আলহামদু লিল্লাহ।.
এক:
নিঃসন্দেহে কুরআন অধ্যয়ন করা, তেলাওয়াত করা ও মুখস্থ করা উত্তম নেকীর কাজ। কুরআন ভুলে যাওয়ার আশংকা রোধ করার জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিয়মিত কুরআন পড়ার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন। অর্থাৎ মুখস্থকৃত অংশ নিয়মিত পুনঃপাঠ করা ও বারবার তেলাওয়াত করা। অন্যদিকে কুরআন ভুলে যাওয়া গর্হিত কাজ। কারণ এতে আল্লাহর কিতাব থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া ও এ কিতাবকে পরিহার করার আলামত পাওয়া যায়।
দুই:
কুরআন ভুলে যাওয়ার হুকুম কি এ ব্যাপারে আলেমগণ মতানৈক্য করেছেন: কেউ বলেন: কুরআন ভুলে যাওয়া কবিরা গুনাহ। কোন কোন মতে, গুনাহর কাজ; তবে কবিরা গুনাহর পর্যায়ে পৌঁছবে না। কারো কারো মতে, এটি এমন একটি মুসিবত যা বান্দার অন্তর ও দ্বীনদারিকে আক্রান্ত করে। এর ফলে বান্দার কোন কোন আমলের উপর আল্লাহর শাস্তি নামতে পারে। যদিও এটি কবিরা গুনাহ নয় বা পাপ নয়। এ মাসয়ালায় এটি সর্বাধিক অগ্রগণ্য অভিমত।
কিন্তু, কোন হাফেযে কুরআন এর জন্য কুরআন তেলাওয়াতে গাফলতি করা কিংবা নিয়মিত তেলাওয়াতে অবহেলা করা সমীচীন হয়। বরং হাফেযে কুরআনের উচিত সওয়াবের আশা নিয়ে দৈনিক নির্দিষ্ট একটি পরিমাণ তেলাওয়াত করা; যাতে করে সে তার তেলাওয়াত ধরে রাখতে পারে, ভুলে না যায় এবং কুরআনের হুকুম-আহকাম থেকে উপকৃত হতে পারে।
তিন:
কুরআনের কিছু অংশ ভুলে যাওয়া কুরআন পড়া ছেড়ে দেয়ার কারণে ঘটে থাকে। কুরআন পড়া ছেড়ে দেয়ার কিছু কিছু রূপ অন্য কিছু রূপের চেয়ে জঘন্য। ইবনুল কাইয়্যেম (রহঃ) ‘আল-ফাওয়ায়েদ’ নামক গ্রন্থে (পৃষ্ঠা-৮২) বলেন: তবে কুরআন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া ও কুরআনকে বাদ দিয়ে অন্য কিছু নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে কুরআন ভুলে যাওয়া মুসিবত। সওয়াব থেকে বঞ্চিত হওয়ার সাথে সাথে এ মুসিবতের কারণে আরও অনেক মুসিবত সৃষ্টি হয়।
যে ব্যক্তি কুরআনের কিছু অংশ মুখস্থ করার পর ভুলে গেছে তার জন্য নিম্নোক্ত উপদেশ:
- যে সূরাগুলো মুখস্থ ছিল সেগুলো পুনঃ পুনঃ পাঠ করা; যাতে দ্বিতীয়বার সেগুলোকে মজবুতভাবে মুখস্থ করে নিতে পারে।
- পুনঃপাঠ নিয়মিত অব্যাহত রাখা; যাতে পুনরায় ভুলে না যায়।
- একজন দক্ষ শাইখের কাছে মুখস্থ ও পুনঃপাঠ চালু রাখা।
- কুরআন শরীফের বড় বড় যেসব অংশ মুখস্থ করেছে যেমন পারা ও হিযব ইত্যাদি; সেগুলো পুনঃপাঠ করা এবং সম্পূর্ণ সূরা মুখস্থ করার চেষ্টা করা। এভাবে পূর্বে মুখস্থকৃত অংশ পুনঃপাঠ করা ও মুখস্থকৃত অংশ পুনরুদ্ধার করার প্রক্রিয়া তাকে গোটা সূরাটি মুখস্থ করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করবে।
- পক্ষান্তরে, কুরআনের ছোট ছোট যে অংশগুলো মুখস্থ করে ভুলে গেছে যেমন- দুই আয়াত বা তিন আয়াত ইত্যাদি সেগুলো নিয়ে ব্যস্ত হবে না এবং সেগুলো থেকে যা ভুলে গেছে সেসব অংশ স্মরণ করার কষ্ট করা দরকার নেই।
যেমনটি ইতিপূর্বে উল্লেখ করেছি তার উচিত সূরা ও বড় বড় অংশগুলো মুখস্থকরণে সচেষ্ট হওয়া। ছোট ছোট যে অংশগুলো মুখস্থ করেছে এবং কিছু কিছু ভুলে গেছে সেগুলো স্মরণ করতে না পারার কারণে সে ব্যক্তি গুনাহগার হবে না। ব্যক্তি নিজে নিজের অবস্থা বুঝার চেষ্টা করবে। যদি কোন পাপের কারণ হয় তাহলে সে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে ইস্তিগফার করবে ও তওবা করবে। আর যদি অবহেলা, আখেরাতের প্রতি বিমুখতা ও দুনিয়া নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ার কারণে তাহলে সে ব্যক্তি আখেরাত অভিমুখী হবে। কেননা আখেরাতই হল- উত্তম ও স্থায়ী।
এরপর বলব, সে ব্যক্তির উচিত অনতিবিলম্বে ভুলে যাওয়া অংশগুলো পুনরায় মুখস্থ করে নেয়া। উৎসাহ নিয়ে চেষ্টা করলে হিম্মত পাবে; আর বিলম্ব করলে ও ঢিলেমি দিলে জড়তায় পাবে।
ইবনুল মুবারক (রহঃ) আল-যুহদ নামক গ্রন্থে (১/৪৬৯) ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: “এ অন্তরগুলোর স্পৃহা ও চঞ্চলতা আছে। আবার জড়তা ও পিছুটান আছে। সুতরাং স্পৃহা ও চাঞ্চলতার সময় অন্তরগুলোকে কাজে লাগাও এবং জড়তা ও পিছুটানের সময় ছাড় দাও।”।
কোন সন্দেহ নেই যে ব্যক্তি কুরআনকে হারিয়ে ও ভুলে গিয়ে নিজের দুর্বলতা ও অপরাধবোধ অনুভব করছে এবং কিভাবে পুনরায় মুখস্থ করা যায় সে বিষয়ে জানতে চাচ্ছে এটি তার অন্তরের গাফলতি থেকে জেগে উঠার আলামত। এই যার অবস্থা তার উচিত অনতিবিলম্বে পুনরায় মুখস্থ করার জন্য উদ্যোগী হওয়া; দেরী না করা। এ ক্ষেত্রে সে যদি তার প্রচুর ব্যস্ততা, দায়দায়িত্ব ও পরিবারকে সময় দেয়ার কারণে শুধু অবসর সময় ছাড়া অন্য কোন সময় পুনঃপাঠ করার সুযোগ না পায় তাতেও কোন অসুবিধা নেই।
আল্লাহই ভাল জানেন।