আলহামদু লিল্লাহ।.
এক:
যে ব্যক্তি নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক এবং এ মালিকানার এক বর্ষ পূর্তি হয়েছে তার উপর অবিলম্বে যাকাত পরিশোধ করা ওয়াজিব (ফরয)।
ইমাম নববী (রহঃ) বলেন: "যাকাত ওয়াজিব হলে ও পরিশোধ করতে সক্ষম হলে অবিলম্বে যাকাত পরিশোধ করা ওয়াজিব; বিলম্ব করা জায়েয নয়। এটা ইমাম মালেক, ইমাম আহমাদ ও অধিকাংশ আলেমের অভিমত। যেহেতু আল্লাহ্ বলেন: "তোমরা যাকাত প্রদান কর।" কারণ নির্দেশ তাৎক্ষণিকতার প্রমাণ বহন করে।"[আল-মাজমু (৫/৩০৮) থেকে সমাপ্ত]
আল-মাওসুআ আল-ফিকহিয়্যা গ্রন্থে (২৩/২৯৪) এসেছে:
"অধিকাংশ আলেম (শাফেয়ি, হাম্বলি আলেমগণ ও হানাফি মাযহাবের ফতোয়াপ্রদত্ত অভিমত)-এর মতে যাকাত যখনই ফরয হবে তখনই অবিলম্বে সেটি আদায় করা ফরয; যদি আদায় করার সক্ষমতা থাকে এবং কোন ক্ষতির আশংকা না থাকে।
তারা দলিল দেন যে, আল্লাহ্ তাআলা যাকাত দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। যখন যাকাত প্রদানের ওজুব (আবশ্যকতা) সাব্যস্ত হল তখন মুকাল্লাফ (শরয়ি-ভারপ্রাপ্ত)-এর উপর নির্দেশটি আরোপিত হল। আর তাদের মতে, সাধারণ নির্দেশ তাৎক্ষণিকতার দাবী করে। এবং যেহেতু বিলম্ব করাটা যদি জায়েয হয় তাহলে সীমাহীন কাল অবধি বিলম্ব করা জায়েয হয়ে যায়। ফলে যে ব্যক্তি নির্দেশটি পালন করল না তার শাস্তির বিষয়টি নাকচ হয়ে যায়। এবং যেহেতু গরীবদের প্রয়োজন নগদে, আর যাকাতের উপর তাদের অধিকার সাব্যস্ত। তাই বিলম্বে পরিশোধ করা মানে তাদেরকে প্রাপ্যসময়ে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা।"[সমাপ্ত]
শাইখ বিন বায (রহঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: "আমি একজন চাকুরীজীবী যুবক। আমার মাসিক আয় সীমিত। এ আয় থেকে আমার যতটুকু প্রয়োজন আমি ততটুকু গ্রহণ করি; বাকীটুকু ব্যাংকে রাখি। যাতে করে একটা এমাউন্ট জমা হলে আমি সেটা দিয়ে একখণ্ড জমি ক্রয় করতে পারি, যেখানে আমি একটা বাড়ী বানিয়ে বিয়ে করলে সেখানে থাকব। কার্যতঃ আমার কাছে পঞ্চান্ন হাজার রিয়াল জমা হয়েছে…। প্রশ্ন হল: এ তিন বছরে আমার উপরে কি যাকাত ফরয হয়েছে? কেননা আমি শুনেছি যে ব্যক্তি বিয়ে করার জন্য কিংবা বসত বাড়ী নির্মাণের জন্য অর্থ জমা করে তার উপর যাকাত নেই? জবাবে তিনি বলেন: এটি ভুল। সঠিক হল তার উপর যাকাত ওয়াজিব; যদি সে বিয়ে করার জন্য কিংবা বাড়ী করার জন্য কিংবা ঋণ পরিশোধ করার জন্য অর্থ জমা করে এবং সঞ্চিত অর্থের বর্ষপূর্তি হয়। আপনি যদি আপনার বেতন থেকে কিংবা জমি বিক্রির অর্থ থেকে ব্যাংকে কিংবা অন্য কোথাও অর্থ জমা করে বাড়ী বানানোর অপেক্ষায় থাকেন কিংবা অন্য জমি কেনার অপেক্ষায় থাকেন কিংবা বিয়ে বা অন্য কিছুর অপেক্ষায় থাকেন এবং সঞ্চিত সম্পদের বর্ষপূর্তি হয় তাহলে আপনার উপর যাকাত ওয়াজিব। প্রত্যেক নগদ অর্থের বর্ষপূর্তি হলেই এর যাকাত পরিশোধ করা আপনার উপর ওয়াজিব।"[http://www.binbaz.org.sa/mat/13601 থেকে সমাপ্ত]
