শুক্রবার 21 জুমাদাল আউওয়াল 1446 - 22 নভেম্বর 2024
বাংলা

মুসলিম ভাইয়ের জন্য গোপনে দোয়া করে পরবর্তীতে তাকে অবহিত করা

প্রশ্ন

আমি যে ব্যক্তির জন্য গোপনে দোয়া করি তাকে যদি বলি যে, আমি তার জন্য দোয়া করছি এতে কি সওয়াব কমে যাবে? কিংবা কোন ব্যক্তি যদি আমাকে জিজ্ঞেস করে যে, আপনি কি আমার জন্য দোয়া করেন? আমি যদি বলি: হ্যাঁ এবং আমিও তার কাছে দোয়া চাই?

আলহামদু লিল্লাহ।.

এক: শরিয়ত মুসলিম ভাইয়ের জন্য গোপনে দোয়া করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছে:

শরিয়ত মুসলমানদেরকে পরস্পর পরস্পরের জন্য গোপনে দোয়া করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছে। যেমনটি আবু দারদা (রাঃ) এর হাদিসে এসেছে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: কোন মুসলিম তার মুসলিম ভাইয়ের জন্য গোপনে দোয়া করতে থাকলে একজন ফেরেশতা বলে: তোমfর জন্যেও অনুরূপ।[সহিহ মুসলিম (২৭৩২)]

কাযী ইয়ায (রহঃ) বলেন:

“সে ব্যক্তি যে যে দোয়া করেছে এর সমপরিমাণ সওয়াব সে পাবে। কেননা সে অন্যের জন্য দোয়া করার মাধ্যমে দুটো নেক আমল করেছে: ১. খালিসভাবে (একনিষ্ঠভাবে) আল্লাহ্‌কে স্মরণ করা এবং মুখ ও মন দিয়ে আল্লাহ্‌র কাছে ধর্ণা দেয়া। ২. অপর মুসলিম ভাইয়ের কল্যাণ করতে পছন্দ করা ও তার জন্য দোয়া করা। এটি এমন একটি নেক আমল যার জন্য মুসলিমকে সওয়াব দেয়া হয় এবং হাদিসে পরিস্কার ভাষায় উল্লেখ করা হয়েছে এমন দোয়া কবুলযোগ্য।”[ইকমালুল মু’লিম (৮/২২৮) থেকে সমাপ্ত]

এ হাদিসে এই মর্যাদা গোপনে দোয়ার জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে। তাই কোন মুসলিম যদি তার এ আমলের কথা কাউকে অবহিত করে এতে করে কি এ ফজিলত ও সওয়াব বাতিল হয়ে যাবে?

শরয়ি নীতি হল: নেক আমলগুলো বিবেচিত হয় আমলকারীর উদ্দেশ্য ও নিয়তের ভিত্তিতে। যেমনটি রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসে এসেছে: আমলসমূহের শুদ্ধাশুদ্ধি নিয়তের উপর নির্ভরশীল। আর প্রত্যেক ব্যক্তি যা নিয়ত করে সেটাই তার প্রাপ্য।[সহিহ বুখারী (১) ও সহিহ মুসলিম (১৯০৭)]

দুই: যার জন্য দোয়া করা হয় তাকে দোয়া করার বিষয়টি অবহিত করা:

পূর্বোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে যার জন্য দোয়া করা হল তাকে অবহিত করার কয়েকটি উদ্দেশ্য হতে পারে:

যদি এ অবহিত করণের মাধ্যমে তার উপর অনুকম্পা প্রকাশ করা ও তাকে খোঁটা দেয়ার উদ্দেশ্য করা হয় তাহলে খোঁটা দেয়া একটি কবিরা গুনাহ। খোঁটা দেয়ার মাধ্যমে আমলকারীর আমল নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

শাইখ উছাইমীন (রহঃ) বলেন:

“ইবাদতটি শেষ হয়ে যাওয়ার পর যা কিছুর উদয় হয় এটি ইবাদতের উপর কোন প্রভাব ফেলবে না। তবে ওটার মধ্যে যদি সীমালঙ্ঘন থাকে; যেমন- খোঁটা দেয়া, দান করে কষ্ট দেয়া; তাহলে এই সীমালঙ্ঘনের পাপ দানের সওয়াবের সাথে পাল্টাপাল্টি হয়ে দানকে বাতিল করে দিবে। যেহেতু আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা খোঁটা দেয়া ও কষ্ট দেয়ার মাধ্যমে তোমাদের দানগুলোকে নষ্ট করো না।[আল-কাওলুল মুফিদ (২/১২৬) থেকে সমাপ্ত]

আবার হতে পারে এ অবহিতকরণ নেক আমল হিসেবে গণ্য হবে এবং এর জন্য অবহিতকারীকে সওয়াব দেয়া হবে। উদাহরণতঃ কেউ যদি জানতে চায় তখন তাকে জানানো যে, তার জন্য গোপনে দোয়া করে। এমন জানানোটা কথাবার্তায় সত্যবাদিতা ফুটিয়ে তোলার পর্যায়ভুক্ত। কিংবা যদি যার জন্য দোয়া করা হল তার প্রতি মমত্ব ফুটিয়ে তোলা ও তার মনে আনন্দ প্রবেশ করানোর জন্য হয় এবং উভয়ের মাঝে সম্পর্ক-সম্প্রীতি বৃদ্ধি করার জন্য হয়। যেমনটি হাদিসে এসেছে: জিজ্ঞেস করা হল: ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! আল্লাহ্‌র কাছে সর্বাধিক প্রিয় কে? তিনি বললেন: মানুষের সর্বাধিক উপকারী ব্যক্তিএবং আল্লাহ্‌র কাছে সর্বাধিক প্রিয় আমল হচ্ছে কোন মুমিনের অন্তরে খুশি প্রবেশ করানো।[কাযাউল হাউয়ায়িজ (পৃষ্ঠা-৪৭), শাইখ আলবানী ‘আস্‌-সিলসিলা আস্‌-সাহিহা’ গ্রন্থে (২/৫৭৫) হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন]

এ বিষয়ে খতীব আল-বাগদাদী তার ‘তারিখু বাগদাদে (৪/৩২৫) নিজের সনদে ‘খাত্তাব বিন বিশর’ থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেন: “আমি আব্দুল্লাহর পিতা আহমাদ বিন হাম্বলকে প্রশ্ন করছিলাম আর তিনি জবাব দিচ্ছিলেন এবং শাফেয়ির ছেলের দিকে তাকিয়ে বলছিলেন: এটি আমাদেরকে আব্দুল্লাহ্‌র পিতা শিখিয়েছেন। বুঝাতে চেয়েছেন: শাফেয়ি।

খাত্তাব বলেন: আমি আব্দুল্লাহর পিতা আহমাদ বিন মুহাম্মদ বিন হাম্বলকে ওসমানের পিতার সাথে তার বাবার ব্যাপারে আলোচনা করতে শুনেছি। আহমাদ বলেন: আব্দুল্লাহ্‌র পিতার প্রতি আল্লাহ্‌ রহম করুন। আমি যখনই কোন নামায পড়ি পাঁচজনের জন্য দোয়া করি। তিনি পাঁচজনের একজন।”

এ ধরণের উদ্দেশ্যের ক্ষেত্রে: অবহিতকরণ নিষিদ্ধ হবে না মর্মে প্রতীয়মান হয়। বরং এ উদ্দেশ্যগুলো নেক কাজ ও ভাল কাজ। এবং এটি গোপন দোয়ার সওয়াবপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে কোন প্রভাব ফেলবে না এবং দোয়াকারী তার ভাইয়ের জন্য যা যা দোয়া করেছে সেও তা তা পাওয়ার ক্ষেত্রে কোন প্রভাব ফেলবে না মর্মে প্রতীয়মান হয়।

তবে অন্যের জন্য যে দোয়া সে গোপনে করেছে তার কাছে নিজের জন্য অনুরূপ দোয়া করার অনুরোধ করা উচিত নয়। কেননা এটি নেক আমলের জন্য অন্যের কাছ থেকে এক ধরণের বিনিময় ও প্রতিদান চাওয়া।

তিন:

ইতিপূর্বে 163632 নং প্রশ্নোত্তরে অন্যের কাছ থেকে দোয়া চাওয়ার হুকুম বিস্তারিতভাবে আলোচিত হয়েছে।

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব