আলহামদু লিল্লাহ।.
বিপদাপদ ও মহামারী দেখা দিলে এর প্রতিকার হচ্ছে— আল্লাহ্র কাছে তাওবা করা, তার কাছে অনুনয়-বিনয়ের সাথে দোয়া করা, আত্মসাৎকৃত সম্পদ ফিরিয়ে দেয়া, বেশি বেশি ইস্তিগফার, তাসবিহ পড়া ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর দরুদ পড়া, আল্লাহ্র কাছে সুস্থতার জন্য দোয়া করা, সুরক্ষামূলক ও চিকিৎসার উপায়গুলো গ্রহণ করা; যেমন- কোয়ারেন্টাইন বা পৃথক থাকা এবং টীকা ও চিকিৎসা পাওয়া গেলে সেগুলো গ্রহণ করা।
১। তাওবা ও দোয়া করা:
আল্লাহ্ তাআলা বলেন:
وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا إِلَى أُمَمٍ مِنْ قَبْلِكَ فَأَخَذْنَاهُمْ بِالْبَأْسَاءِ وَالضَّرَّاءِ لَعَلَّهُمْ يَتَضَرَّعُونَ (42) فَلَوْلَا إِذْ جَاءَهُمْ بَأْسُنَا تَضَرَّعُوا وَلَكِنْ قَسَتْ قُلُوبُهُمْ وَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ
الأنعام/42، 43
"আর অবশ্যই আমরা আপনার আগে বহু জাতির কাছে রাসূল পাঠিয়েছি। অতঃপর তাদেরকে সম্পদের সংকট ও শারীরিক দিয়ে পাকড়াও করেছিলাম, যাতে করে তারা কাকুতি-মিনতি করে। আফসোস! তাদের উপর যখন আমাদের শাস্তি আপতিত হল তখন তারা যদি অনুনয়-বিনয় করত? বরং তাদের হৃদয় কঠিন হয়ে গিয়েছিল এবং তারা যা করেছিল শয়তান তা তাদের দৃষ্টিতে সুশোভিত করেছিল।"[সূরা আন্আম; ৬:৪২-৪৩]
ইবনে কাছির (রহঃ) বলেন: وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا إِلَى أُمَمٍ مِنْ قَبْلِكَ فَأَخَذْنَاهُمْ بِالْبَأْسَاءِ এখানে البأساء অর্থ: দারিদ্র ও জীবিকার সংকট। الضراء: রোগবালাই, ব্যথ্যা-বেদনা। يتضرعون অর্থাৎ যাতে তারা আল্লাহ্কে ডাকে, মিনতি করে এবং ভীত হয়।
আল্লাহ্ তাআলা বলেন: فَلَوْلَا إِذْ جَاءَهُمْ بَأْسُنَا تَضَرَّعُوا করে। আফসোস! তাদের উপর যখন আমাদের শাস্তি আপতিত হল তখন তারা যদি অনুনয়-বিনয় করত? অর্থাৎ যখন আমরা তাদেরকে এসব দিয়ে পরীক্ষা করলাম তখন কেন তারা আমাদের কাছে মিনতি করল না, নিজের দীনতা প্রকাশ করল না!! বরং তাদের অন্তর কোমল হয়নি এবং ভীত হয়নি।
وَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ তারা যা করেছিল তথা শিরক ও পাপ শয়তান তা তাদের দৃষ্টিতে সুশোভিত করেছিল।"[সমাপ্ত]
আল্লাহ্ তাআলা আরও বলেন:
أَوَلَا يَرَوْنَ أَنَّهُمْ يُفْتَنُونَ فِي كُلِّ عَامٍ مَرَّةً أَوْ مَرَّتَيْنِ ثُمَّ لَا يَتُوبُونَ وَلَا هُمْ يَذَّكَّرُونَ
التوبة/126
"তারা কি দেখে না যে, তারা প্রতি বছর একবার বা দুইবার পরীক্ষার মুখোমুখি হয়। এরপরও তারা তাওবা করে না এবং উপদেশ গ্রহণ করে না।"[সূরা তাওবা, ৯:১২৬]
কোন পাপ ছাড়া পরীক্ষা অবতীর্ণ হয় না এবং তাওবা ছাড়া পরীক্ষার অবসান হয় না; যেমনটি বলেছেন আল-আব্বাস (রাঃ) তাঁর বৃষ্টিপ্রার্থনার দোয়াতে।
হাফেয ইবনে হাজার (রহঃ) ফাতহুল বারী গ্রন্থে (২/৪৯৭) বলেন: "যুবাইর বিন বাক্কার 'আল-আনসাব' নামক গ্রন্থে এই ঘটনায় আব্বাস (রাঃ) এর দোয়ার ভাষা এবং যে সময়ে দোয়াটি করেছেন সেটা উল্লেখ করেছেন। তিনি তাঁর নিজস্ব সনদে বর্ণনা করেন যে, যখন উমর (রাঃ) তার মাধ্যমে বৃষ্টি চেয়ে দোয়া করালেন তখন তিনি বললেন: হে আল্লাহ্! কোন বালা (পরীক্ষা) গুনাহ ছাড়া নাযিল হয়নি এবং তাওবা ব্যতীত এর অবসান হয়নি।"[সমাপ্ত]
২। ইস্তিগফার: এটি হচ্ছে সুস্বাস্থ্য, শক্তি লাভ ও সুখী জীবন যাপন করার কারণ:
আল্লাহ্ তাআলা বলেন:
وَأَنِ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوبُوا إِلَيْهِ يُمَتِّعْكُمْ مَتَاعًا حَسَنًا إِلَى أَجَلٍ مُسَمًّى وَيُؤْتِ كُلَّ ذِي فَضْلٍ فَضْلَهُ
هود/3
"আরও যে, তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা কর, অতঃপর তার কাছে তাওবা কর (ফিরে আস)। তাহলে তিনি তোমাদেরকে একটি নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত উত্তম জীবন উপভোগ করতে দেবেন এবং তিনি প্রত্যেক সৎকর্মশীলকে তার সৎকর্মের প্রতিদান দান করবেন।"[সূরা হুদ, ১১: ৩]
তিনি আরও বলেন:
وَيَاقَوْمِ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوبُوا إِلَيْهِ يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُمْ مِدْرَارًا وَيَزِدْكُمْ قُوَّةً إِلَى قُوَّتِكُمْ وَلَا تَتَوَلَّوْا مُجْرِمِينَ
هود/52
"হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, অতঃপর তাঁর কাছে তাওবা কর (ফিরে আস), তাহলে তিনি তোমাদের উপর মুষুলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। আর তিনি তোমাদেরকে আরো শক্তি দিয়ে তোমাদের শক্তি বৃদ্ধি করবেন। তোমরা অপরাধী হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিও না।"[সূরা হুদ, ১১: ৫২]
৩। তাসবীহ পাঠ করা:
আল্লাহ্ তাআলা জানিয়েছেন যে, ইউনুস (আঃ) তাসবীহ পাঠ করার মাধ্যমে বিপদ থেকে মুক্তি পেয়েছেন। এর মাধ্যমে তিনি ইঙ্গিত করেছেন যে, এর দ্বারা মুমিনগণও মুক্তি পাবে। আল্লাহ্ তাআলা বলেন:
وَذَا النُّونِ إِذْ ذَهَبَ مُغَاضِبًا فَظَنَّ أَنْ لَنْ نَقْدِرَ عَلَيْهِ فَنَادَى فِي الظُّلُمَاتِ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ * فَاسْتَجَبْنَا لَهُ وَنَجَّيْنَاهُ مِنَ الْغَمِّ وَكَذَلِكَ نُنْجِي الْمُؤْمِنِينَ
الأنبياء/87 – 88
"আর স্মরণ করুন, যুন্-নূনকে যখন তিনি ক্রোধ ভরে চলে গিয়েছিলেন এবং মনে করেছিলেন যে, আমরা তাকে পাকড়াও করব না। তারপর অন্ধকারে থেকে তিনি لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ (আপনি ছাড়া সত্য কোন ইলাহ নেই; আপনি কতইনা পবিত্র। নিশ্চয়ই আমি যালেমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছি) বলে ডাকলেন। তখন আমরা তার ডাকে সাড়া দিয়েছিলাম এবং তাকে দুশ্চিন্তা হতে মুক্ত করেছিলাম। আর এভাবেই আমরা মুমিনদেরকে উদ্ধার করে থাকি।"[সূরা আল-আম্বিয়া, ২১: ৮৭-৮৮]
তিনি আরও বলেন:
فَلَوْلَا أَنَّهُ كَانَ مِنَ الْمُسَبِّحِينَ * لَلَبِثَ فِي بَطْنِهِ إِلَى يَوْمِ يُبْعَثُونَ
الصافات /143
"অতঃপর তিনি যদি আল্লাহ্র পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণাকারীদের অন্তর্ভুক্ত না হতেন, তাহলে তাকে উত্থানের দিন পর্যন্ত তার পেটে (মাছের পেটে) থাকতে হত।"[সূরা আস-সাফ্ফাত, ৩৭: ১৪৩-১৪৪]
সাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: "মাছের পেটে থেকে মাছওয়ালা (অর্থাৎ ইউনুস আঃ)-এর দোয়া:
لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ
(আপনি ছাড়া সত্য কোন ইলাহ নেই; আপনি কতইনা পবিত্র। নিশ্চয়ই আমি যালেমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছি)
এটি দিয়ে কোন মুসলিম ব্যক্তি কোন ব্যাপারে দোয়া করলে আল্লাহ্ তার দোয়া কবুল করেন।"[মুসনাদে আহমাদ (১৪৬২) ও সুনানে তিরমিযি (৩৫০৫), আলবানী হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]
ইবনুল কাইয়্যেম (রহঃ) বলেন: "যে কোন নবী যখনই বিপদের শিকার হয়েছে তাঁরা তাসবীহ পাঠ করার মাধ্যমে সাহায্য চেয়েছেন।"[আল-জাওয়াব আল-কাফী (পৃষ্ঠা-১৪) থেকে সমাপ্ত]
৪। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর দুরুদ পড়া দুশ্চিন্তা ও বিপদ দূর হওয়ার মহান একটি কারণ:
উবাই বিন কাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: যখন রাত্রির দুই তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হত তখন তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁড়িয়ে বলতেন: "হে লোকসকল! আল্লাহ্কে স্মরণ করুন। আল্লাহ্কে স্মরণ করুন। রাজিফা (প্রথম ফুৎকার) তো এসেই গেল। এরপর আসবে রাদিফা (দ্বিতীয় ফুৎকার)। মৃত্যু এর মধ্যে যা কিছু আছে সব নিয়ে উপস্থিত। মৃত্যু এর মধ্যে যা কিছু আছে সব নিয়ে উপস্থিত। উবাই (রাঃ) বলেন, আমি বললাম: ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমি আপনার উপর বেশি বেশি দুরুদ পড়তে চাই। আমি আমার দোয়ার কতটুকু আপনার জন্য রাখব? তিনি বললেন: তুমি যতটুকু চাও। তিনি বলেন: আমি বললাম: এক চতুর্থাংশ? তিনি বললেন: তুমি যতটুকু চাও; যদি এরচেয়ে বাড়াও তাহলে সেটা তোমার জন্য কল্যাণকর। আমি বললাম: অর্ধেক? তিনি বললেন: তুমি যতটুকু চাও? যদি এর চেয়ে বাড়াও তাহলে সেটা তোমার জন্য কল্যাণকর। তিনি বলেন, আমি বললাম: তাহলে দুই তৃতীয়াংশ? তিনি বললেন: তুমি যতটুকু চাও? যদি তুমি এর চেয়ে বাড়াও তাহলে সেটা তোমার জন্য ভাল। আমি বললাম: আমার দোয়ার সবটুকু? তিনি বললেন: তাহলে তোমার দুশ্চিন্তা দূর করা হবে এবং তোমার গুনাহগুলো মাফ করে দেয়া হবে।[মুসনাদে আহমাদ (২১২৪২) ও সুনানে তিরমিযি (২৪৫৭); এ ভাষ্যটি তিরমিযির]
ইমাম আহমাদের ভাষ্য হচ্ছে: "উবাই বিন কাব (রাঃ) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, এক লোক বলল: ইয়া রাসূলুল্লাহ্! যদি আমি আমার দোয়ার পুরাটুকু আপনার উপরে দুরুদ পড়ি? তিনি বললেন: তাহলে আল্লাহ্ তোমার দুনিয়া ও আখিরাতের দুশ্চিন্তা দূর করে দিবেন।"[আলবানী ও মুসনাদের মুহাক্কিকগণ হাদিসটিকে হাসান বলেছেন]
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াকে এ হাদিসের ব্যাখ্যা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যা ইবনুল কাইয়্যেম "জালাউল আফহাম" (পৃষ্ঠা-৭৯) নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন তিনি বলেন: "উবাই বিন কাব (রাঃ) এর নিজস্ব একটি দোয়া ছিল যা দিয়ে তিনি নিজের জন্য দোয়া করতেন। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন: "তিনি কি এ দোয়ার এক চতুর্থাংশ তাঁর উপর দুরুদ পড়ার জন্য নির্দিষ্ট করবেন। তখন তিনি বললেন: যদি তুমি এর চেয়ে বাড়াও তাহলে সেটা তোমার জন্য ভাল। তখন উবাই বললেন: তাহলে অর্ধেক? তিনি বললেন: যদি এর চেয়ে বাড়াও তাহলে সেটা তোমার জন্য ভাল। এক পর্যায়ে উবাই বললেন: আমার দোয়ার সবটুকু আপনার জন্য নির্দিষ্ট করব। অর্থাৎ আমার দোয়ার সবটুকু আপনার উপর দুরুদ পড়ার জন্য নির্দিষ্ট করব। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: তাহলে তোমার দুশ্চিন্তা দূর করা হবে এবং তোমার গুনাহগুলো মাফ করে দেয়া হবে। যেহেতু যে ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর একবার দুরুদ পড়বে আল্লাহ্ তার উপর দশবার রহমত নাযিল করেন। তার দুশ্চিন্তা দূর করে দেন। তার গুনাহ মাফ করে দেন।"[সমাপ্ত]
৫। সকাল-সন্ধ্যায় সুস্থতার জন্য দোয়া করা শরিয়তসম্মত; এটি আরও তাগিদপূর্ণ হয় মহামারী বিস্তারের সময়:
আব্দুল্লাহ বিন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: যখন ভোর হত কিংবা সন্ধ্যা হত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ দোয়াগুলো পাঠ করা বাদ দিতেন না:
اللهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْعَافِيَةَ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ، اللهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ فِي دِينِي وَدُنْيَايَ وَأَهْلِي وَمَالِي، اللهُمَّ اسْتُرْ عَوْرَاتِي، وَآمِنْ رَوْعَاتِي، اللهُمَّ احْفَظْنِي مِنْ بَيْنِ يَدَيَّ، وَمِنْ خَلْفِي، وَعَنْ يَمِينِي، وَعَنْ شِمَالِي، وَمِنْ فَوْقِي، وَأَعُوذُ بِعَظَمَتِكَ أَنْ أُغْتَالَ مِنْ تَحْتِي
"হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট দুনিয়া ও আখেরাতের সুস্থতা-নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট ক্ষমা ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি আমার দ্বীনদারি ও দুনিয়ার, আমার পরিবার ও সম্পদের। হে আল্লাহ! আপনি আমার গোপন ত্রুটিসমূহ ঢেকে রাখুন, আমার উদ্বিগ্নতাকে নিরাপত্তায় পরিণত করে দিন। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে হিফাযত করুন আমার সামনের দিক থেকে, আমার পিছনের দিক থেকে, আমার ডান দিক থেকে, আমার বাম দিক থেকে এবং আমার উপরের দিক থেকে। আর আপনার মহত্ত্বের উসীলায় আশ্রয় চাই আমি নিচ থেকে হঠাৎ ধ্বংস হওয়া থেকে।" অর্থাৎ ভূমি ধ্বস থেকে।[মুসনাদে আহমাদ (৪৭৮৫), সুনানে আবু দাউদ (৫০৭৪), সুনানে ইবনে মাজা (৩৮৭১)]
আব্দুর রহমান বিন আবু বাকরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, তিনি তার পিতাকে বললেন: আব্বু, আমি আপনাকে প্রতিদিন সকালে দোয়া করতে শুনি:
اللَّهُمَّ عَافِنِي فِي بَدَنِي، اللَّهُمَّ عَافِنِي فِي سَمْعِي، اللَّهُمَّ عَافِنِي فِي بَصَرِي، لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ
"হে আল্লাহ! আমার দেহে আমাকে পরিপূর্ণ সুস্থতা-নিরাপত্তা দান করুন। হে আল্লাহ, আমার শ্রবণযন্ত্রে আমাকে পরিপূর্ণ সুস্থতা-নিরাপত্তা দান করুন। হে আল্লাহ, আমার দৃষ্টিশক্তিতে আমাকে পরিপূর্ণ সুস্থতা-নিরাপত্তা দান করুন। আপনি ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই।" আপনি যখন ভোরে উপনীত হন ও সন্ধ্যায় উপনীত হন তখন তিনবার এ দোয়াটি আবৃত্তি করেন। তখন তিনি বললেন: আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এ বাক্যগুলো দিয়ে দোয়া করতে শুনেছি। আমি তাঁর আদর্শের অনুসরণ করতে পছন্দ করি।"
এ প্রসঙ্গে হাদিসে উল্লেখিত উপকারী দোয়াগুলোর মধ্যে রয়েছে:
