সোমবার 22 জুমাদাল ছানী 1446 - 23 ডিসেম্বর 2024
বাংলা

রোযা ভঙ্গ করা ও সালাত ক্বসর (সংক্ষিপ্ত) করা বৈধকারী সফরের সর্বনিম্ন সীমা কতটুকু?

প্রশ্ন

রোযা না-রাখাকে বৈধকারী সফরের সর্বনিম্ন সীমা কতটুকু?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

অধিকাংশ আলেম এই মত দিয়েছেন যে ৪৮ মাইল দূরত্বে সফর করলে সালাত সংক্ষিপ্ত করা ও রোযা ভঙ্গ করা বৈধ।

ইবনে ক্বুদামা ‘আল-মুগনী’ গ্রন্থে বলেছেন:

“আবু আব্দুল্লাহ (অর্থাৎ ইমাম আহমাদ) এর মত হল ১৬ ফারসাখ এর কম দূরত্বে ক্বসর (সালাত সংক্ষিপ্ত করা) জায়েযনয়। এক ফারসাখ হল তিন মাইল। সুতরাং ১৬ ফারসাখ দূরত্ব হল ৪৮ মাইল। ইবনে আব্বাস এই দূরত্ব নির্ধারণ করেছেন। তিনি বলেছেন: এই দূরত্ব উসফান থেকে মক্কা পর্যন্ত, তায়েফ থেকে মক্কা পর্যন্ত, জেদ্দা থেকে মক্কা পর্যন্ত।

এর উপর ভিত্তি করে বলা যায়, ক্বসর (সালাত সংক্ষিপ্ত করা) বৈধকারীদূরত্ব হল সেই গন্তব্যের উদ্দেশ্যেদুই দিনের ভ্রমণ। এটি হল ইবনেআব্বাস ও ইবনে উমর এর মত। এই মতটি গ্রহণ করেছেন ইমাম মালেক, আল-লাইস ও শাফেয়ী (রহঃ) প্রমুখ।’’সমাপ্ত

কিলোমিটারের হিসাবে এই দূরত্ব হবে প্রায় ৮০ কিলোমিটার।

শাইখ বিন বায মাজমূ উল-ফাতাওয়া’ গ্রন্থে (১২/২৬৭) এ সফরের দূরত্ব সম্পর্কে বলেন: “অধিকাংশ আলেম যে মতের উপর রয়েছেন তা হচ্ছে- যারা গাড়িতে, প্লেনে, জাহাজে, স্টিমারে ভ্রমণ করে তাদের ক্ষেত্রে এই দূরত্ব প্রায় ৮০ কিলোমিটার ধরে হিসাব করা।এই দূরত্ব বা তার কাছাকাছি দূরত্বে ভ্রমণকে (শরিয়তের দৃষ্টিতে) সফর বলা হবে এবং মুসলিমদের মাঝে প্রচলিত প্রথা অনুসারেও তা সফর হিসেবে বিবেচিত। অতএব কেউ যদি উটে করে অথবা পায়ে হেঁটে অথবা গাড়িতে অথবা প্লেনে অথবা সামুদ্রিক যানে করে এই দূরত্ব বা তার বেশি অতিক্রম করে তবে সে মুসাফির হিসেবে গণ্য হবে।” সমাপ্ত

গবেষণা ও ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটি কে প্রশ্ন করা হয় (৮/৯০):ক্বসর (সালাত সংক্ষিপ্ত করা) বৈধকারী দূরত্ব সম্পর্কে এবং ভাড়ায়চালিত গাড়িচালক৩০০ কিলোমিটারের বেশি পথ অতিক্রম করলে সে কি সালাত ক্বসর (সালাত সংক্ষিপ্ত) করবে?

তাঁরা উত্তরে বলেন:

“অধিকাংশ ‘আলেমের রায় অনুসারেক্বসর (সালাত সংক্ষিপ্ত করা) বৈধকারীদূরত্বের পরিমাণ হল প্রায় ৮০ কিলোমিটার। তাই ভাড়ায়চালিত গাড়িচালক অথবা অন্যদের জন্য এক্ষেত্রে সালাত সংক্ষিপ্ত করা জায়েয। যদি সে এ উত্তরের প্রথমে উল্লেখিত দূরত্ব বা তার চেয়ে বেশি পথ অতিক্রমের নিয়তে বের হয়।”সমাপ্ত

অন্যদিকে কিছু ‘আলেম এই মত ব্যক্ত করেন যে, সফরের কোন নির্দিষ্টদূরত্ব নির্ধারণ করা হয়নি। বরং এ ক্ষেত্রে প্রচলিত প্রথার উপরে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। প্রচলিত প্রথায় একজন মানুষ যতদূর গমন করলে সফর হিসেবে বিবেচনা করা হয় সেটাই সফর হিসেবে বিবেচিত হবে। যার উপর ভিত্তি করে একজন মুসাফিরের জন্য দুই সালাত একত্রীকরণ,ক্বসর (সালাত সংক্ষিপ্ত) করাও রোযা ভঙ্গ করা ইত্যাদি বিধিবিধান প্রযোজ্য হয়।

শাইখুল ইসলাম ‘আল-ফাতাওয়া’ গ্রন্থে (২৪/১০৬) বলেছেন:

“যারা যে কোন ধরনের সফরে ক্বসর (সালাত সংক্ষিপ্ত)করা ও রোযা ভঙ্গ করাকে শরিয়তসম্মত মত দিয়েছেন, বিশেষ কোন সফরের সাথে নির্দিষ্ট করেননি- দলীল তাঁদের পক্ষেই এবংএটাই সঠিক মত।”সমাপ্ত

‘আরকানুল ইসলাম বিষয়ক ফতোয়া’ গ্রন্থে (পৃঃ ৩৮১) শাইখ ইবনে ‘উছাইমীনকে প্রশ্ন করা হয়েছিল: মুসাফির ব্যক্তি কতটুকুদূরত্বের ক্ষেত্রে নামায ক্বসর (সংক্ষিপ্ত করা) করতে পারবে এবং ক্বসর না করে দুই নামায একত্রিত করা জায়েয কিনা। তিনি উত্তরে বলেন:

“নামায ক্বসর (সংক্ষিপ্ত) করার দূরত্বকে কিছু আলেম প্রায় ৮৩ কিলোমিটারে নির্দিষ্ট করেছেন। আবার কিছু আলেম প্রচলিত প্রথার উপর ছেড়ে দিয়েছেন। সফরের দূরত্ব ৮০ কিলোমিটার না হলেও মানুষ যদি এটাকে সফর গণ্য করে তাহলে সেটা সফর। আর মানুষ যেটাকে সফর হিসেবে গণ্য করে না সেটা ১০০ কিলোমিটার দূরত্বে হলেও সফর নয়।শেষের এই মতটি শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বেছে নিয়েছেন। কেননা আল্লাহ তা‘আলা নামায ক্বসর করা বৈধ হওয়ার জন্য কোন নির্দিষ্ট দূরত্ব নির্ধারণ করেননি। একইভাবে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)ও কোন নির্দিষ্ট দূরত্ব নির্ধারণ করেননি।আনাস ইবনে মালিক (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেছেন:

كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا خَرَجَ مَسِيرَةَ ثَلاثَةِ أَمْيَالٍ أَوْ ثَلاثَةِ فَرَاسِخَ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ. رواه مسلم (691)

“রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিন মাইল অথবা তিন ফারসাখ দূরত্বের পথে বের হলে সালাত দুই রাকাত আদায় করতেন(অর্থাৎ সালাত সংক্ষিপ্ত করতেন)।”[হাদিসটি মুসলিম বর্ণনা করেছেন (৬৯১)]

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহর এই বক্তব্যটি সঠিকতর।প্রচলিত প্রথায় দ্বিমত দেখা গেলে যদি কোন ব্যক্তি নির্দিষ্ট দূরত্বের মতটি (অর্থাৎ প্রথম মতটি) গ্রহণ করেন- এতে দোষের কিছু নেই।কারণ এটি অনেক ইমাম ও মুজতাহিদ ‘আলেমগণের বক্তব্য। তাই এতে কোন সমস্যা নেই ইনশাআল্লাহ্‌। আর যদি প্রচলিত প্রথায় স্পষ্ট দিক নির্দেশনা পাওয়া যায় তবে তা অনুসারে আমল করাই সঠিক।”সমাপ্ত।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব