শুক্রবার 21 জুমাদাল আউওয়াল 1446 - 22 নভেম্বর 2024
বাংলা

যে ব্যক্তি পিপাসার্ত হয়ে মারা যাওয়া কিংবা রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ার আশংকায় রোযা ভেঙ্গে ফেলেছে তার জন্য আহার করা কি জায়েয হবে?

প্রশ্ন

যে ব্যক্তি পিপাসার কারণে পানি পান করে রোযা ভেঙ্গে ফেলেছে তার জন্যে কি সেইদিন আহার করা জায়েয হবে?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

যেই ব্যক্তি তীব্র পিপাসার কারণে রোযা ভেঙ্গে ফেলেছে; তথা মারা যাওয়ার আশংকা থেকে কিংবা তীব্র ক্ষতির আশংকা থেকে কিংবা কঠিন কষ্টের কারণে রোযা পরিপূর্ণ করতে পারেনি— তার কর্তব্য হল দিনের অবশিষ্ট সময় উপবাস পালন করা। তার জন্য আহার গ্রহণ করা কিংবা প্রয়োজনের অতিরিক্ত পান করা— জায়েয হবে না। বরং যতটুকু পান করলে সে ক্ষতিগ্রস্ততা থেকে রক্ষা পাবে ততটুকুই পান করবে এবং সূর্যাস্ত পর্যন্ত উপবাস থাকবে। পরবর্তীতে এ দিনটির রোযা কাযা পালন করবে।

কাশ্‌শাফুল ক্বিনা গ্রন্থে (২/৩১০) বলেন: আবু বকর আল-আজুর্‌রি বলেন: যে ব্যক্তির পেশা কষ্টকর সে ব্যক্তি যদি রোযা রাখার কারণে মৃত্যুর আশংকা করে এবং কাজটি ছেড়ে দিলে ক্ষতিগ্রস্ততার আশংকা করে তাহলে সে ব্যক্তি রোযা ছেড়ে দিবে এবং রোযাটির কাযা পালন করবে। আর যদি কাজটি ছেড়ে দিলে সে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়: তাহলে রোযা না-রাখার কারণে সে গুনাহগার হবে এবং ভবিষ্যতে কাজটি ছেড়ে দিবে। আর যদি কাজটি ছেড়ে দিলে সে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে ওজরের কারণে তার গুনাহ হবে না।[সমাপ্ত]

স্থায়ী কমিটির ফতোয়াসমগ্রে (১০/২৩৩) এসেছে:

“মুকাল্লাফ (শরয়ি ভারপ্রাপ্ত) ব্যক্তি কেবল চাকুরীজীবী হওয়ার কারণে রমযানের রোযা না-রাখা নাজায়েয। তবে রোযার কারণে যদি তার বড় ধরণের কষ্ট হয় এবং রমযানের দিনের বেলায় রোযা না-রাখতে সে ব্যক্তি বাধ্য হয় তাহলে যতটুকু (খাদ্য-পানীয়) গ্রহণ করার মাধ্যমে তার কষ্ট দূরীভুত হবে ততটুকুর মাধ্যমে সে ব্যক্তি তার রোযা ভঙ্গ করবে। এরপর সূর্যাস্ত পর্যন্ত উপবাস পালন করবে ও সবার সাথে ইফতার করবে এবং এই দিনটির রোযা কাযা পালন করবে।”[সমাপ্ত]

শাইখ বিন বাযকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল:

“কোন লোক যদি বিশেষ কোন কারণে রোযা ভেঙ্গে ফেলে; যেমন- তীব্র পিপাসাগ্রস্ত হয়ে; রোযা ভাঙ্গার পরে সে ব্যক্তি কি তার পানাহার চালিয়ে যাবে এবং পানাহার করাকে বৈধ মনে করবে? এ অবস্থায় তার করণীয় কী?

জবাব: তার জন্য পানাহার বৈধ নয়। বরং সে তার প্রয়োজন পরিমাণ পান করে এরপর উপবাস পালন করবে; যদি পিপাসার কারণে রোযা ভেঙ্গে থাকে। আর যদি ক্ষুধার কারণে রোযা ভেঙ্গে থাকে তাহলে যতটুকু খেলে তার প্রাণ বাঁচে ততটুকু খাবে; এরপর সূর্যাস্ত পর্যন্ত উপবাস পালন করবে। তবে পানাহার চালিয়ে যাবে না। সে তো জরুরী পরিস্থিতির কারণে পানাহার করেছে। এরপর সে উপবাস চালিয়ে যাবে। অনুরূপভাবে কেউ যদি কোন ব্যক্তিকে পানিতে ডুবে যাওয়া থেকে বাঁচানোর জন্য কিংবা শত্রু থেকে বাঁচানোর জন্য উদ্যোগী হয়; কিন্তু রোযা না-ভেঙ্গে বাঁচাতে না পারে তাহলে সে রোযা ভেঙ্গে তার ভাইকে উদ্ধার করবে। এরপর সূর্যাস্ত পর্যন্ত উপবাস পালন করবে। পরবর্তীতে কেবল এই দিনটির রোযা কাযা করবে। কেননা সে জরুরী পরিস্থিতিতে রোযাটি ভেঙ্গেছে। কারণ একজন মুসলিম ব্যক্তির জীবন বাঁচানো ওয়াজিব।”[শাইখ বিন বাযের ফতোয়াসমগ্র (১৬/১৬৪) থেকে সমাপ্ত]

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব