সোমবার 24 জুমাদাল আউওয়াল 1446 - 25 নভেম্বর 2024
বাংলা

ইসলামের বিচারে কাদিয়ানী সম্প্রদায়

প্রশ্ন

আমি কাদিয়ানী নই। জেনে রাখুন, তারা বিশ্বাস করে যে, মুহাম্মদ আলাইহিস সালামের পরেও একজন নবী আছে। তারা কি ইসলামের বাইরে? আমি বিশ্বাস করি যে, তারা ইসলামের বাইরে এবং এ ভিত্তি থেকে আমি তাদের সাথে আচরণ করি।

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

পরিচিত:

কাদিয়ানী এমন একটি আন্দোলন যা ১৯০০ সালে ইংরেজ উপনিবেশবাদের পরিকল্পনায় ভারতীয় উপমহাদেশে গড়ে উঠেছে। উদ্দেশ্য হচ্ছে মুসলমানদেরকে তাদের ধর্ম থেকে দূরে রাখা; বিশেষত জিহাদের ফরয দায়িত্ব থেকে দূরে রাখা; যাতে করে তারা ইসলামের নামে উপনিবেশবাদকে মোকাবিলা করতে না পারে। এ আন্দোলনের মুখপত্র হচ্ছে- Religious নামক ম্যাগাজিন; যা ইংরেজী ভাষায় প্রকাশিত হত।

প্রতিষ্ঠা ও উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব:

১। গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী (১৮৩৯খ্রিঃ-১৯০৮খ্রিঃ) ছিল কাদিয়ানী আন্দোলনের অস্তিত্বের প্রধান গুটি। সে ১৮৩৯খ্রিঃ ভারতের পাঞ্জাবের কাদিয়ান গ্রামে জন্মগ্রহণ করে। সে এমন এক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছে যে পরিবার দেশ ও জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতার জন্য প্রসিদ্ধি লাভ করেছিল। এভাবেই গোলাম আহমাদ উপনিবেশের প্রতি কৃতজ্ঞ ও অনুগত থেকে বেড়ে উঠেছে। তাকে নবুয়ত দাবী করার জন্য মনোনীত করা হয়েছে; যাতে করে তাকে কেন্দ্র করে মুসলমানেরা একত্রিত হয় এবং ইংরেজ উপনিবেশের বিরুদ্ধে জিহাদ করা থেকে বিরত থাকে। ব্রিটেন সরকারের তাদের উপর অনেক দয়া-দাক্ষিণ্য ছিল। তাই তারা তাদের প্রতি মিত্রতা প্রকাশ করেছে। গোলাম আহমাদ তার অনুসারীদের কাছে মেজাজের বিকৃতি, অনেক রোগগ্রস্ত ও মাদকাসক্ত হিসেবে পরিচিত ছিল।

২। তার বিরুদ্ধে ও তার নোংরা দাবীর বিরুদ্ধে যারা অবস্থান গ্রহণ করেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন: ভারতের জমঈয়ত আহলে হাদিসের আমির শাইখ আবুল ওয়াফা সানা উল্লাহ্ অমৃতসরী। তিনি তার সাথে বাহাস (বিতর্ক) করেছেন, তার দলিল খণ্ডন করেছেন, তার শয়তানি উন্মুক্ত করে দিয়েছেন, তার মতবাদের কুফরি ও বক্রতা তুলে ধরেছেন। তারপরেও গোলাম আহমদ যখন সঠিক পথে ফিরে আসেনি তখন শাইখ আবুল ওয়াফা তার সাথে এই মর্মে মুবাহালা করেছেন যে, তাদের মধ্যে যে মিথ্যাবাদী সে যেন সত্যবাদীর জীবদ্দশায় মারা যায়। কিছুদিন যেতে না যেতেই মির্যা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী ১৯০৮ সালে ধ্বংস হয় এবং ৫০টি বই, প্রচারপত্র ও প্রবন্ধ রেখে যায়। তার লিখিত উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে: ইযালাতুল আওহাম, ইজাযে আহমাদি, বারাহীনে আহমাদিয়া, আনওয়ারুল ইসলাম, ইজাযুল মাসীহ, আত-তাবলীগ ও তাজাল্লিয়াত ইলাহিয়্যা।

৩। নূরুদ্দীন: কাদিয়ানী আন্দোলনের প্রথম খলিফা। ইংরেজরা খেলাফতের মুকুট তাকেই পরিয়েছে এবং মুরিদরা তাকে মেনে নিয়েছে। তার লিখিত গ্রন্থ হচ্ছে- ফাসলুল খিতাব।

৪। মোহাম্মদ আলী ও খাজা কামাল উদ্দিন: এ দুইজন কাদিয়ানীদের লাহোরের আমির। এ দুইজনই কাদিয়ানী মতবাদের প্রবক্তা। প্রথমজন আল-কুরআনুল কারীমের বিকৃত ইংরেজী অনুবাদ লিখেছে। তার লিখিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে: হাকীকাতুল ইখতিলাফ, আন-নবুয়্যাত ফিল ইসলাম, আদ্‌-দ্বীন আল-ইসলামী। আর খাজা কামাল উদ্দীনের লিখিত বই হচ্ছে- আল-মুছুল আল-আলা ফিল আম্বিয়া, এছাড়াও অন্যান্য কিছু বই।

লাহোরস্থ এ আহমাদিয়া জামাত মির্যা গোলাম আহমাদকে কেবল মুজাদ্দিদ (সংস্কারক) মনে করে। কিন্তু এ দুটো একই আন্দোলন হিসেবে বিবেচিত হয়। দ্বিতীয় দলটি কোন ক্ষেত্রে সংকটে পড়লে প্রথম দল তাকে সাহায্য করে এবং প্রথম দল পড়লে দ্বিতীয় দল তাকে সাহায্য করে।

৫। মোহাম্মাদ আলী: সে হল লাহোরস্থ কাদিয়ানী জামাতের আমির এবং কাদিয়ানী মতবাদের গুরু, উপনিবেশবাদের গুপ্তচর, কাদিয়ানী মতবাদ প্রচারকারী ম্যাগাজিনের কর্ণধার। সে কুরআনুল কারীমের বিকৃত ইংরেজী অনুবাদ করেছে। তার রচিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে: হাকিকাতুল ইখতিলাফ, আন-নুবুয়্যাত ফিল ইসলাম।

৬। মুহাম্মদ সাদেক: কাদিয়ানী মতবাদের মুফতি। তার রচিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে: খাতামুল নাবিয়্যিন।

৭। বশির আহমাদ বিন গোলাম: তার রচিত বই হচ্ছে- সিরাতে মাহদী, কালিমাতুল ফাসল।

৮। মাহমুদ আহমাদ বিন গোলাম ও তার দ্বিতীয় খলিফা: তার রচিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে- আনওয়ারুল খিলাফা, তুহফাতুল মুলুক ও হাকীকাতুন নুবুয়্যত।

৯। জাফরুল্লাহ্‌ খান কাদিয়ানীকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী নিয়োগ করায় এই ভ্রান্ত মতবাদ ব্যাপক পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছে। তিনি পাঞ্জাব প্রদেশে এ দলকে বড় এক খণ্ড জমি দেন যাতে করে তাদের আন্তর্জাতিক সেন্টার বানাতে পারে। কুরআনের আয়াত: وَآوَيْنَاهُمَا إِلَى رَبْوَةٍ ذَاتِ قَرَارٍ وَمَعِينٍ [সূরা মুমিনূন, ২৩:৫০] তারা এ স্থানের নাম দিয়েছে: রাবওয়া।

তাদের চিন্তাধারা ও বিশ্বাস:

১. গোলাম আহমাদ একজন মুসলিম দায়ী হিসেবে তার কর্ম তৎপরতা শুরু করেন। এক পর্যায়ে কিছু সমর্থক তার পাশে ভিড়ে। অতঃপর সে দাবী করে যে, সে মুজাদ্দিদ (সংস্কারক) ও আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে ওহিপ্রাপ্ত। এরপর আরও একধাপ এগিয়ে সে নিজেকে প্রত্যাশিত মাহদী ও প্রতিশ্রুত মসীহ দাবী করে। অতঃপর সে নবুয়ত দাবী করে। সে দাবী করে যে, তার নবুয়ত আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুয়তের চেয়ে উচুঁ পর্যায়ের।

২. কাদিয়ানীরা বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ্‌ রোযা রাখেন, নামায পড়েন, ঘুমান, ঘুম থেকে জাগেন, লেখেন, ভুল করেন, সহবাস করেন (তারা যা দাবী করে তা থেকে আল্লাহ্‌ বহু উর্ধ্বে)।

৩. তারা দাবী করে যে, তাদের উপাস্য ইংরেজ। যেহেতু তিনি তাকে ইংরেজী ভাষায় সম্বোধন করেন।

৪. কাদিয়ানীরা বিশ্বাস করে যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাধ্যমে নবুয়তের ধারা সমাপ্ত হয়নি; বরং জারী আছে। আল্লাহ্‌ জরুরতের ভিত্তিতে রাসূল পাঠিয়ে থাকেন। গোলাম আহমাদ হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ নবী।

৫. তারা বিশ্বাস করে যে, গোলাম আহমাদের উপর জিব্রাইল নাযিল হত ও তার কাছে ওহী (প্রত্যাদেশ) পাঠাত। তার কাছে প্রেরিত ওহিগুলো কুরআনের মত।

৬. তারা বলে: প্রতিশ্রুত মসীহ (গোলাম) যে কুরআন পেশ করেছেন সেটা ছাড়া আর কোন কুরআন নেই এবং তার শিক্ষার আলোকে যে হাদিস সেটা ছাড়া কোন হাদিস নেই এবং গোলাম আহমাদের কর্তৃত্ব ছাড়া কোন নবী নেই।

৭. তারা বিশ্বাস করে যে, তাদের কিতাব নাযিলকৃত। সে কিতাবের নাম হচ্ছে- আল-কিতাবুল মুবীন"। সেটি কুরআন নয়।

৮. তারা বিশ্বাস করে যে, তারা আলাদা নতুন এক ধর্ম ও নতুন এক শরিয়তের অনুসারী এবং গোলামের সঙ্গিগণ সাহাবীদের মত।

৯. তারা বিশ্বাস করে যে, কাদিয়ান হচ্ছে মদিনা মোনাওয়ারা ও মক্কা মুকাররমার মত। বরং এ দুটো শহরের চেয়ে উত্তম। কাদিয়ানের ভূমি হারাম (সম্মানিত ও সংরক্ষিত)। সেটা তাদের কিবলা ও হজ্জ পালনের স্থান।

১০. তারা জিহাদের আকিদা বাতিল করার আহ্বান জানায়। তারা ইংরেজ শাসনের অন্ধ আনুগত্য করার আহ্বান জানায়। কেননা তাদের ধারণায় কুরআনের দলিল অনুযায়ী ইংরেজরা উলুল আমর (নেতা)।

১১. তাদের মতে কাদিয়ানী ধর্ম গ্রহণ না করা পর্যন্ত প্রত্যেক মুসলিম কাফের। এমনকি যে ব্যক্তি কাদিয়ানী ছাড়া অন্যের কাছে বিয়ে দেয় বা বিয়ে করে সেও কাফের।

১২. তারা মদ, আফিম, মাদকদ্রব্য ও নেশাজাতীয় জিনিসকে বৈধ মনে করে।

চিন্তাধারা ও বিশ্বাসের গোড়াপত্তন:

১. স্যার সৈয়দ আহমাদের পাশ্চাত্যপন্থী আন্দোলন যে সব বিকৃত চিন্তাধারা প্রচার করেছে সেগুলো কাদিয়ানী ধর্ম আত্মপ্রকাশ করার মাঠ তৈরী করেছে।

২. ইংরেজরা এ প্রেক্ষাপেটকে কাজে লাগিয়ে কাদিয়ানী আন্দোলন তৈরী করেছে এবং এর জন্য তাদের অনুগত জায়গীর শ্রেণীর পরিবারের একজনকে নির্বাচন করেছে।

৩. ১৯৫৩ সালে পাকিন্তানের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাফরুল্লাহ খানকে অপসারণের দাবীতে এক জাতীয় আন্দোলন শুরু হয় এবং কাদিয়ানী সম্প্রদায়কে সংখ্যলঘু ও অমুসলিম হিসেবে ঘোষণা করার দাবী ওঠে। সে আন্দোলনে প্রায় দশহাজার মানুষ শহীদ হয় এবং তারা কাদিয়ানী মন্ত্রীকে অপসারণ করতে সক্ষম হয়।

৪. ১৩৯৪ হিজরীর রবিউল আউয়াল মাসে (১৯৭৪ সালের এপ্রিল) মক্কাস্থ রাবেতা আলমে ইসলামীর অধীনে বড় একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সে সেমিনারে বিশ্বের আন্তর্জাতিক ইসলামী সংস্থাগুলো অংশ গ্রহণ করে। উক্ত সেমিনারে এ সম্প্রদায়ের কাফের হওয়া ও ইসলাম থেকে বের হয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয় এবং মুসলমানদের প্রতি আহ্বান জানানো হয় এ মতবাদের বিপদকে প্রতিহত করার, কাদিয়ানীদের সাথে সহযোগিতা না করার এবং মুসলমানদের কবরস্থানে তাদেরকে দাফন না করার।

পাকিস্তান সেন্ট্রাল পার্লামেন্ট মির্যা নাসের আহমাদের সাথে বিতর্কের ব্যবস্থা করে। এতে শাইখ মুফতি মাহমুদ তার বিরুদ্ধে জবাব দেন। দীর্ঘ ৩০ ঘন্টা ধরে উক্ত বিতর্ক চলে। নাসের আহমাদ জবাব দিতে অক্ষম হয়। এর মাধ্যমে এ সম্প্রদায়ের কুফরের পর্দা উম্মোচিত হয়ে যায়। পার্লামেন্ট গেজেট প্রকাশ করে কাদিয়ানী সম্প্রদায়কে অমুসিলম সংখ্যালঘু ঘোষণা করে।

নিম্নোক্ত বিষয়গুলো মির্যা গোলাম আহমাদের কাফের হওয়াকে অনিবার্য করে:

১। তার নবুয়ত দাবী।

২। উপনিবেশবাদের সেবাস্বরূপ জিহাদের ফরযিয়তকে বিলুপ্ত করা।

৩। মক্কায় গিয়ে হজ্জ করাকে বাতিল করে সেটাকে কাদিয়ানের দিকে স্থানান্তর করা।

৪। আল্লাহ্‌কে মানুষের সাথে সাদৃশ্য দেয়া।

৫। পুনর্জন্ম ও হুলুল তত্ত্বে বিশ্বাস করা।

৬। আল্লাহ্‌র দিকে সন্তান সম্বোধিত করা এবং নিজেকে উপাস্যের সন্তান দাবী করা।

৭। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খতমে নবুয়ত বা শেষ নবী হওয়াকে অস্বীকার করা এবং প্রত্যেক দুষ্ট-শয়তানের জন্য নবুয়ত দাবীর পথ খুলে দেওয়া।

৮। কাদিয়ানীদের সাথে ইসরাইলে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। ইসরাইল তাদের জন্য বিভিন্ন সেন্টার ও মাদ্রাসা খুলে দিয়েছে। তাদের মুখপত্র হিসেবে পত্রিকা বের করা ও বিশ্বব্যাপী প্রচার করার জন্য বই ও প্রচারপত্র ছাপানোর সুযোগ করে দিয়েছে।

৯। তারা যে খ্রিস্টান ধর্ম, ইহুদী ধর্ম ও গোপন আন্দোলনগুলো দ্বারা প্রভাবিত সেটা তাদের বিশ্বাস ও চলাফেরা দেখলেই স্পষ্টভাবে ফুটে উঠে। যদিও বাহ্যত তারা ইসলাম দাবী করে।

তাদের প্রসার ও প্রভাব বিস্তারের স্থানসমূহ:

  • বর্তমানে অধিকাংশ কাদিয়ানী ভারত ও পাকিস্তানেই বাস করে। তাদের সামান্য কিছু সংখ্যা ইসরাইল ও আরব বিশ্বেও বাস করে। তারা সাম্রাজ্যবাদীদের সহযোগিতায় প্রত্যেক দেশের স্পর্শকাতর কেন্দ্রগুলো দখল করতে চায়; যাতে করে তারা সেখানে আস্তা গেঁড়ে অবস্থান করতে পারে।
  • আফ্রিকাতে ও পাশ্চাত্যের কিছু দেশে কাদিয়ানীদের বড় ধরণের কর্ম তৎপরতা রয়েছে। শুধু আফ্রিকাতেই তাদের পাঁচ হাজারেরও বেশি মুবাল্লিগ ও দাঈ আছে। যাদের কাজ হলো মানুষকে কাদিয়ানী ধর্মের দাওয়াত দেওয়া। তাদের ব্যাপক তৎপরতা নিশ্চিত করে যে, তারা সাম্রাজ্যবাদী শক্তির পৃষ্ঠপোষকতা পায়।
  • ইংরেজ সরকার এ মতবাদকে কোলে তুলে রাখে। এ মতবাদের অনুসারীদের জন্য আন্তর্জাতিক অফিসগুলোতে পদ পাওয়া, কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা ও কনস্যুলেট অফিসগুলোতে নিয়োগ পাওয়া সহজীকরণ করে। এবং এদের মধ্য থেকে তাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোতে বড় মাপের অফিসার নিয়োগ দেয়।
  • কাদিয়ানীরা বড় ধরণের মিডিয়া; বিশেষত সাংস্কৃতিক মিডিয়া ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের মতবাদের দিকে দাওয়াত দিতে খুবই তৎপর। যেহেতু তারা শিক্ষিত। তাদের মধ্যে অনেক বিজ্ঞানী, ইঞ্জিনিয়ার ও ডাক্তার রয়েছে। ব্রিটেনে 'ইসলামী টিভি' নামে একটি স্যাটেলাইট চ্যানেলই আছে যা কাদিয়ানীরা চালায়।

পূর্বোক্ত আলোচনা থেকে পরিষ্কার:

কাদিয়ানী একটি পথভ্রষ্ট আহ্বান। এর সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই। এ মতবাদের আকিদা ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক। মুসলিম আলেমগণ তাদের কাফের হওয়ার উপর ফতোয়া দেয়ার পর তাদের কর্মতৎপরতা সম্পর্কে মুসলমানদেরকে সাবধান করা বাঞ্ছনীয়। আরও বিস্তারিত জানতে পড়ুন: 'আল-কাদিয়ানিয়্যা', লেখক: ইহসান ইলাহি জহির।

সূত্র: ড. মানে আল-জুহানী-র 'আল-মাওসুআ আল-মুয়াস্‌সারা ফিল আদইয়ান ওয়াল মাযাহিব ওয়াল আহযাবল-মুআসিরা'।

ইসালামী ফিকাহ একাডেমির সিদ্ধান্তবলিতে এসেছে যে:

'কাদিয়ানী' সম্প্রদায় ও তাদের থেকে উৎপন্ন 'লাহোরিয়া' নামক সম্প্রদায় কি মুসলমানদের মধ্যে গণ্য হবে; নাকি মুসলমানদের মধ্যে গণ্য হবে না; এ ধরণের ইস্যুতে অমুসলিমদের রায় দেয়ার উপযুক্ততা কতটুকু-- এ সংক্রান্ত হুকুম জানতে চেয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনের ফিকাহ কাউন্সিলের পক্ষ থেকে পেশকৃত পত্রটি দেখার পর এবং ফিকাহ একাডেমীর সদস্যগণের এ বিষয়ে পেশকৃত গবেষণাবলীর আলোকে এবং বিগত শতাব্দীতে ভারতে আবির্ভুত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী; যার দিকে 'কাদিয়ানী' ও 'লাহোরিয়া' নামক ফেরকাদ্বয়কে সম্বন্ধিত করা হয় তার সম্পর্কে প্রাপ্ত দলিলপত্রের আলোকে এবং এ দুটো ফেরকা সম্পর্কে প্রাপ্ত তথ্যাবলির ওপর চিন্তাভাবনা করার পর এবং মির্যা গোলাম আহমাদ যে, নবুয়ত দাবী করেছে; সে দাবী করেছে যে সে প্রেরিত নবী, তার কাছে ওহী আসে, তার এ দাবী তার গ্রন্থাবলিতে সাব্যস্ত হয়েছে এবং সে দাবী করেছে যে, এর কোন কোন অংশ তার উপর নাযিলকৃত ওহী, সে জীবনভর এ দাওয়াত দিয়ে গেছে, তার কথা ও বইতে মানুষের কাছে তলব করেছে যেন তার নবুয়তে ও রিসালাতে বিশ্বাস করা হয়, অনুরূপভাবে তার থেকে ইসলামের জরুরীভাবে সাব্যস্ত অনেক বিধানের অস্বীকার সাব্যস্ত হয়েছে যেমন- জিহাদ-- সেটা নিশ্চিত হওয়ার পর ফিকাহ একাডেমি নিম্নোক্ত সিদ্ধান্ত দিচ্ছে:

এক: মির্যা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী নবী হওয়া, রাসূল হওয়া ও তার উপর ওহী নাযিল হওয়ার যে দাবী করেছে সেটা সুস্পষ্ট প্রত্যাখ্যাত। যেহেতু ইসলামে জরুরীভাবে অকাট্য নিশ্চিত জ্ঞানের ভিত্তিতে আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম সর্বশেষ নবী ও রাসূল হওয়া সাব্যস্ত। এবং যেহেতু তাঁর পরে আর কারো উপর ওহী নাযিল হয়নি। মির্যা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানীর পক্ষ থেকে এই দাবী তাকে ও তার দাবীর সাথে একমত পোষণকারী সকলকে ইসলাম ত্যাগকারী মুরতাদে পরিণত করবে। আর লাহোরী সম্প্রদায় মুরতাদ হওয়ার হুকুমের ক্ষেত্রে তারাও কাদিয়ানীদের মত; যদিও তারা গোলাম আহামদকে আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ছায়া ও ফ্রেম হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

দুই: কোন অমুসলিম কোর্টের কিংবা অমুসলিম বিচারকের কারো মুসলিম হওয়া কিংবা মুরতাদ হওয়া মর্মে রায় ইস্যু করার অধিকার নেই। বিশেষতঃ যে বিচারের মাধ্যমে গোটা মুসলিম উম্মাহ; তাদের একাডেমিসমূহ ও আলেমদেরসহ; যে ব্যাপারে একমত সেটার বিরোধিতা করা হয়। কারণ কারো মুসলিম হওয়া বা মুরতাদ হওয়ার রায় মুসলিম ব্যক্তি যিনি কোন কোন বিষয়ের মাধ্যমে ইসলামে প্রবেশ করা সাব্যস্ত হয় কিংবা কোন কোন বিষয়ের মাধ্যমে মুরতাদ হওয়া সাব্যস্ত হয় তা জানেন, ইসলামের হাকীকত ও কুফরের হাকীকত বুঝেন এবং কুরআন, হাদিস ও ইজমা দ্বারা যা সাব্যস্ত হয়েছে সে সম্পর্কে সম্যক অবহিত আছেন-- এমন ব্যক্তি থেকে ইস্যু হওয়া ব্যতীত গ্রহণযোগ্য হবে না। অতএব, এ ধরণের কোর্টের রায় বাতিল।

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

মাজমাউল ফিকহ আল-ইসলামী, পৃষ্ঠা-১৩

সূত্র: শাইখ মুহাম্মদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