দুই:
যদি যাকাতপ্রদানে ইচ্ছুক ব্যক্তির কাছে নগদ অর্থ না থাকে সেক্ষেত্রে অর্থ হাতে আসা পর্যন্ত বিলম্ব করা তার জন্য জায়েয।
এ বিষয়ে 173120 নং প্রশ্নোত্তরটি দেখা যেতে পারে।
তিন:
আর যদি যাকাত প্রদানকারী নিজে দরিদ্র হয়, তার যাকাতের অর্থের প্রয়োজন থাকে, যাকাত দিয়ে ফেললে তার জীবিকার সংকট হতে পারে সেক্ষেত্রে তার জন্য পরবর্তীতে বিলম্বে যাকাত পরিশোধ করা জায়েয হবে।
"কাশ্শাফুল ক্বিনা" (২/২৫৫) গ্রন্থে বলেন:
"কিংবা যাকাতপ্রদানকারী দরিদ্র, তার যাকাতের অর্থের প্রয়োজন, যাকাত দিয়ে দিলে তার যতটুকু প্রয়োজন সেটা ব্যাহত হতে পারে। উদ্ভুত পরিস্থিতি কেটে যাওয়ার মাধ্যমে তার স্বচ্ছলতা ফিরে আসলে তার থেকে পূর্বের যাকাতগুলো আদায় করা হবে।"[সমাপ্ত]
তাই কারো যদি চাকুরী না থাকে এবং যাকাতের যে অর্থটা তাকে পরিশোধ করতে হবে সেটা যদি তার প্রয়োজন হয় তাহলে তার জন্য বিলম্বে যাকাত পরিশোধ করা জায়েয হবে।
আর যদি বর্তমানে তার প্রয়োজন না হয়, তবে ভবিষ্যতের ব্যাপারে আশংকায় থাকে সেক্ষেত্রে যাকাত পরিশোধ করা তার উপর অনিবার্য— ওয়াজিব পালনার্থে ও দায়মুক্তির নিমিত্তে।
অন্যদিকে বিপদ-মুসিবতের সময়গুলোতে ধনীদের উচিত দান-সদকা ও যাকাত নিয়ে এগিয়ে আসা; এমনকি সেটা অগ্রিম যাকাত আদায়ের মাধ্যমে হলেও। যাতে করে দরিদ্র ভাইদের কষ্ট লাঘব করা যায়। এ বিশ্বাস নিয়ে যে, দান-সদকা সম্পদ কমায় না; বরং বাড়ায়।
আল্লাহ্ তাআলা বলেন: "বলুন, আমার প্রতিপালক তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছা রিজিক প্রশস্ত করেন এবং যার জন্য ইচ্ছা সীমিত করেন। তোমরা যা কিছু ব্যয় করবে তিনি এর বদলা দিবেন। তিনি হচ্ছেন শ্রেষ্ঠ রিজিকদাতা।"[সূরা সাবা, আয়াত: ৩৯]
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: "দানে সম্পদ কমায় না। ক্ষমা করে দিলে আল্লাহ্ বান্দার সম্মান বাড়ান; কমান না। কেউ আল্লাহ্র জন্য বিনয়ী হলে আল্লাহ্ তার মর্যাদা সমুন্নত করেন।"[সহিহ মুসলিম (৪৬৮৯)]
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: "বান্দারা যখন সকালে উপনীত হয় তখন দুইজন ফেরেশতা নাযিল হয়। তাদের একজন বলে: হে আল্লাহ্! আপনি ব্যয়কারীকে বদলা দিন। অন্যজন বলে: হে আল্লাহ্! আপনি ব্যয়কুণ্ঠকে (সম্পদে) বিনাশ দিন।"[সহিহ বুখারী (১৪৪২) ও সহিহ মুসলিম (১০১০)]
আমরা আল্লাহ্র কাছে দোয়া করছি তিনি যেন এই বালা ও মহামারী তুলে নেন।
আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।