আলহামদু লিল্লাহ।.
যে ব্যক্তি নামায আদায়কালে ভূমিকম্প বা অগ্নিকাণ্ডের মত কোন দুঘর্টনা শুরু হয়েছে এবং সে ব্যক্তির প্রবল ধারণা হয় যে, এ দুঘর্টনাতে সে আক্রান্ত হবে, যদি সে নামাযের স্থান থেকে বেরিয়ে যায় তাহলে বেঁচে যাবে সেক্ষেত্রে পালিয়ে যাওয়া এবং বাঁচার চেষ্টা করা তার উপর আবশ্যক। বের হয়ে সে দুঘর্টনার অবস্থাভেদে তার অবশিষ্ট নামায পূর্ণ করবে কিংবা নামায ছেড়ে দিবে। তার যদি ধারণা হয় যে, নামাযের স্থানে থাকলে তার মৃত্যু হবে সেক্ষেত্রে তার জন্য সেখানে অবস্থান করা জায়েয হবে না। যদি থেকে যায় তাহলে সে যেন নিজেকে ধ্বংসের দিকে নিক্ষেপ করল। তদ্রূপ অন্য কাউকে মৃত্যু থেকে বাঁচানোর জন্য নামায দেয়াও তার উপর আবশ্যক; যেমন পানিতে ডুবে যাওয়া থেকে, আগুনে পুড়ে যাওয়া থেকে কিংবা কূপে পড়ে যাওয়া থেকে।
এ বিষয়ের মূল দলিল হল আল্লাহ্ তাআলার বাণী: “তোমরা নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে নিক্ষেপ করো না। আর ভাল কাজ কর; যারা ভাল কাজ করে আল্লাহ্ তাদেরকেই ভালোবাসেন।”[সূরা বাক্বারা, আয়াত: ১৯২] এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া কিংবা অন্যকে ক্ষতিগ্রস্থ করা নয়”।[মুসনাদে আহমাদ ও সুনানে ইবনে মাজাহ (২৩৪১) এবং আলবানী হাদিসটিকে ‘সহিহ ইবনে মাজাহ’ গ্রন্থে সহিহ বলেছেন]
কাশ্শাফুল ক্বিনা গ্রন্থে (১/৩৮০) বলেন: “যে কাফেরের জান নিরাপদ— যিম্মী হওয়ার কারণে, কিংবা চুক্তিবদ্ধ হওয়ার কারণে কিংবা নিরাপত্তা দেয়ার কারণে তাকে কূপ ও এ জাতীয় অন্য কিছুতে পড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করা আবশ্যক। যেমন কোন সাপ যদি তার উপর আক্রমণ করে। যেমনিভাবে কোন মুসলিমকে এসব থেকে রক্ষা করা আবশ্যক। যেহেতু উভয় প্রাণই মাসুম (নিরাপত্তাপ্রাপ্ত)।
পানিতে ডুবে যাচ্ছে কিংবা আগুনে পুড়ে যাচ্ছে এমন ব্যক্তিকে রক্ষা করা আবশ্যক। এর জন্য নামায ছেড়ে দিতে হবে; সেটা ফরয নামায হোক কিংবা নফল নামায হোক। এর প্রত্যক্ষ মর্ম হল: এমনকি যদি ওয়াক্ত একেবারে সংকীর্ণ হয়ে যায় তবুও। যেহেতু কাযা পালন করার মাধ্যমে নামাযের প্রতিকার করার সুযোগ আছে। কিন্তু পানিতে পড়ে যাওয়া ব্যক্তি কিংবা এ জাতীয় অন্য কোন দুঘর্টনার শিকার ব্যক্তির ক্ষেত্রে সে সুযোগ নেই। যদি পানিতে পড়া ব্যক্তি বা এ জাতীয় অন্য দুঘর্টনার শিকার ব্যক্তিকে বাঁচানোর জন্য নামায ছেড়ে না দেয় তাহলে সে গুনাহগার হবে। তবে তার নামায সহিহ হবে; যেমনিভাবে রেশমের পাগড়ী পরে নামায পড়লেও নামায শুদ্ধ হয়।”[সমাপ্ত]
ইবনে রজব হাম্বলি (রহঃ) বলেন: “যদি কেউ তার কাপড় নিয়ে যায় তাহলে সে নামায ছেড়ে দিয়ে চোরের পিছু নিবে। আব্দুর রাজ্জাক তাঁর কিতাবে মা’মার থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি হাসান ও কাতাদা থেকে বর্ণনা করেছেন যে: এক ব্যক্তি নামায পড়ছিল। এর মধ্যে সে তার পশুটি ছুটে চলে যাওয়ার আশংকা করল কিংবা কোন হিংস্র জানোয়ার তার উপর আক্রমণ করার আশংকা করল? তারা উভয়ে বলেন: সে নামায ছেড়ে দিবে।
