আলহামদু লিল্লাহ।.
রমযানের রোযা পালন ইসলামের অন্যতম একটি রুকন (মূল স্তম্ভ)। কোন মুসলিমের জন্য ওজর ছাড়া রমযানের রোযা ত্যাগ করা বৈধ নয়। যে ব্যক্তি শরিয়ত অনুমোদিত কোন ওজরের কারণে (যেমন- অসুস্থ থাকা, সফরে থাকা, ঋতুগ্রস্ত হওয়া) রমযানের রোযা বাদ দিয়েছে কিংবা ভঙ্গ করেছে; যে রোযাগুলো সে ভেঙ্গেছে সে রোযাগুলোর কাযা পালন করা আলেমগণের ইজমার ভিত্তিতে তার উপর ফরয। যেহেতু আল্লাহ্ তাআলা বলেন, “আর কেউ অসুস্থ থাকলে কিংবা সফরে থাকলে অন্য সময় এই সংখ্যা পূরণ করবে।”[সূরা বাক্বারা, ২ : ১৮৫]
আর যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে অবহেলা করে রমযানের রোযা বর্জন করেছে, সেটা একটিমাত্র রোযার ক্ষেত্রে হলেও (যেমন সে রোযার নিয়তই করেনি কিংবা কোন ওজর ছাড়া রোযা শুরু করে ভেঙ্গে ফেলেছে) সে কবিরা গুনাতে (মহাপাপে) লিপ্ত হয়েছে। তার উপর তওবা করা ফরয।
অধিকাংশ আলেমের মতে, সে যে দিনগুলোর রোযা ভেঙ্গেছে সে দিনগুলোর রোযা কাযা পালন করা তার উপর ফরয। বরং কেউ কেউ এই মর্মে ইজমা উল্লেখ করেছেন।
ইবনে আব্দুল বার বলেন: “গোটা উম্মত ইজমা করেছেন এবং সকলে উদ্ধৃত করেছেন যে, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে রোযা পালন করেনি, কিন্তু সে রমযানের রোযা ফরয হওয়ার প্রতি বিশ্বাসী, সে অবহেলা করে, অহংকারবশতঃ রোযা রাখেনি, ইচ্ছা করেই তা করেছে, অতঃপর তওবা করেছে: তার উপর রোযার কাযা পালন করা ফরয।”[আল-ইযতিযকার (১/৭৭) থেকে সমাপ্ত]
ইবনে কুদামা আল-মাকদিসি বলেন:
“আমরা এ ব্যাপারে কোন ইখতিলাফ জানি না। কেননা রোযা তার দায়িত্বে সাব্যস্ত হয়েছে। সুতরাং রোযা পালন করা ছাড়া তার দায়িত্ব মুক্ত হবে না। বরং যেভাবে ছিল সেভাবে তার দায়িত্ব থেকে যাবে।”[আল-মুগনি (৪/৩৬৫)]
স্থায়ী কমিটির ফতোয়াসমগ্রে (১০/১৪৩) এসেছে:
যে ব্যক্তি রোযা ফরয হওয়াকে অস্বীকার করে রোযা ত্যাগ করে সে ব্যক্তি সর্বসম্মতিক্রমে (ইজমার ভিত্তিতে) কাফের। আর যে ব্যক্তি অলসতা করে, কিংবা অবহেলা করে রোযা ছেড়ে দেয় সে কাফের হবে না। কিন্তু, সে ইসলামের সর্বজন স্বীকৃত (ইজমা সংঘটিত) একটি রুকন ছেড়ে দেওয়ার মাধ্যমে মহা বিপজ্জনক অবস্থার মধ্যে রয়েছে। নেতৃবর্গের কাছ থেকে সে শাস্তি ও সাজা পাওয়ার উপযুক্ত; যাতে সে এবং তার মত অন্যেরা এর থেকে নিবৃত্ত হয়। বরং কিছু কিছু আলেমের মতে, সেও কাফের। সে যে রোযাগুলো ভঙ্গ করেছে সেগুলোর কাযা পালন করা ও আল্লাহ্র কাছে তওবা করা তার উপর ফরয।[সমাপ্ত]
শাইখ বিন বায (রহঃ) কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: শরিয়ত অনুমোদিত কোন ওজর ছাড়া যে ব্যক্তি রমযান মাসের রোযা রাখে না তার হুকুম কী? তার বয়স প্রায় সতের বছর। তার কোন ওজর নেই। তার কি করা উচিত? তার উপর কি কাযা পালন করা ফরয?
জবাবে তিনি বলেন: হ্যাঁ, তার উপর কাযা পালন করা এবং তার অবহেলা ও বাড়াবাড়ির জন্য আল্লাহ্র কাছে তওবা করা ফরয।
তবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে এ সংক্রান্ত যে হাদিসটি বর্ণিত আছে: “যে ব্যক্তি কোন (শরয়ি) ছাড় ব্যতীত কিংবা রোগ ব্যতীত রমযান মাসের কোন একদিনের রোযা ভাঙ্গে সে সারা বছর রোযা রাখলেও কাযা পালন হবে না।” সে হাদিসটি দুর্বল, মুযতারিব, আলেমদের নিকট এটি সহিহ হাদিস নয়।[নুরুন আলাদ দারব ফতোয়াসমগ্র (১৬/২০১) থেকে সমাপ্ত]
কিছু কিছু আলেমের মতে, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে রমযানের রোযা রাখেনি তার উপর কাযা পালন নেই। বরং সে বেশি বেশি নফল রোযা রাখবে। এটি জাহেরি মতাবলম্বীদের মাযহাব। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া ও শাইখ উছাইমীন এ অভিমতটি পছন্দ করেছেন।
হাফেয ইবনে রজব হাম্বলি বলেন:
জাহেরি মতাবলম্বীদের অভিমত কিংবা তাদের অধিকাংশ আলেমের অভিমত হচ্ছে- ইচ্ছাকৃতভাবে রোযা ত্যাগকারীর উপর কাযা নেই। শাফেয়ির ছাত্র আব্দুর রহমান থেকে, শাফেয়ির মেয়ের ছেলে থেকেও এমন অভিমত বর্ণিত আছে। ইচ্ছাকৃতভাবে রোযা-নামায ত্যাগকারীর ক্ষেত্রে এটি আবু বকর আল-হুমাইদিরও উক্তি: ‘কাযা পালন করলে দায়িত্ব মুক্ত হবে না’। আমাদের মাযহাবের অনুসারী পূববর্তী একদল আলেমের অভিমতও এটাই; যেমন- আল-জুযজানি, আবু মুহাম্মদ আল-বারবাহারি, ইবনে বাত্তাহ্।”।[ফাতহুল বারী (৩/৩৫৫) থেকে সমাপ্ত]
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বলেন:
বিনা ওজরে নামায কিংবা রোযা ত্যাগকারী কাযা পালন করবে না।[আল-ইখতিয়ারাত আল-ফিকহিয়্যা (পৃষ্ঠা-৪৬০) থেকে সমাপ্ত]
শাইখ উছাইমীন বলেন:
আর যদি মূলতই সে ইচ্ছাকৃতভাবে কোন ওজর ছাড়া রোযা ত্যাগ করে; তাহলে অগ্রগণ্য মতানুযায়ী, তার উপর কাযা পালন করা আবশ্যক নয়। কেননা কাযা পালন করে তার কোন লাভ হবে না। যেহেতু তার থেকে সেটা কবুল করা হবে না। কারণ ফিকহী নীতি হচ্ছে, ‘যদি নির্দিষ্ট কোন সময়ের সাথে সংশ্লিষ্ট ইবাদত কোন ওজর ছাড়া উক্ত নির্দিষ্ট সময়ে পালন করা না হয় তাহলে তার থেকে সেটা কবুল করা হয় না।’।[মাজমুউল ফাতাওয়া (১৯/৮৯) থেকে সমাপ্ত]
সারকথা:
যে ব্যক্তি রমযানের রোযা ইচ্ছাকৃতভাবে বর্জন করবে অধিকাংশ আলেমের মতে, তার উপর কাযা পালন করা আবশ্যক। আর কিছু কিছু আলেমের মতে, কাযা পালন করা শরিয়তসিদ্ধ নয়। কেননা এটি এমন ইবাদত যে ইবাদতের সময় পার হয়ে গেছে। তবে, অধিকাংশ আলেম যে অভিমত প্রকাশ করেছেন সেটা অগ্রগণ্য। কেননা, রোযা এমন ইবাদত যা ব্যক্তির দায়িত্বে সাব্যস্ত হয়েছে; সুতরাং এটি পালন করা ছাড়া দায়িত্ব মুক্ত হবে না।