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই বলে দোয়া করতেন:
اللَّهُمَّ مَتِّعْنِي بِسَمْعِي وَبَصَرِي وَاجْعَلْهُمَا الوَارِثَ مِنِّي، وَانْصُرْنِي عَلَى مَنْ يَظْلِمُنِي، وَخُذْ مِنْهُ بِثَأْرِي
"হে আল্লাহ! আমার কর্ণ ও চক্ষু দ্বারা আমাকে উপকৃত করুন এবং এ দু’টোকে আমার উত্তরাধিকারী করুন। যে লোক আমার প্রতি অবিচার করে তার বিরুদ্ধে আমাকে সাহায্য করুন এবং আমার পক্ষ থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করুন"।[সুনানে তিরমিযি] "এ দু’টোকে "আমার উত্তরাধিকারী করুন" এর অর্থ হল আমার মৃত্যু পর্যন্ত এ দুটোকে আমার জন্য সুস্থ রাখুন।
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন: "হে আল্লাহ্! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই শ্বেতী রোগ, পাগল হওয়া, কুষ্ঠরোগ ও সকল খারাপ রোগ থেকে।"[মুসনাদে আহমাদ (১৩০০৪), সুনানে আবু দাউদ (১৫৫৪), সুনানে নাসাঈ (৫৪৯৩)]
উসমান বিন আফ্ফান (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি তিনি বলেন: "যে ব্যক্তি তিনবার বলবে:
بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
(আমি আশ্রয় চাচ্ছি আল্লাহ্র নামে। যার নামে আশ্রয় চাইলে জমিনে ও আসমানের কোন কিছু ক্ষতি করে না। তিনি হচ্ছেন- সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ) ভোর হওয়া পর্যন্ত সে ব্যক্তিকে কোন আকস্মিক বালাই আক্রমন করবে না। আর কেউ যদি সকালে এ দোয়াটি তিনবার বলবে সন্ধ্যা হওয়া পর্যন্ত কোন আকস্মিক বালাই তাকে আক্রমন করবে না।"[মুসনাদে আহমাদ (৫২৮), সুনানে আবু দাউদ (৫০৮৮), সুনানে ইবনে মাজাহ (৩৮৬৯)]
৬। উপায়-উপকরণ গ্রহণ করা; যেমন কোয়ারেন্টাইন ও চিকিৎসা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শে এর প্রমাণ রয়েছে— চিকিৎসা গ্রহণের নির্দেশ দেয়ার মধ্যে, রোগ থেকে সুরক্ষা গ্রহণের ইশারার মধ্যে, অসুস্থকে সুস্থের সাথে একত্রিত না করার নির্দেশের মধ্যে এবং প্লেগরোগে আক্রান্ত এলাকার উদ্দেশ্যে ভ্রমণ না করার নির্দেশের মধ্যে।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: "তোমরা চিকিৎসা গ্রহণ কর। আল্লাহ্ তাআলা এমন কোন রোগ সৃষ্টি করেননি যে রোগের ঔষধ সৃষ্টি করেননি; কেবল একটি রোগ ছাড়া সেটি হল— বার্ধক্য।"[মুসনাদে আহমাদ (১৭৭২৬), সুনানে আবু দাউদ (৩৮৫৫), সুনানে তিরমিযি (২০৩৮) ও সুনানে ইবনে মাজাহ (৩৪৩৬); আলবানী সহিহ সুনানে আবু দাউদ গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: "যে ব্যক্তি সকালে ৭টি আজওয়া খেজুর খাবে সেদিন কোন বিষ বা যাদু তার ক্ষতি করবে না।"[সহিহ বুখারী (৫৭৬৯) ও সহিহ মুসলিম (২০৫৭)]
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: "উটের মালিক যেন অসুস্থ উটগুলোকে সুস্থ উটগুলোর মাঝে প্রবেশ না করায়।"[সহিহ বুখারী (৫৭৭১) ও সহিহ মুসলিম (২২২১)]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন: "যদি তোমরা কোন এলাকায় প্লেগরোগ আক্রান্তের কথা শুন তাহলে সেখানে প্রবেশ করো না। আর তোমরা যেখানে আছ সেখানে প্লেগরোগ দেখা দেয় তাহলে তোমরা সেখান থেকে বের হবে না।"[সহিহ বুখারী (৫৭২৮) ও সহিহ মুসলিম (২২১৮)]
আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।