আলহামদু লিল্লাহ।.
তাওহীদের বাণী এর ধারককে আখিরাতে উপকৃত করবে, সে ব্যক্তি জান্নাতবাসী হবে, জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে; যদি সে এই বাণীর অর্থ জানে ও সে মোতাবেক আমল করে— এটি ইসলামী শরিয়ার সুবিদিত ও স্থিরীকৃত বিষয়।
শাইখ সুলাইমান বিন আব্দুল্লাহ্ বিন মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওয়াহ্হাব (রহঃ) বলেন:
“উবাদা বিন ছামেত (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দিবে যে, এক আল্লাহ্ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই; তাঁর কোন শরীক নেই এবং মুহাম্মদ তাঁর বান্দা ও রাসূল; ঈসা আল্লাহ্র বান্দা, তাঁর রাসূল ও তাঁর বাণী; যা তিনি মারিয়ামের প্রতি নিক্ষেপ করেছেন এবং তাঁর পক্ষ থেকে রূহ এবং জান্নাত সত্য ও জাহান্নাম সত্য— আল্লাহ্ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন; তার আমল যেমনই হোক না কেন।
হাদিসের উক্তি: “যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দিবে যে, এক আল্লাহ্ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই” অর্থাৎ যে ব্যক্তি এই বাণীর অর্থ জেনে ও এর দাবী মোতাবেক প্রকাশ্যে ও গোপনে কর্ম করার উদ্দেশ্য নিয়ে এই বাণী উচ্চারণ করবে; যেমনটি নির্দেশ করছে আল্লাহ্ তাআলার বাণী: فَاعْلَمْ أَنَّهُ لا إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ (অতএব জেনে নিন, আল্লাহ্ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই)। এবং তাঁর বাণী: إِلاَّ مَنْ شَهِدَ بِالْحَقِّ وَهُمْ يَعْلَمُونَ (তবে যারা জেনে সত্য সাক্ষ্য দেয় তাদের কথা আলাদা)। তবে এর অর্থ না জেনে ও দাবী মোতাবেক আমল না করে এই বাণী মুখে উচ্চারণ করলে আলেমদের ইজমার ভিত্তিতে এটি কোন উপকারে দিবে না।”[তাইসিরুল আযিযিল হামিদ (পৃষ্ঠা-৫১)]
তবে প্রত্যেক মুসলিমের উপর এই বাণীর অর্থ ও দাবী এজমালিভাবে (সামগ্রকিভাবে) জানা ফরয। এটাই যথেষ্ট। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে এমনটি জানা যায় না যে, তিনি প্রত্যেক নও মুসলিমের জন্য এই শর্তগুলো কিতাবপুস্তকে যেভাবে বিস্তারিতভাবে সেইভাবে ব্যাখ্যা করতেন।
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বলেন:
“কোন সন্দেহ নাই যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা নিয়ে এসেছেন সেটার প্রতি সাধারণ ও এজমালিভাবে (সামগ্রিকভাবে) ঈমান আনা প্রত্যেক ব্যক্তির উপর ফরয। এতেও কোন সন্দেহ নাই যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা নিয়ে এসেছেন সেটা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জানা ফরযে কিফায়া। কেননা তা আল্লাহ্ তার রাসূলকে যা দিয়ে প্রেরণ করেছেন সেটা পৌঁছিয়ে দেয়ার মধ্যে পড়ে। কুরআন তাদাব্বুর (অনুধাবন), অনুধ্যান, বুঝা, কিতাব ও হিকমতের জ্ঞান, যিকির মুখস্তকরণ, কল্যাণের দিকে আহ্বান, সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ, হেকমত-ওয়ায-উত্তম পন্থায় তর্কের মাধ্যমে প্রভুর দিকে ডাকা ইত্যাদি যা আল্লাহ্ উম্মাহ্র উপরে ফরয করেছেন সেটার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং এটি তাদের উপর ফরযে কিফায়া।”[দারউ তাআরুযিল আকলি ওয়াল নাকল (১/৫১)]
এই শর্তগুলো মুখস্ত করা প্রত্যেক মুসলিমের উপর ফরয নয় এবং এগুলো না-জানা তার ঈমানকে ত্রুটিযুক্ত করবে না। বরঞ্ছ নির্দেশ হচ্ছে এই শর্তগুলো মোতাবেক আমল করা এবং ঈমানকে শুদ্ধ করা।
একজন মুসলিম তিনি সাধারণ মানুষ হলেও এই মোতাবেক আমল করেন; যখন থেকে তিনি স্বীয় অন্তরের উপর আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের ভালোবাসাকে, তাঁদের আনুগত্য করার ভালোবাসাকে, শরয়ি দলিলগুলোর প্রতি সম্মানপ্রদর্শনকে এবং যা কিছুর সংবাদ তার কাছে পৌঁছেছে সাধ্যানুযায়ী সেগুলোর উপর আমল করাকে আবশ্যক করে নিয়েছেন।
শাইখ হাফেয আল-হাকামী (রহঃ) বলেন:
“লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ কেবল মৌখিকভাবে বলার দ্বারা ব্যক্তি উপকৃত হবে না; যতক্ষণ না এই সাতটি শর্ত পূর্ণ না করে। শর্তগুলো পূর্ণ করার অর্থ হলো: বান্দার মধ্যে এগুলো পাওয়া যাওয়া এবং বান্দা এগুলোর উপর অটল থাকা; এগুলোর সাথে সাংঘর্ষিক কিছু ব্যতিরেকে।
এর উদ্দেশ্য এটা নয় যে, গুণে গুণে এ শর্তগুলোর শব্দাবলী মুখস্ত করা। কত সাধারণ মানুষের মাঝে এ শর্তগুলো পাওয়া যায় এবং এগুলো তিনি পূর্ণ করেন; কিন্তু তাকে যদি বলা হয়: শর্তগুলো বলেন তো; বলতে পারবেন না।
আবার এ শর্তগুলোর শব্দাবলী মুখস্তকারী কত হাফেয রয়েছে; কিন্তু সে এ শর্তগুলোর মধ্যে তীরের মত ছুটাছুটি করে। আপনি দেখবেন যে, সে এমন অনেক কিছুতে লিপ্ত হয় যা এই শর্তবলীর সাথে সাংঘর্ষিক। তাওফিক আল্লাহ্র হাতে এবং আল্লাহই্ সহায়।”[মাআ’রিজুল কাবুল (২/৪১৮) থেকে সমাপ্ত]
শাইখ আব্দুল আযিয বিন বায (রহঃ) বলেন:
“সকল মুসলিমের উপর ফরয হলো: এই কালিমা বাস্তবায়ন করা; এর শর্তগুলো রক্ষা করার মাধ্যমে। যখনই কোন মুসলিমের মাঝে এই শর্তগুলোর মর্ম পাওয়া যাবে এবং এর উপর অবিচলতা পাওয়া যাবে তখনই সে মুসলিম; যার রক্ত ও সম্পদ হারাম; এমনকি সে যদি এই শর্তগুলো বিস্তারিতভাবে না জেনে থাকে তবুও। কেননা উদ্দেশ্য হচ্ছে সত্যকে জানা এবং সে অনুযায়ী আমল করা। যদিও কোন মুমিন শর্তগুলোর বিস্তারিত বিবরণ না জানে।”[মাজমুউ ফাতাওয়াস শাইখ বিন বায (৭/৫৮)]
তবে এই শর্তগুলো জানা ফরযে কিফায়া। মুসলিম উম্মাহর মধ্যে এমন কেউ থাকা আবশ্যক যিনি এই শর্তগুলো জানবেন এবং মানুষকে শিক্ষা দিবেন। এটি আল্লাহ্ যে দ্বীন প্রচারের দায়িত্ব দিয়ে তাঁর রাসূলকে পাঠিয়েছেন সেই দ্বীন প্রচারের অন্তর্ভুক্ত; যেমনটি শাইখুল ইসলামের পূর্বোক্ত উক্তিতে এসেছে।
শাইখুল ইসলাম আরও বলেন:
“পক্ষান্তরে, মুসলমানদের ব্যক্তি বিশেষের উপর যা জানা ফরয সেটা ব্যক্তির সক্ষমতা, প্রয়োজন, জ্ঞান ও ব্যক্তি হিসেবে তার উপর যা জানা ফরয সেটার অনুপাতে ভিন্ন ভিন্ন হবে। যে ব্যক্তি কোন ইলম অর্জন করতে অক্ষম বা কোন সূক্ষ্ম ইলম বুঝতে অক্ষম তার উপরে সেটা ফরয নয়; যা সক্ষম ব্যক্তির উপর ফরয। যে ব্যক্তি দলিলগুলো শুনেছে ও বুঝেছে তার উপর তফসিলি ইলমের এমন কিছু অর্জন করা ফরয; যা যে ব্যক্তি দলিলগুলো শুনেনি তার উপরে ফরয নয়। মুফতি, মুহাদ্দিস ও তর্কবিদের উপর এমন কিছু ফরয যা যারা এই শ্রেণীর নয় তাদের উপর ফরয নয়।”[দারউ তাআরুদুল আকল ওয়াল নাকল (১/৫১) থেকে সমাপ্ত]
আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।