আলহামদু লিল্লাহ।.
এক:
অনেক নামাযী নর ও নারী শুচিবায়ু ও প্রকৃত ‘অনবরত অপবিত্রতা’ এ দুটোর মধ্যে পার্থক্য করতে পারেন না। আমরা আমাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি: সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষ যারা অনবরত অপবিত্রতার অভিযোগ করেন তারা আসলে সংশয় ও শুচিবায়ুগ্রস্ত। তাদের মুত্রনালীতে আসলে কিছু নাই। সেক্ষেত্রে তার কর্তব্য হলো এর প্রতিকারে সুস্পষ্ট ফতোয়া তলব করা। যাতে করে সেই ফতোয়ার আলোকে তিনি একীন (নিশ্চিত বিষয়)-এর উপর নির্ভর করতে পারেন এবং সংশয়ের দিকে ভ্রুক্ষেপ না করেন। এমনকি সংশয়ের সাথে যদি কিছু বাস্তব বিষয় মিশেও যায় তদুপরি তা ক্ষমার্হ; আলহামদু লিল্লাহ। শুচিবায়ু থেকে চিকিৎসা নিতে গিয়ে শুচিবায়ুগ্রস্ত ব্যক্তির কিছু কসুর হলেও আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন সেজন্য তাকে পাকড়াও করবেন না। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলো।
দুই:
অনেক মানুষ ‘অনবরত অপবিত্রতা’ অবস্থাটি বুঝার ক্ষেত্রে ভুল করেন। তাই কেউ কেউ ধারণা করেন যে, যদি তার থেকে কোন নাপাকি নির্গত হয় কিংবা অনুভব করা ছাড়া কিছু বাতাস বেরিয়ে পড়ে এর কারণে সেই ব্যক্তি ‘অনবরত অপবিত্রতাগ্রস্ত রোগীর’ সুবিধাগুলো গ্রহণ করতে পারেন। এটি যথাযথ ফিকহ (বুঝ) নয়। সঠিক হল মুসল্লি যদি সুনির্দিষ্ট নিয়মতান্ত্রিক এমন কোন সময় পান (এমনকি সেটা অল্প হলেও) যাতে তার প্রবল ধারণা হয় যে, এ সময়টিতে পেশাব বা বায়ু তার অনিচ্ছায় বের হয় না তাহলে তার উপর ওয়াজিব দেরী করে সে সময়টিতে নামায আদায় করা এবং সে সময় নামাযের জন্য ওযু করা এবং পরিপূর্ণভাবে নামাযটি আদায় করা। পক্ষান্তরে কেউ যদি ধারণা করেন যে, দিনে দুইবার বা তিনবার নিয়ন্ত্রণ ছাড়া পেশাব বের হওয়া কিংবা এখতিয়ার ছাড়া একবার বা কয়েকবার বায়ু বের হওয়ার মাধ্যমে তিনি ‘অনবরত অপবিত্রতায় আক্রান্ত’ ব্যক্তির সুযোগগুলো গ্রহণ করার উপযুক্ত হবেন তাহলে এটা ভুল ধারণা। ওজরগ্রস্ত হচ্ছেন ঐ ব্যক্তি যার হাদাছ (অপবিত্রতা) থামে না। যিনি নামাযটি শেষ করার মত সময় পান না এর মধ্যে অনিয়ন্ত্রিতভাবে হাদাছ (অপবিত্রতা) ঘটে যায়। কিংবা নিয়মতান্ত্রিকভাবে এমন কোন সময় পান না যে সময়টিতে এই অবস্থা স্থগিত হওয়ার আশা করা যায়; যে সময়ে তিনি নামায পড়তে পারবেন।
ইবনে নুজাইম হানাফি বলেন:
“ইস্তিহাযা ও ওজরগ্রস্ত ব্যক্তির হুকুম বলবৎ থাকবে যদি এক ওয়াক্ত নামাযের সময় অতিবাহিত হয়ে যায়; কিন্তু তারা যে অপবিত্রতার শিকার হয়েছে সেটি অল্প হলেও বিদ্যমান থাকে।”[আল-বাহরুর রায়েক (১/২২৮)]
পক্ষান্তরে মালেকি মাযহাবে কিছুটা শিথিলতা রয়েছে; তারা বলেন:
