন্দেহ করে যে, সে কি রুকনটি আদায় করেছে নাকি আদায় করেনি তার হুকুম হবে যে ব্যক্তি আদৌ রুকনটি আদায় করেনি সে ব্যক্তির হুকুমের মত। এর উদাহরণ হচ্ছে- কোন মুসল্লি দ্বিতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়ানোর পর তার সন্দেহ হল সে কি সিজদা দুইটা দিয়েছে নাকি একটা দিয়েছে...? কোন কিছু আদায় না-করার সন্দেহ ঐ কাজটি আদৌ না-করার মত। কারণ কোন কিছু না-করা নিয়ে যখন সন্দেহ হয় তখন সে জিনিসের মূল অবস্থা হচ্ছে— না-করা। কিন্তু তার যদি প্রবল ধারণা হয় যে, সে রুকনটি আদায় করেছে তাহলে অগ্রগণ্য মতানুযায়ী সে প্রবল ধারণার ভিত্তিতে নীতিগতভাবে সে রুকনটি আদায় করেছে ধরা হবে এবং তাকে এ রুকনটি পুনরায় আদায় করতে হবে না। কারণ আমরা ইতিপূর্বে উল্লেখ করেছি যে, যদি কেউ নামাযের সংখ্যা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে তাহলে সে ব্যক্তি তার প্রবল ধারণার উপর নির্ভর করবে। তবে সালাম ফিরানোর পর তাকে সহু সিজদা দিতে হবে।[আল-শারহুল মুমতি (৩/৩৮৪) থেকে সমাপ্ত]

দুই:

আলেমগণ উল্লেখ করেছেন, ভুলক্রমে যে ব্যক্তির সহু সিজদা ছুটে গেছে যদি খুব বেশি বিলম্ব না হয় তাহলে সে তখনি সেটা কাযা করে নিবে। আর যদি দীর্ঘ সময় বিলম্ব হয় তাহলে মুসল্লির উপর থেকে সহু সিজদা আদায় করার দায়িত্ব বাদ যাবে এবং তার নামায সহিহ হবে।

আল-বুহুতি (রহঃ) বলেন:

“কেউ যদি সালামের আগে আদায় করা মুস্তাহাব এমন কোন সহু সিজদা দিতে ভুলে যায়; সে সহু সিজদাটি যদি ওয়াজিব হয় তাহলে সে ব্যক্তি ওয়াজিব হিসেবে এটাকে কাযা করে নিবে। আর যদি অন্য কোন নামায শুরু করে দেয় তাহলে ঐ নামাযের সালাম ফিরানোর পর সহু সিজদা কাযা করবে; যদি এর মধ্যে বেশি বিলম্ব না হয়; ওজু না ভাঙ্গে এবং মসজিদ থেকে বের না হয়। যেহেতু সিজদাটি আদায় করার সময় এখনো আছে। আর যদি প্রথা অনুযায়ী খুব দেরী হয়ে যায়, কিংবা ওজু ছুটে যায় কিংবা মসজিদ থেকে বেরিয়ে যায় তাহলে সহু সিজদা আর কাযা করা যাবে না। যেহেতু এটি আদায় করার সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে। তবে তার নামায শুদ্ধ হবে। যেমন অন্য যে কোন ওয়াজিব ভুলক্রমে পরিত্যাগ করলেও নামায শুদ্ধ হয়।”[মুনতাহাল ইরাদাত (১/২৩৫) থেকে সমাপ্ত]

যে ব্যক্তি এ মাসয়ালার বিধান জানে না এমন ব্যক্তি ও জেনে ভুলকারী উভয়ের জন্য হুকুম অভিন্ন।

ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটির ফতোয়া সমগ্র খণ্ড-২ (৬/১০) তে এসেছে-

যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে সহু সিজদা ছেড়ে দেয় তাহলে তার নামায বাতিল হয়ে যাবে এবং তাকে পুনরায় নামায পড়তে হবে। আর যদি ভুলক্রমে কিংবা অজ্ঞতাবশত ছেড়ে দেয় তাহলে তাকে পুনরায় নামায পড়তে হবে না। তার নামায সহিহ।[সমাপ্ত]

শাইখ বিন বায (রহঃ) প্রশ্ন করা হয়েছিল যে,

যদি কেউ নামাযের রাকাতে বেশি করে কিংবা কম করে এবং সহু সিজদা না দেয় তাহলে তার নামায কি বাতিল হয়ে যাবে?

তিনি জবাবে বলেন:

এক্ষেত্রে বিস্তারিত বিশ্লেষণ প্রয়োজন। যদি সে ব্যক্তি সহু সিজদা দেয়ার হুকুম জানার পরও নামাযের মধ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে সহু সিজদা না দেয় তাহলে তার নামায বাতিল হয়ে যাবে। আর যদি অজ্ঞতাবশত কিংবা ভুলক্রমে সহু সিজদা না দেয় তাহলে তার নামায শুদ্ধ হবে...।[নুরুন আলাদ-দারব ফতোয়াসমগ্র থেকে সংক্ষেপিত ও সমাপ্ত]

আল্লাহই ভাল জানেন।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব