রবিবার 21 জুমাদাল ছানী 1446 - 22 ডিসেম্বর 2024
বাংলা

হাদিস অস্বীকারকারী পিতার সাথে সদাচরণ

প্রশ্ন

আমি একটি অধার্মিক পরিবারে বাস করছি। পরিবার আমাকে নিপীড়ন করে, আমার সাথে বিদ্রূপ করে। আলহামদু লিল্লাহ্‌; আমি সুন্নাহ্‌কে আঁকড়ে ধরে আছি। আমার পিতা বিশ্বাস করেন: 'যে হাদিসগুলো কুরআনে উদ্ধৃত হয়েছে এমন বিষয়গুলোকে ব্যাখ্যা করে, যেমন নামায; সে হাদিসগুলো অনুসরণ করা আবশ্যক। আর যে হাদিসগুলো এমন কোন বিষয় উল্লেখ করে যা কুরআনে নেই, যেমন- বেগানা নারীর সাথে মুসাফাহা করা; সেগুলো অনুসরণ করা আবশ্যক নয়।' তাঁর আরও কিছু বিশ্বাস আছে। আমি জানি যে, পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার করা ওয়াজিব। আমার জন্যে কি আমার পিতার পিছনে নামায আদায় করা জায়েয হবে? যদি উত্তর না-সূচক হয় তাহলে আমার জন্যে কি এটা জায়েয হবে যে, আমি তাঁর সাথে নামায পড়ার ভান করব; যাতে করে আমি তাঁর ক্রোধের কারণ না হই এবং পরবর্তীতে আমি পুনরায় নামায পড়ে নিব?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

প্রশ্নকারী ভাই যে অবস্থায় আছেন আসলেই সেটা এক কঠিন পরিস্থিতি। একজন মুমিনের জন্য এমন পিতার সাথে বসবাস করা সহজ নয় যার মাঝে সঠিক মানহাজ থেকে, আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের পদ্ধতি থেকে বিচ্যুতি ও স্খলন রয়েছে। কিন্তু একজন মুসলিম সওয়াবপ্রাপ্তির প্রত্যাশা করবেন। এমন পিতার ব্যাপারে ধৈর্য ধারণ করা, কোমলভাবে তাঁকে নসিহত করার মাধ্যমে নেকী পাওয়ার আশা করবেন। পিতার উপর ছেলের ঔদ্ধত্য প্রকাশ পায় না কিংবা বাবার সম্মানহানি ঘটে না এমন উপযুক্ত পন্থাগুলো অবলম্বন করে সঠিক বিষয়টি জানানোর মাধ্যমে সওয়াব অর্জনের আশা করবেন; যে পন্থায় বাবা অনুভব করবে যে, এটি পিতৃত্বের স্বীকৃতিদানকারী, পিতার প্রতি সম্মান-প্রদর্শনকারী, সহানুভূতিশীল সন্তানের উপদেশ। ঠিক যেমনটি ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম কর্তৃক তাঁর পিতাকে দাওয়াত দানকালে ঘটেছিল। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: "আর স্মরণ করুন এ কিতাবে ইব্রাহীমকে; তিনি তো ছিলেন সিদ্দীক (সত্যনিষ্ঠ) ও নবী। যখন তিনি তার পিতাকে বললেন: আব্বু, আপনি এমন জিনিসের উপাসনা করেন কেন, যে জিনিস শুনে না, দেখে না এবং আপনার কোন উপকারই করে না? আব্বু! নিশ্চয় আমার কাছে এমন ইল্‌ম এসেছে যা আপনার কাছে আসেনি। কাজেই আমার অনুসরণ করুন; আমি আপনাকে সঠিক পথ দেখাব। আব্বু! শয়তানের উপাসনা করবেন না। নিশ্চয় শয়তান 'আর্‌রহমান'-এর চরম অবাধ্য। আব্বু! নিশ্চয় আমি আশংকা করছি যে, আপনাকে আর-রহমানের পক্ষ থেকে শাস্তি স্পর্শ করবে, তখন আপনি শয়তানের সঙ্গি হয়ে পড়বেন। (পিতা বলল) হে ইব্রাহিম! তুমি কি আমার উপাস্যদের থেকে বিমুখ? যদি তুমি নিবৃত্ত না হও তবে অবশ্যই আমি প্রস্তরাঘাতে তোমার প্রাণ নাশ করব; আর তুমি চিরতরে আমাকে ত্যাগ করে চলে যাও।"[সূরা মারিয়াম, আয়াত: ৪১-৪৭]

ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম পিতাকে ডাকার সবচেয়ে কোমল শব্দটি ব্যবহার করে বলেছেন: يَا أَبَتِ (আব্বু)। তিনি বলেননি যে, আমি আলেম; আপনি জাহেল। বরং তিনি বলেছেন: "নিশ্চয় আমার কাছে এমন ইল্‌ম এসেছে যা আপনার কাছে আসেনি"। পিতার প্রতি তিনি সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন এবং তাঁর নিরাপত্তার ব্যাপারে ব্যাকুলতা প্রকাশ করে বলেছেন: "আব্বু! নিশ্চয় আমি আশংকা করছি যে, আপনাকে আর-রহমানের পক্ষ থেকে শাস্তি স্পর্শ করবে"। যখন তাঁর পিতা সত্যকে প্রত্যাখ্যান করে তাঁকে প্রস্তরাঘাতে হত্যার হুমকি দিল তখন ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম আর কথা না বাড়িয়ে সর্বাত্মক শিষ্টাচার বজায় রেখে বললেন: আপনার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক এবং বললেন যে, তার জন্য তিনি ক্ষমা চাইবেন।

পিতাদের প্রতি নেককার সন্তানদের দাওয়াত এমনই হওয়া উচিত।

জেনে রাখুন, হাদিস অস্বীকার করা কিংবা কিছু হাদিস অস্বীকার করার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুতর। এ বিষয়ে বিস্তারিত অন্য কোন স্থানে আমরা আলোচনা করব; ইনশা আল্লাহ। এখানে আমরা সংক্ষেপে বলতে চাই: আপনার পিতার বিদাতটি যদি তাকে ইসলাম থেকে খারিজ করে দেয়ার পর্যায়ে হয়; যেমন তিনি চূড়ান্তভাবে হাদিসকে অস্বীকার করেন, তার সামনে প্রমাণাদি উপস্থাপন করা হয়েছে; কিন্তু তিনি হক্বকে অস্বীকার করছেন; তাহলে তার কুফরীর কারণে তার পিছনে আপনার নামায পড়া জায়েয হবে না। আর যদি আপনার পিতার বিদাত কুফুরীর পর্যায়ে না হয়; যেমন অবহেলা ও কসুরবশতঃ হাদিসে যে আমলের কথা এসেছে সেটা না মানেন; সেক্ষেত্রে তার পিছনে নামায পড়া আপনার জন্য জায়েয হবে এবং আপনার নামায সহিহ হবে। আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

সংযোজনী: এ প্রশ্নের ব্যাপারে শাইখ উছাইমীন (রহঃ) থেকে নিম্নোক্ত জবাব এসেছে:

হাদিস অস্বীকার করা হতে পারে অপব্যাখ্যামূলক কিংবা অবিশ্বাসমূলক। অবিশ্বাসমূলক এভাবে যে, সে ব্যক্তি বলে: আমি জানি যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ কথা বলেছেন। কিন্তু আমি সেটাকে অস্বীকার করি ও মানি না। যদি এ ধরণের অস্বীকার হয় তাহলে সে ব্যক্তি কাফের মুরতাদ (ইসলাম ত্যাগকারী); এমন ব্যক্তির পিছনে নামায পড়া জায়েয হবে না।

আর যদি তার অস্বীকার করাটা অপব্যাখ্যা নির্ভর হয়; তাহলে দেখতে হবে: যদি (আরবী) ভাষার আলোকে এমন ব্যাখ্যা করার অবকাশ থাকে এবং সে ব্যক্তি শরিয়তের উৎসসমূহ ও মূলভিত্তিগুলোর জ্ঞান রাখেন তাহলে তাকে কাফের গণ্য করা যাবে না; বরং তার অভিমতটি বিদাত হলে তাকে বিদাতীদের মধ্যে গণ্য করা হবে। তার পিছনে নামায পড়া যাবে; যদি না তার পিছনে নামায না পড়ার মধ্যে কোন কল্যাণের দিক থাকে; যেমন সে ব্যক্তি পিছু হটে এসে বিষয়টি নিয়ে পুনরায় চিন্তা করা; সেক্ষেত্রে তার পিছনে নামায না পড়া।

আপনার পিতার অবস্থা হচ্ছে তিনি হাদিসের কিছু অংশকে স্বীকার করেন; যে অংশটি কুরআনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ও কুরআনের ব্যাখ্যামূলক। অন্যদিকে তিনি হাদিসের অপর একটি অংশকে অস্বীকার করেন যাতে রয়েছে কুরআনের অতিরিক্ত কিছু। এ ধরণের বিদাত মারাত্মক বিদাত হিসেবে গণ্য; শরিয়তপ্রেণতা যে বিদাতের ব্যাপারে শাস্তির হুমকি দিয়েছেন। যেমনটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সাব্যস্ত হয়েছে: "আমি তোমাদের কাউকে তার গদির উপর উপবিষ্ট পাব না…"।

এটি একটি জঘন্য বিদাত; এমন বিদাতকারীর ব্যাপারে আশংকা হয়।

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

সূত্র: শাইখ মুহাম্মদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