১। যদি অর্ধেক বা তদুর্ধ সময় জুড়ে হাদাছ (অপবিত্রতা) অনিয়ন্ত্রিত থাকে তাহলে ওযু ভঙ্গ হবে না; তবে ওযু করা মুস্তাহাব হবে।
২। আর যদি অর্ধেকের কম সময় জুড়ে অনিয়ন্ত্রিত থাকে তাহলে এর দ্বারা ওযু নষ্ট হয়ে যাবে।
শাইখ আল-দিরদির বলেন:
এমন ‘অনবরত অপবিত্রতা’ দ্বারা ওযু নষ্ট হবে যা বেশিরভাগ সময় স্থগিত থাকে; কম সময় চলমান থাকে। আর যদি অর্ধেক সময় জুড়ে চলমান থাকে তাহলে ওযু নষ্ট হবে না (বেশিরভাগ সময় বা গোটা সময় জুড়ে চলমান থাকলে তো আরও অধিক যুক্তিযুক্তভাবে নষ্ট হবে না)।[সমাপ্ত]
দুসুকি পাদটীকাতে বলেন: “গ্রন্থকার ‘অনবরত অপবিত্রতা’ কে নির্দিষ্ট করেননি; যাতে করে পেশাবের অপবিত্রতা, পায়খানার অপবিত্রতা, বায়ুত্যাগের অপবিত্রতা এবং বীর্য, মজি ও ওদির মত অপবিত্রতাগুলোও অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়।
জেনে রাখুন, গ্রন্থকার ‘অনবরত অপবিত্রতা’-র ক্ষেত্রে যে বিভাজন করেছেন সেটা মাগরিবীদের পদ্ধতি এবং মাযহাবে এটি প্রসিদ্ধ। আর মাযহাবের ইরাকী আলেমগণের মতে, ‘অনবরত অপবিত্রতা’ দ্বারা সাধারণভাবে ওযু নষ্ট হবে না। সর্বোচ্চ ওযু করা মুস্তাহাব হতে পারে; যদি গোটা সময়টা জুড়ে অপবিত্রতা চলমান না থাকে। আর যদি গোটা সময়টা জুড়ে অপবিত্রতা চলমান থাকে তাহলে ওযু করা মুস্তাহাব হবে না।”[হাশিয়াতুদ দুসুকি (১/১১৬-১১৭) থেকে সমাপ্ত]
ইমাম নববী বলেন:
“যদি ওযু করার পর রক্ত শুকিয়ে যায় এবং রক্ত বন্ধ হয়ে আবার ফিরে আসার পূর্বাভ্যাস তার না থাকে কিংবা অভ্যাস থাকলেও রক্ত বন্ধ থাকার সময়টি ওযু করা ও নামায পড়ার জন্য যথেষ্ট হয়: তাহলে ওযু করা ওয়াজিব।”[মুগনিল মুহতাজ (১/২৮৩)]
ইবনে কুদামা বলেন:
“যদি তার অভ্যাসে এমন থাকে যে, রক্ত এতটুকু সময় বন্ধ থাকে যে সময়টুকু পবিত্রতা অর্জন ও নামায আদায় করার জন্য যথেষ্ট তাহলে রক্ত চলমান থাকা অবস্থায় নামায পড়বে না; বরং বন্ধ হওয়ার অপেক্ষা করবে। তবে যদি ওয়াক্ত বেরিয়ে যাওয়ার আশংকা করে তাহলে ওযু করে নামায পড়ে নিবে।”[আল-মুগনী (১/২৫০)]
সারাংশ:
যদি আপনার এমন অভ্যাস থাকে যে, হাদাছ (অপবিত্রতা) এতুটুকু সময় স্থগিত থাকে যার মধ্যে নামায আদায় করার জন্য যথেষ্ট তাহলে আপনার উপর আবশ্যক হলো অপবিত্রতা স্থগিত হওয়ার অপেক্ষা করা এবং পরিপূর্ণ পবিত্র হয়ে নামায আদায় করা।
আর যদি হাদাছ (অপবিত্রতা) চলমান থাকে কিংবা নিয়মতান্ত্রিকভাবে স্থগিত হওয়ার কোন অভ্যাস না থাকে; বরং চলমান থাকে, হঠাৎ করে যে কোন সময় আবর্তিত হয়, কোন নিয়ম মেনে স্থগিত থাকে না: তাহলে কিঞ্চিত পরিমাণ নাপাকিও বের হলেও ডায়াপার পরুন, প্রত্যেক নামাযের জন্য ওযু করুন এবং আপনি যে অবস্থায় আছেন সে অবস্থায় নামায আদায় করুন।
আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।