মা’মার থেকে বর্ণিত আছে, তিনি কাতাদা থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি তাকে জিজ্ঞেস করেন: জনৈক লোক নামায পড়ছে। এর মধ্যে সে দেখতে পেল যে, একটি বাচ্চা কূপের ধারে। আশংকা হচ্ছে বাচ্চাটি কূপের মধ্যে পড়ে যাবে। সে কি নামায ছেড়ে দিবে? তিনি বললেন: হ্যাঁ। আমি বললাম: কেউ দেখল যে, চোর তার জুতাজোড়া নিয়ে যাচ্ছে? তিনি বললেন: নামায ছেড়ে দিবে।
সুফিয়ানের মাযহাব হচ্ছে: কোন ব্যক্তি নামাযে থাকাবস্থায় যদি বিপদজনক কিছুর সম্মুখীন হন তাহলে তিনি নামায ছেড়ে দিবেন। এটি মুআফি তাঁর থেকে বর্ণনা করেছেন।
অনুরূপ বিধান প্রযোজ্য হবে যদি কেউ নিজের পশুপাল বা আরোহণের পশু পানির ঢলের শিকার হওয়ার আশংকা করেন।
ইমাম মালেকের মাযহাব হচ্ছে: যে ব্যক্তি নামাযরত অবস্থায় তার আরোহণের পশু ছুটে গেছে; যদি তার কাছাকাছি হয় সামনের দিকে হোক, ডানে হোক বা বামে হোক সে তার দিকে হেঁটে যাবে। আর যদি দূরে হয় তাহলে নামায ছেড়ে দিয়ে পশুর সন্ধান করবে।
আমাদের মাযহাবের আলেমদের অভিমত হচ্ছে: যদি কোন লোককে ডুবে যেতে দেখে কিংবা পুড়ে যেতে দেখে কিংবা দুই বালককে মারামারি করতে দেখে ইত্যাদি এবং তার এ অনিষ্ট দূর করার সক্ষমতা থাকে তাহলে সে নামায ছেড়ে দিবে এবং এ অনিষ্ট দূর করবে।
কোন কোন আলেম এটাকে নফল নামাযের সাথে বিশিষ্ট করেছেন। সর্বাধিক সঠিক অভিমত হচ্ছে: এটি নির্বিশেষে ফরয নামায ও অন্যান্য নামাযের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
ইমাম আহমাদ বলেন: যে ব্যক্তি তার ঋণপ্রাপ্য ব্যক্তিকে অনুসরণ করেন, তারা উভয়ে নামায শুরু করল, একটু পরে সে ব্যক্তি নামাযে থাকাবস্থায় ঋণী লোকটি পালিয়ে যেতে লাগল: তখন ঋণী লোকটিকে ধরার জন্য তিনি নামায থেকে বেরিয়ে যাবেন।
ইমাম আহমাদ আরও বলেন: যদি কেউ কোন বাচ্চাকে কূপে পড়ে যেতে দেখে তখন নামায ছেড়ে দিয়ে বাচ্চাটিকে বাঁচাবে।
আমাদের কোন কোন আলেম বলেছেন: যদি বাচ্চাটিকে বাঁচাতে গিয়ে আমলে কাছির (অনেক কাজ) করতে হয় তাহলে সেক্ষেত্রে নামায কর্তন করবে। আর যদি অল্পতে বাঁচানো যায় তাহলে এতে করে তার নামায বাতিল হবে না।
আবু বকর একই ধরণের কথা ঋণপ্রাপ্য ব্যক্তির অনুসরণে যে ব্যক্তি বেরিয়েছে তার ব্যাপারে বলেছেন যে, সে ব্যক্তি ফিরে এসে অবশিষ্ট নামায পূর্ণ করবে। কাযী এ অভিমতকে এ অর্থে ব্যাখ্যা করেছেন যে, যদি সেটা অল্প কর্ম হয়।
এমন একটি ব্যাখ্যাও করা যেতে পারে যে: সে তার সম্পদের ব্যাপারে আশংকিত। তাই তার সে কর্ম অধিক হলও সেটি মার্জনীয়।”[ইবনে রজব এর রচিত ‘ফাতহুল বারী’ (৯/৩৩৬-৩৩৭) থেকে সমাপ্ত]
সারকথা: যে ব্যক্তি নিজের জীবন নাশ হওয়া কিংবা নিরাপদ কোন জীবন নাশ হওয়ার আশাংকা করছে; যে জীবনকে বাঁচানো তার পক্ষে সম্ভবপর; তার জন্য নামায অব্যাহত রাখা নাজায়েয। নামায অব্যাহত রাখার কারণে সে ব্যক্তি গুনাহগার হবেন। যদি নিজে মারা যান কিংবা আহত হন তাহলে তিনি নিজেকে ধ্বংসের দিকে নিক্ষেপকারী হবেন।
আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।