আলহামদু লিল্লাহ।.
এক:
নীচের দুটো আলামতের কোন একটির মাধ্যমে হায়েয থেকে পবিত্র হওয়া জানা যায়:
১। সাদা স্রাব নির্গত হওয়া। সেটা হচ্ছে স্বচ্ছ পানি; নারীরা যে পানিটা চিনে থাকে।
২। স্থানটি সম্পূর্ণরূপে শুকিয়ে যাওয়া। অর্থাৎ স্থানটির ভেতরে যদি কটন বা এ জাতীয় অন্য কিছু রাখা হয় তাহলে পরিষ্কার বেরিয়ে আসে। কটনের মধ্যে রক্তের দাগ, হলেদেটে বা লালচে দাগ থাকে না।
নারীর উচিত গোসল করার ক্ষেত্রে তাড়াহুড়া না করা; যাতে করে পবিত্র হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারে।
ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন:
হায়েযের আগমন ও প্রস্থান শীর্ষক পরিচ্ছেদ। নারীরা আয়েশা (রাঃ) এর কাছে ন্যাকড়ার থলেটি পাঠাত; যে ন্যাকড়াতে হলদেটে পানি থাকত। তখন তিনি বলতেন: তোমরা তাড়াহুড়া করো না; যতক্ষণ পর্যন্ত না সাদা স্রাব দেখতে পাও। তিনি এর দ্বারা উদ্দেশ্য করেছেন: হায়েয থেকে পবিত্রতা। যায়েদ বিন ছাবেতের মেয়ের কাছে খবর পৌঁছেছে যে, নারীরা রাতের বেলায় পবিত্রতা পরীক্ষা করে দেখার জন্য চেরাগ চেয়ে পাঠাত। তখন তিনি বললেন: আগের নারীরা তো এভাবে করতেন না। তিনি তাদের এ কর্মের সমালোচনা করলেন।"[সমাপ্ত]
দুই:
যদি কোন নারী ফজরের আগে তার পবিত্র হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হয় তাহলে তার উপর রোযা রাখা আবশ্যক হবে।
আর যদি পবিত্রতার ব্যাপারে নিশ্চিত না হন তাহলে তার রোযা সহিহ হবে না; এমনকি যদি ধরে নেয়া হয় যে, সারাদিনে তার থেকে কোন কিছু নির্গত হয়নি তবুও। কেননা হায়েয বন্ধ হয়ে গেছে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া ছাড়া রোযার নিয়ত করা শুদ্ধ নয়।
তিন:
যদি কোন নারী পবিত্রতার ব্যাপারে নিশ্চিত না হয়ে প্রথম রাত্রিতে গোসল করে ফেলেন; এরপর ফজরের আগে পবিত্রতার ব্যাপারে নিশ্চিত হন এবং পুনরায় গোসল না করে রোযা রাখেন ও নামায পড়েন তাহলে তার রোযা সহিহ হবে; কিন্তু নামায সহিহ হবে না। কারণ রোযার জন্য কেবল হায়েযের রক্ত বন্ধ হওয়া শর্ত; যদি গোসল নাও করে। কিন্তু নামাযের জন্য অবশ্যই গোসল করতে হবে। আর হায়েযের রক্ত বন্ধ হয়েছে কিনা এ ব্যাপারে সন্দেহ থেকে যাওয়ার কারণে তার প্রথম গোসল শুদ্ধ নয়।
"মুনতাহাল ইরাদাত" গ্রন্থে (১/৫২) বলেন: "'হায়েয ও নিফাসের গোসল করার জন্য শর্ত হল এ দুটো থেকে অবসর হওয়া।' অর্থাৎ হায়েয ও নিফাস বন্ধ হওয়া। যেহেতু এ দুটো চলমান থাকাটা গোসলের সাথে সাংঘর্ষিক"।[সমাপ্ত]
"কাশ্শাফুল ক্বিনা" গ্রন্থে (১/১৪৬) গোসল ফরয হওয়ার কারণগুলো সম্পর্কে বলেন: "পঞ্চম কারণ হল: হায়েয নির্গত হওয়া"। দলিল হচ্ছে ফাতিমা বিনতে আবি হুবাইশ (রাঃ)কে লক্ষ্য করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: "(হায়েয) যখন চলে যাবে তখন গোসল করে নামায পড়বে"।[মুত্তাফাকুন আলাইহি]
এবং তিনি উম্মে হাবিবা (রাঃ), সাহলা বিনতে সুহাইল (রাঃ) ও হামনা (রাঃ) প্রমুখ নারীদেরকে এ নির্দেশ দিয়েছেন। এবং এর পক্ষে সমর্থন রয়েছে আল্লাহ্তাআলার এই বাণীতে: "তারপর তারা যখন প্রকৃষ্টভাবে পবিত্রতা অর্জন করবে তখন তাদের কাছে যাও।" [সূরা বাক্বারা, আয়াত: ২২২] অর্থাৎ তারা যখন গোসল করবে। এখানে স্ত্রী গোসল করার আগে স্বামীকে সহবাস করতে বারণ করা হয়েছে। এর থেকে প্রমাণ হয় যে, গোসল করা ওয়াজিব। কারণের সাথে বিধানকে সম্পৃক্ত করার হেতুবশতঃ রক্তপাত শুরু হওয়ার মাধ্যমেই গোসল ফরয হয়েছে। আর রক্তপাত বন্ধ হওয়া গোসল শুদ্ধ হওয়ার জন্য শর্ত।[সমাপ্ত]
আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।