আলহামদু লিল্লাহ।.
এক:
যদি তালাক্ব শব্দের মাধ্যমে বিচ্ছেদ সংঘটিত হয়; খুলা শব্দের মাধ্যমে নয় এবং এই শর্তে হয় যে, স্ত্রীকে মোহরানার অর্থ ফিরিয়ে দিতে হবে কিংবা কিছু সম্পদ প্রদান করতে হবে তাহলে সেটা বায়েন তালাক্ব। আর যদি কোন বিনিময়ের শর্ত ছাড়া সংঘটিত হয় তাহলে সেটা রাজঈ তালাক্ব; যদি এটা প্রথম তালাক্ব কিংবা দ্বিতীয় তালাক্ব হয়ে থাকে।
তালাক্বের ইদ্দত হচ্ছে তিন হায়েয; যে নারীর হায়েয হয়। যদি স্বামী স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেয়া ছাড়া ইদ্দত পরিপূর্ণ হয়ে যায়; তাহলে স্ত্রী স্বামী থেকে বায়েন (সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন) হয়ে যাবে। নতুন একটি বিয়ের আকদ (চুক্তি)-র মাধ্যম ছাড়া স্বামীর কাছে ফেরত যেতে পারবে না।
দুই:
আর যদি খুলা শব্দের মাধ্যমে বিচ্ছেদ সংঘটিত হয়ে থাকে এবং স্বামী কোন বিনিময় গ্রহণ না করে তাহলে খুলা কি সঠিক হবে?
এ ব্যাপারে আলেমদের দুটো অভিমত রয়েছে:
প্রথম অভিমত: বিনিময় গ্রহণ করা ছাড়া খুলা করা শুদ্ধ নয়। এটি জমহুর আলেমের অভিমত। এক্ষেত্রে তালাক্বের নিয়ত করলে একটি রাজঈ তালাক্ব সংঘটিত হয়। এই তালাক্বের ইদ্দত তিন হায়েয যেমনটি পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।
দ্বিতীয় অভিমত: বিনিময় ছাড়া খুলা করা সঠিক। এটি ইমাম মালেকের মাযহাব।
দেখুন: “হাশিয়াতুদ দুসুক্বি” (২/৩৫১), আল-মুগনী (৭/৩৩৭)
খুলা সঠিক হলে এর উপর দুটো বিষয় বর্তাবে: বিচ্ছেদ (বায়েন) সংঘটিত হওয়া। তখন স্বামী নতুন একটি আকদ করা ছাড়া স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে পারবে না। অগ্রগণ্য মতানুযায়ী এ অবস্থায় স্ত্রীর ইদ্দত হবে এক তালাক্ব।
শাইখ উছাইমীন (রহঃ) বলেন:
গ্রন্থকারের কথা: “যদি কোন বিনিময় ছাড়া কিংবা কোন হারাম কিছু দিয়ে খুলা করে তাহলে সঠিক হবে না”। যেহেতু আল্লাহ্ তাআলার বাণী হচ্ছে: “তাহলে সেক্ষেত্রে স্ত্রী যদি ফিদিয়া (বিনিময়) দিয়ে অব্যাহতি নিয়ে নেয় তবে উভয়ের মধ্যে কারোরই কোন গুনাহ নেই।”[সূরা বাক্বারা, ২:২২৯]
তাই বিনিময় ছাড়া খুলা করলে ফিদিয়া কোথায়?! ফিদিয়া নাই। এটি মাযহাবের অভিমত।
শাইখুল ইসলাম বলেন: বিনিময় ছাড়া খুলা করা সহিহ। তিনি এর সপক্ষে দুটো যুক্তি দেন:
১। বিনিময় স্বামীর প্রাপ্য অধিকার। স্বামী যদি স্বেচ্ছায় তার অধিকার ছেড়ে দেয় তাহলে কোন অসুবিধা নাই; অন্য সকল অধিকারের মত। যেমনিভাবে স্ত্রী যদি ১০০০ রিয়াল দেয়ার শর্তে খুলা করে এবং খুলা সম্পন্ন হয়ে যায়; পরবর্তীতে স্বামী তাকে মাফ করে দেয় তাতে কোন অসুবিধা নাই। অনুরূপ বিধান প্রযোজ্য যদি তারা উভয়ে শুরু থেকে এই মর্মে একমত হয় যে, কোন বিনিময় নেই।
২। স্বামী যখন খুলা করে তখন বিনিময় নিয়েই খুলা করে থাকে। যেহেতু স্ত্রী তার খরচের অধিকার ছেড়ে দেয়। কারণ যদি এটি রাজঈ তালাক্ব হতো তাহলে ইদ্দতকালীন সময়ে স্ত্রীর খরচ দেয়া স্বামীর উপর আবশ্যক হত। স্ত্রী খুলা করায় স্বামীকে খরচ দিতে হয় না। তাই বিষয়টি যেন এমন হলো স্ত্রী স্বামীকে বিনিময় দিল এভাবে যে, স্বামীর উপর স্ত্রীর প্রাপ্য অধিকার স্ত্রী ছেড়ে দিল। অপর দিকে স্বামী স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেয়ার অধিকার ছেড়ে দিল। কারণ ফিরিয়ে নেয়া স্বামীর অধিকার। আর ইদ্দতকালীন খরচপ্রাপ্তি স্ত্রীর অধিকার। যদি তারা উভয়ে খুলার ক্ষেত্রে এ অধিকারদ্বয় ছেড়ে দিতে রাজি হয় তাহলে বাধা নেই।
আর তিনি আয়াত দিয়ে দলিলের জবাবে বলেন: অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্বামী বিনিময় ছাড়া স্ত্রীকে বিচ্ছেদ করে না। এ কারণে আল্লাহ্ তাআলা বলেছেন: “তাহলে সেক্ষেত্রে স্ত্রী যদি ফিদিয়া (বিনিময়) দিয়ে অব্যাহতি নিয়ে নেয় তবে উভয়ের মধ্যে কারোরই কোন গুনাহ নেই।”[সূরা বাক্বারা, ২:২২৯]
শাইখ (রহঃ) যা বলেছেন সেটা ভালো। কারণ প্রকৃতপক্ষে বিনিময় নিয়েই খুলা হয়। বিনিময়টা হলো খরচের অধিকার ছেড়ে দেয়া।”[আল-শারহুল মুমতি (১২/৪৭৬)]
পূর্বোক্ত আলোচনার মাধ্যমে তালাক্ব ও খুলার মধ্যে পার্থক্য স্পষ্ট হয়ে গেল:
বিনিময় ছাড়া তালাক্ব: এটি রাজঈ তালাক্ব (যদি এটি প্রথম বা দ্বিতীয় তালাক্ব হয়ে থাকে)। এর ইদ্দত তিন হায়েয।
আর কখনও স্ত্রী তার স্বামীকে খুলা করতে বললেও স্বামী খুলা করে না। কিন্তু তাকে বিনিময় ছাড়া তালাক্ব দিয়ে দেয়। সেক্ষেত্রেও তালাক্ব সহিহ হবে। তবে রাজঈ তালাক্ব হবে; যেমনটি পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।
পক্ষান্তরে খুলা: এটি বিবাহ বিচ্ছেদ। এটি তিন তালাক্বের সংখ্যার মধ্যে গণ্য নয়। এর মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদ (ডিভোর্স) হয়ে যায়। এর ইদ্দত হলো এক হায়েয।
তিন:
স্বামী যদি মোহরানা বা হাদিয়া গ্রহণ না করে তাহলে এগুলো স্ত্রীর মালিকানাধীন রয়ে যাবে। স্ত্রী এগুলো নিজে রেখে দিতে পারেন কিংবা উপহার দিতে পারেন কিংবা সদকা করে দিতে পারেন; তার মালিকাধীন অন্য যে কোন সম্পদের মত।
আল্লাহই সর্বজ্ঞ।